খেলাধুলা

অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ : রাজ্জাক

বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয়ের পর সব জায়গায়ই চলছে বাংলাদেশ বন্দনা। এবারের আসরে আইসিসির শুভেচ্ছাদূত টাইগার দলের এক সময়ের মাঠ কাঁপানো স্পিনার আবদুর রাজ্জাক। উত্তরসূরীদের এমন জয়ে প্রশংসা করতে ভুলেননি তিনিও।

Advertisement

আইসিসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের এই জয় নিয়ে বিস্তর এক কলাম লিখেছেন রাজ্জাক। যেখানে উঠে এসেছে ম্যাচ বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে অনেক কিছু। রাজ্জাকের সেই কলামটিই বাংলায় অনুবাদ করে দেয়া হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য-

এই মুহূর্তে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ইনফর্ম অলরাউন্ডার হচ্ছেন সাকিব আল হাসান।

আইসিসি পুরুষ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বোলিংয়ে তিনি খুব ভালো ছন্দে আছেন আর ব্যাটিংয়ে তো একদমই দুর্দান্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে তিনি আবারও সেঞ্চুরি করেছেন। এটি এই টুর্নামেন্টে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, সঙ্গে আবার দুটি হাফসেঞ্চুরিও আছে।

Advertisement

আইসিসি র্যাংকিংয়ে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার হওয়ার পাশাপাশি অসাধারণ ফর্মে আছেন তিনি। আসলে আমি কখনোই তাকে এভাবে খেলতে দেখিনি। যে ধারাবাহিকতা তিনি দেখাচ্ছেন, তা অবিশ্বাস্য। সাকিবের সঙ্গে আমি অনেক বছর ধরে খেলেছি। কিন্তু বর্তমানে তিনি তার ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুব ভালো একটা জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। কারণ তারা খুব ভালো একটা দল। এই বিশ্বকাপে খুবই ভালো ক্রিকেট খেলছে তারা। বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ যদি তারা হেরে যেত কিংবা বৃষ্টি হত। তাহলে সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য খুব একটা বড় সুযোগ থাকত না।

ইংল্যান্ডের মতো মাঠে দ্রুত শুরু করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বোলিং বা ব্যাটিং যেটাই হোক, শুরুটা ভালো করলে বেশির ভাগ দলই জয় পায়। এই বিশ্বকাপে এটাই আমরা দেখে আসছি।

ক্রিস গেইলকে দ্রুত আউট করে আমরা শুরুটা খুব ভালো করেছি এবং সেটা দরকারও ছিলো। যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২১ রান করল। কিছু মানুষ আমায় বলছিল যে, ‘বাংলাদেশ হেরে যাবে এই ম্যাচে।’ কিন্তু আমি তাদের বলেছিলাম, অপেক্ষা করুন দেখুন কি হয়।

Advertisement

টনটনের মাঠটা আমি ভালোভাবেই চিনি। আমি এখানে খেলেছিও এবং উইকেট খুব একটা সিমিং ছিল না, তাই তাদের একটা সুযোগ ছিল। এই উইকেটটা ব্যাটসম্যানদের জন্য এবং টনটনে ৩২০ রান তাড়া করাটা খুব একটা সহজ নয়, আবার খুব একটা কঠিনও নয়।

ব্যাট হাতেও বাংলাদেশ খুব ভালো শুরু করেছে। এবং পরে সাকিব ও লিটন দাস ১৮৯ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়েছে। টুর্নামেন্টের মাঝপথে দলে এসে এমন ইনিংস খেলা সত্যিই খুব কঠিন। তাই লিটন খুব চাপের ভেতরে ছিল। বড় টুর্নামেন্টের বড় ম্যাচে এবং এমন কন্ডিশনে যখন একজন নতুন খেলোয়াড় খেলতে আসে, ব্যাপারটা সত্যিই খুব কঠিন। ওই মুহূর্তে অনেক চাপ ছিল এবং সে তা খুব সুন্দর ভাবেই সামলেছে। লিটন দেখিয়েছে একজন খেলোয়াড় হিসেবে সে কি করতে পারে এবং এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে জন্য খুবই ভালো একটা দিক।

সাম্প্রতিক সময়ের রেকর্ড বিচার করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগে থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে তাদের বিপক্ষে খেলা শেষ ১০ টি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে ৮টিতেই জয়ে পেয়েছে টাইগাররা।

এর আগে আয়ারল্যান্ডে এবং ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আপনি যদি একটা দলকে বারবার হারানোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন, তাহলে সেটা আসলেই দলের আত্মবিশ্বাসকে খুব বেশি বাড়িয়ে তোলে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২২ রানের টার্গেট দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড়রা মনে করছিল, তারা এই ম্যাচ জিততে যাচ্ছে। কারণ তারা জানতো, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটা করতে পারবে।

স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের সেমিফাইনালের যাওয়ার সম্ভাবনাটা এখনো বেঁচে আছে। বাকি থাকা সব ম্যাচই এখন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটা ম্যাচ হারলেই সেমিফাইনালে যাওয়াটা কঠিন হয়ে যাবে তাদের জন্য।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো বৃহস্পতিবার ট্রেন্টব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই জয়ের আত্মবিশ্বাসটা তাদের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে।

বাংলাদেশ বিশ্বাস করবে যে তারা যে কোনো দলকে হারাতে পারে। কেননা বর্তমানে খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে তারা।

বাংলাদেশ ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছে এবং পরে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বড় টুর্নামেন্টে খুব ভালো করছে তারা। কিন্তু সত্যি বলতে আমি মনে করি ওই সময়ের থেকেও বর্তমানে খুব ভালো খেলছে তারা।

এএইচএস/এমএমআর/পিআর