দেশজুড়ে

জয়পুরহাট-মোকামতলা মহাসড়কের কাজ চলে ঢিমেতালে

জয়পুরহাট-মোকামতলা আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণের নামে পিচ ঢালাই তুলে ফেলা হয়। কিন্তু পাথর, খোয়া ও বালু ঢেলে কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ না করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের চার জেলার মানুষ।

Advertisement

জয়পুরহাট থেকে বগুড়া হয়ে ঢাকা যাওয়ার একমাত্র মহাসড়ক এটি। মহাসড়কটির জয়পুরহাট-মোকামতলা আঞ্চলিক অংশটুকু প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এই মহাসড়কের দুই পাশে ২৪ ফুট প্রশস্তকরণের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ১৯৪.৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

দরপত্রের মাধ্যমে তিনটি পৃথক প্যাকেজে দেড় বছরের মধ্যে কাজটি সম্পন্নের দায়িত্ব পায় নাভানা কনস্ট্রাকশন, র‌্যাব আরসি এবং প্যারাডাইস ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সড়কটির ১৫ কিলোমিটার অংশের কাজও শুরু হয়। ভালো সড়কের পুরাতন পিচ ঢালাই তুলে বালু, খোয়া ও পাথর দিয়ে ভরাট করা হয়।

কিন্তু গত ১৫ মাসে সড়কটির মাত্র ৫ কিলোমিটার অংশের কাজ সম্পন্ন হলেও বাকি ২৫ কিলোমিটার সড়কে নতুন করে বালু, খোয়া ও পাথর দেয়া হয়েছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় নতুন করে কাজ শুরু হলেও চলছে ধীর গতিতে। এ সড়কটির কাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতি ও আর্থিক সঙ্কটের কারণে কাজের মেয়াদ চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

Advertisement

প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৪ জেলার যানবাহন চলাচল করছে এ সড়ক দিয়ে। হিলি স্থলবন্দর থেকে প্রতিদিন শত শত অতিরিক্ত পাথর ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে। ফলে এ সড়কে যান চলাচলে মুশকির হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে এ সড়কে জায়গায় জায়গায় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলোতে একটু বৃষ্টি হলেই জমে যাচ্ছে হাঁটু পানি। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে যানবাহন চলাচলে আরও চরম ভোগান্তিতে পড়বে এ অঞ্চলের মানুষ।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩০ কিলোমিটার জয়পুরহাট-মোকামতলা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই ধারে ২৪ ফুট প্রশস্তকরণের জন্য গত ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল একনেক সভায় ১৯৪.৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। বরাদ্দের পরই ১০ কিলোমিটার করে ৩টি প্যাকেজে টেন্ডার হয় এ সড়কের কাজ, ৩টি প্যাকেজের কাজ শেষের সময় নির্ধারণ ছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত।

প্যাকেজ ৩টি মোকামতলা থেকে পুনট, পুনট থেকে মাটির ঘর এবং মাটির ঘর থেকে জয়পুরহাট শহর পর্যন্ত। পুনট থেকে মাটির ঘর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারের কাজ পায় রাজশাহীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব-আর সি লিমিটেড এবং মেসার্স প্যারাডাইস ট্রেডার্স। অপরদিকে মোকামতলা থেকে পুনট এবং মাটির ঘর থেকে জয়পুরহাট শহর পর্যন্ত এ দুই প্যাকেজের কাজ পায় নাভানা গ্রুপ। ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েই প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করে।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুনে সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, শুরু থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাগুলো এ সড়কের কাজ করেছেন ধীরগতিতে। এছাড়া আর্থিক সঙ্কটে কয়েক মাস ধরে পুরোদমে কাজ বন্ধ রেখেছিল এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। নাভানা গ্রæপ মোকামতলা থেকে পুনট পর্যন্ত ইট ও পাথর দিয়েছে, কিন্তু কার্পেটিং করেনি। র‌্যাব-আর সি লিমিটেড এবং মেসার্স প্যারাডাইস ট্রেডার্স পুনট থেকে মাটির ঘর পর্যন্ত সড়কের অর্ধেক কার্পেটিং করেছে। বাকি অর্ধেক কালাই পৌর শহর থেকে পুনট পর্যন্ত ইটের খোয়া ফেলেছে। তবে মাটির ঘর থেকে জয়পুরহাট শহর পর্যন্ত সড়কের কাজ গত মাসে আবার শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

Advertisement

ট্রাক চালক জোবায়ের হোসেন, দুরপাল্লার কোচ চালক শামিম হোসেন, মাইক্রো ড্রাইভার বেলাল হোসেন, মোটরসাইকেল চালক স্বপন চন্দ্র ও পথচারী হামিদুল ইসলাম জানান, গত দেড় বছর ধরে এ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করা ছাড়াও গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েক বার দুর্ঘটনাও ঘটেছে এ সড়কে। এরই মধ্যে বানিয়াপাড়া এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জনসহ প্রায় এই সড়কে অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছেন। বর্তমানে সড়কের যে অবস্থা, তাতে যে কোনো মুহূর্তে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বর্ষার আগ মুহূর্তে দ্রুত এ সড়কের কাজ সম্পন্নের দাবি জানান তারা।

জয়পুরহাট মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য একমাত্র সড়ক হিসেবে এ সড়কটি ব্যবহৃত হয়। দূরপাল্লার কোচ, আন্তঃজেলা বাস ও মিনিবাস এবং পণ্যবাহী ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে এ পথে। সংগঠনের পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ না হলে অচিরে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে।

র‌্যাব-আর সি লিমিটেড এবং মেসার্স প্যারাডাইস ট্রেডার্সের পক্ষে সড়কের কাজ দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত মাজেদুর রহমান বলেন, অর্থ সংকটের কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।

নাভানা কন্সট্রাকশনের সহকারী ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, সড়ক নির্মাণের ধীর গতির কথা স্বীকার করে নির্মানকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জানান, আগাম বৃষ্টিপাতসহ নানা অসুবিধার কারণে এ অসুবিধা হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা কাজ শেষ করতে পারবেন। এছাড়া মাটির যে কাজ তা ৯০ ভাগ শেষ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি ।

জয়পুরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভির সিদ্দিক বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মাঝখানে সফটওয়ার জটিলতার কারণে অর্থ ছাড়ে সমস্যা হয়েছিল, তা আমরা সমাধান করেছি। ঠিকাদার আবার কাজ শুরু করেছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও কাজের কোনো সমস্যা হবে না। কাজের মেয়াদ চার মাস বর্ধিত করা হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।

রাশেদুজ্জামান/এমএসএইচ/এমকেএইচ