দেশজুড়ে

ধানের মণ ৪০০ টাকা, বিক্রি করতে না পেরে বাড়ি ফিরলেন কৃষক

গোপালগঞ্জে বোরো মৌসুমে মোট উৎপাদিত ধানের ১ ভাগ ধানও সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনছে না সরকার। ফলে ধান চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। উৎপাদন খরচের টাকা তোলা নিয়ে সংশয় কাটছে না তাদের। সরকার কৃষক পর্যায়ে ধান ক্রয় বৃদ্ধি না করলে আগামীতে ধান চাষ থেকে বিরত থাকবেন অনেক কৃষক।

Advertisement

ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করলে উৎপাদন খরচই তোলা যায় না বলে জানিয়েছেন চাষিরা। অপরদিকে জেলা থেকে যে পরিমাণ ধান সরকার ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে ৯৯ ভাগ কৃষকই সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করতে পারবে না। নিরুপায় হয়ে তাদের যেতে হবে ফড়িয়াদের কাছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর গোপালগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় ৭৭ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৫১ হাজার ৭৮ টন। এ পর্যন্ত ৫ ভাগ ধান এখনো কাটা বাকি রয়েছে। তার আগেই ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলা থেকে এ বছর সরকারিভাবে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে ২ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন। একজন কৃষক সর্বোচ্চ ২ টন ধান বিক্রি করতে পারবেন।

Advertisement

এদিকে, আনুষ্ঠানিকভাবে ধান ক্রয় শুরুর পর থেকে উপজেলা খাদ্যগুদামগুলোতে কৃষকদের হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে। কেউ কেউ ধান বিক্রি করতে পারলেও বেশিরভাগ কৃষকই ফিরছেন হতাশ হয়ে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নিজড়া গ্রামের ধান চাষি বকুল শেখ বলেন, এ বছর আমার জমিতে ১৪০০ মণেরও বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারছি মাত্র ৫০ মণ। এ ধান বিক্রির টাকা দিয়ে আমি ধান কাটা শ্রমিকদের টাকাই পরিশোধ করতে পারব না।

আড়পাড়া গ্রামের কৃষক মো. রাসেল ফকির বলেন, প্রতি মণ ধান উৎপাদনে আমাদের খরচ হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। সেই ধান স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দামে আরও বেশি করে ধান না কিনলে আমাদের ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে।

বোড়াশি গ্রামের কৃষক সুব্রত কাঞ্জিলাল বলেন, দিন দিন ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। তার ওপর আবার ধান কাটা শ্রমিক সংকট। সব মিলিয়ে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। তবে প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে ২ টনের পরিবর্তে উৎপাদনের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ধান কিনলেই আমরা পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব।

Advertisement

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান খান বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ধান ক্রয়ের উদ্বোধনে এসে আমি অনেক কৃষকের অভিযোগ শুনেছি। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ধান ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামীতে যাতে সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের কাছ থেকে আরও বেশি ধান কেনে সেজন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দফতরে সুপারিশ করা হবে।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক হরলাল মধু বলেন, জেলার ৫ ভাগ ধান এখনো কাটতে বাকি রয়েছে। এখনই লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি উৎপাদন হয়েছে। সঠিক দামে ধান বিক্রি করতে পারলে আগামী বছর এ জেলায় ধান উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।

গোপালগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সেফাউর রহমান বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তে উৎপাদনের ভিত্তিতে এবার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে ৬১৭, টুঙ্গিপাড়া থেকে ২৮১, কোটালীপাড়া থেকে ৮২৪, কাশিয়ানী থেকে ৩৭৯ ও মুকসুদপুর থেকে ৪৪৩ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে।

এস এম হুমায়ূন কবীর/এএম/পিআর