খেলাধুলা

কার্ডিফে পৌছেই দূতাবাসের সংবর্ধনায় মাশরাফি-সাকিবরা

২০১৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদ আর জুভেন্টাসের মধ্যকার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল হয়েছিল কার্ডিফের মিলেনিয়াম স্টেডিয়ামে। এ ‘কার্ডিফ’ নামটি যেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকের কাছে খুবই প্রিয় একটি শহরের নাম। প্রতিটি বাঙালি ক্রিকেট অনুরাগির কাছে কার্ডিফের নাম স্বর্ণাক্ষরে গাঁথা।

Advertisement

কেন গাঁথা থাকবে না বলুন? টাইগারদের দু'দুুটি সোনালী সাফল্য যে এই শহরে। শুধু কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড আর আয়ারল্যান্ড নয়- বাংলাদেশ যে বড় শক্তিকেও হারাতে পারে, সে সত্যের দেখা মিলেছিল এই কার্ডিফে, ২০০৫ সালে।

আজ থেকে ১৪ বছর আগে মোহাম্মদ আশরাফুলের অসাধারণ ম্যাচ জেতানো শতকে সে সময়কার অপ্রতিরোধ্য অষ্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারতের পর প্রথম কোন বিদেশি দলকে হারানোর বড় কৃতিত্ব হয়েছিল অর্জিত।

ঠিক একযুগ পর ২০১৭ সালে আবার কার্ডিফে লাল সবুজ পতাকা উড়েছিল পৎপৎ করে। সেবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অসামান্য জোড়া শতকে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল মাশরাফির দল।

Advertisement

সেই থেকে কার্ডিফ মানেই টিম বাংলাদেশের ‘পয়মন্ত’ শহর। লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ভেন্যু ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম দুই ম্যাচ খেলার পর সেই সাফল্যের স্বর্গ কার্ডিফে এখন টিম বাংলাদেশ। এই শহরের সোফিয়া গার্ডেনে আগামী পরশু ৮ জুন শনিবার স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে টাইগাররা।

সে লক্ষ্যে আজ লন্ডন সময় বেলা ১২টায় কার্ডিফের পথে যাত্রা শুরু করে ঠিক স্থানীয় সময় পৌনে পাঁচটার (বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১০টা) দিকে এসে কার্ডিফের সিটি সেন্টার পার্ক প্লাজা হোটেলে চেক ইন করেছেন মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা।

এদিকে লন্ডন থেকে কার্ডিফে পা রেখেই দূতাবাসে সংবর্ধনা। কার্ডিফ সময় সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় দলকে অভ্যর্থনা জানাবে ওয়েলসে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশন।

Advertisement

সাধারণতঃ জাতীয় দল দেশের বাইরে কোন সিরিজ খেলতে বিদেশ সফরে গেলে, টুর্নামেন্ট বা কোন আসরে অংশ নিতে গেলে সেই দেশের দূতাবাস বা হাই কমিশন প্রায়ই সংর্ধনার আয়োজন করে। কখনো নৈশভোজ বা মধ্যাহ্নভোজেও আপ্যায়িত করা হয়।

আজ যেমন করেছে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশন। এ যেন রাজ্য জয়ের পর সংবর্ধনা! ভাবছেন নিউজিল্যান্ডের সাথে তো দল জেতেনি। তাহলে রাজ্য জয় হলো কী করে? এক দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েই রাজ্য জয়! একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? কেউ কেউ অমন ভাবতেই পারেন। তবে চরম সত্য হলো, এখন পর্যন্ত টাইগাররা বিশ্বকাপে যে ক্রিকেট টা খেলেছে, সেটা রাজ্যজয়ী বীরদের চেয়ে কম কি?

ঐতিহ্যবাহী কেনিংটন ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার মত অন্যতম ফেবারিট ও শক্তিশালি দলের বিপক্ষে ৩৩০ রানের হিমালয় সমান স্কোর গড়ে ২১ রানের জয় যে অনেক বড় কৃতিত্ব। যে জয়ের বন্দনায় সারা ক্রিকেট বিশ্ব।

তারপর দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪৪ রানের মাঝারী পুঁজি নিয়েও কি দারুণ লড়াইটাই না করলো মাশরাফি বাহিনী? কিছু হারে গ্লানি থাকে না। সেটা জয়ের মতই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আড়াইশর নিচে পুঁজি নিয়েও টাইগাররা বীরের মত লড়াই করে জয়ের সম্ভাবনা তৈরী করে প্রকারন্তরে নিজেদের বীরের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।

সে কারণেই রাজ্যজয়ী বীর বলা। এদিকে আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) ওয়েলসের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে জাতীয় দলকে সংবর্ধিত করেছে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশন।

কিন্তু লন্ডনে না করে এ সংবর্ধনা কার্ডিফে কেন? এ বিষয়ে বিসিবি মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামের জবাব, 'আসলে লন্ডনে অনেক ব্যস্ত শিডিউল ছিল। তাই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কার্ডিফে স্থানান্তর করা হয়েছে।'

সাফল্য ধরা না দিলেও এবারের বিশ্বকাপের মাঠে নামার আগে গা গরমের ম্যাচ খেলতে কার্ডিফ এসেছিল টাইগাররা। গত ২৬ ও ২৮ মে এই কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে পাকিস্তান ও ভারতের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল। পাকিস্তানের সাথে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে গেলেও ভারতের সাথে খেলাটি ঠিকই হয়েছে। সে ম্যাচে অবশ্য হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।

সবার জানা ওয়েলস যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের মানুষ ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফকে নিজেদের প্রিয় জাতীয় দলের সাফল্যের শহর হিসেবে চিনলেও কার্ডিফের আরও অন্য পরিচয়ও আছে।

কার্ডিফের মিলেনিয়াম স্টেডিয়াম

কার্ডিফের ‘মিলেনিয়াম স্টেডিয়াম’ এ অঞ্চলের অন্যতম প্রসিদ্ধ ও নামী ফুটবল ভেন্যু। এই স্টেডিয়ামে ২০১৭ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ আর জুভেন্টাস। রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছিল শিরোপা। এই ওয়েলসের অনেক বড় ফুটবলার গ্যারেথ বেল । টটেনহ্যাম থেকে ১০০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি'তে রিয়্যাল মাদ্রিদে যোগ দিয়ে বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন গ্যারেথ বেল।

বিশাল শহর লন্ডনে পা দিয়ে ওভাল আর লর্ডসের আশপাশ ছাড়া বিশ্বকাপের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। যুক্তরাজ্যের আট দশটি বড় শহরের মত লন্ডনেও বিশ্বকাপের ম্যাচ হচ্ছে, লন্ডন ঘুরেও সেভাবে তা টের পাওয়া যায়নি। বিশ্বকাপ উপলক্ষে কোন তোড়ণ, ব্যানার ফেষ্টুন কিছুই চোখে পড়ে না লন্ডনে।

তবে কার্ডিফে পা দিয়েই বোঝা গেল এ শহরে বিশ্বকাপ হচ্ছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র ‘সিটি সেন্টারের’ প্রধান সড়কের দু'ধারে বিশ্বকাপের সুরম্য ব্যানার লাগানো। পুরো সিটি সেন্টারের রাস্তা জুড়ে লাল, নীল, সবুজ ব্যানার।

এদিকে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচের আগে আগামীকাল (শুক্রবার) স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়) অনুশীলন করবে বাংলাদেশ। সোফিয়া গার্ডেনেই হবে অনুশীলন। তার ১৫ মিনিট আগে হবে টাইগারদের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন।

এআরবি/এসএএস