রাজধানী নয়াদিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও হায়দারাবাদের মতো ভারতের আরও ২১টি শহর তীব্র পানি সংকটে পড়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এসব শহরের ভূ-গর্ভস্থ পানি শেষ হয়ে যাবে। ফলে প্রায় দশ কোটি মানুষ এই মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হবে।
Advertisement
ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি বলছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ খাবার পানি পাবে না। দেশটির নীতি নির্ধারণী সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমিং ইন্ডিয়া (এনআইটিআই) বা নীতি আয়োগের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ধারণা করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুমের সময়কাল কমে যাবে। গত পাঁচ বছরে এই অঞ্চলে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আগের চেয়ে কমেছে। ২০১৫ সালে ৮৬ শতাংশ কম নিয়ে যা ছিল সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়।
চলতি মৌসুমেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে। উল্টো তীব্র দাবদাহের কারণে গোটা অঞ্চল বিশেষ করে ভারতজুড়ে মারাত্মক গরম পড়েছে। দেশটির অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বিহার পর্যন্ত বৃষ্টির বদলে যে তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে, তা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
Advertisement
আরও পড়ুন>> চেন্নাইয়ের সব পানি শেষ, একমাত্র ভরসা বৃষ্টি
তামিলনাডু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইতে বর্তমানে পানি নেই। ট্যাংকারে করে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানি নেই আবার উল্টো এখানকার তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। গত দশ দিনের মধ্যে ৯ দিনই তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। গত ১০ জুন ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ৪৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিয়ে জুন মাসে শহরটির গড় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডু প্রদেশের মানুষ এখন আর স্বাভাবিক উপায়ে পানি পাচ্ছে না। তারা ট্রাকে করে নিয়ে আসা পানির ট্যাংকের ওপর নির্ভর করেই চলছেন। এ ছাড়া গত বছর প্রদেশটিতে যে গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে তা আগের চেয়ে ৬২ শতাংশ কম।
তামিলনাডুর প্রাদেশিক ফিশারিজ মন্ত্রী ডি জয়াকুমার বলেছেন, ‘বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে যে স্বল্পতা দেখা দিয়েছে তা পূরণ করতে কাজ করছে সরকার। আগামী অক্টোবর-ডিসেম্বরে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বৃষ্টির আগ পর্যন্ত সরকার এই পানি সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম।’
Advertisement
আরও পড়ুন>> পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কুয়েতে
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘গোটা চেন্নাই শহরে ৪০০টি ট্যাংকারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৯ হাজার বার পানি সরবরাহ করছে এসব ট্যাংকার। যদি প্রকৃতি আমাদের সাহায্য না করে তাহলে আমরা মেতুরে অবস্থিত ভীরেনাম হ্রদ থেকে এক হাজার মিলিয়ন কিউবিক ফুট পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করবো।’
প্রসঙ্গত, ভারতের ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। আর তাদের চাষাবাদ করা জমিতে প্রয়োজনীয় পানির ৭৫ শতাংশের যোগান আসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে। তাই এই পানি স্বল্পতা চাষাবাদ এবং খাবার পানীয়’র যোগানে মারাত্মক বিপর্যয় তৈরি করবে দেশটিতে।
এসএ/এমকেএইচ