খেলাধুলা

‘ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই’

দলের অধিনায়ক, অভিজ্ঞতম ক্রিকেটারও বটে। শুধু অধিনায়ক হিসেবেই নয়, বোলার হিসেবেও অনুজ সতীর্থদের সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করেই খেলে যাচ্ছেন ওয়ানডে ক্রিকেটে। বাকি দুই ফরম্যাট না খেলার ফলে তার সব মনোযোগ এখন একদিনের ক্রিকেটেই নিবদ্ধ। যেখানে তার আগামী মিশন বিশ্বকাপ ক্রিকেট।

Advertisement

ঘোষণা দিয়েছেন এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। তাই সতীর্থরাও অঙ্গীকারবদ্ধ, প্রিয় বড় ভাইয়ের শেষ বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু উপহার দিতে। তবে বলা হচ্ছে যার কথা, সেই মাশরাফি বিন মর্তুজার অবশ্য চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। মনের আনন্দে খেলছেন ক্রিকেট, সেই আনন্দ নিয়েই শেষ করতে চান সামনের দিনগুলো।

‘আমার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই আসলে। ভালো হলে সবাই খুশি হবে, আমার নিজেরও ভালো লাগবে। তবে বাড়তি চাপ আমি কখনো নিতে চাই না। যেটা নিয়ে চিন্তা করা যে শেষ বিশ্বকাপ খেলছি এখানে ভালো কিছু করে আসা, এমনটা ভাবতে চাই না আমি। আমি সবসময় ভাগ্যে বিশ্বাসী। পুরো দলের ভাগ্যে যেটা আছে সেটাই হবে।’ -বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে এ কথাগুলোই বলছিলেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি।

তবে স্রেফ ভাগ্য বিশ্বাস করেই যে বসে থাকবে তার দল- এমনটাও নয়। নিজেরা পরিশ্রম করলে এবং সে সঙ্গে ভাগ্য সহায়তা করলে সফলতা ধরা দিতে পারে বলেই মনে করেন মাশরাফি।

Advertisement

‘শুধু ভাগ্যের ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। মেহনত করতে হবে, কষ্ট করতে হবে। আমরা সেটা করার জন্য প্রস্তুত কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সেরা দলগুলোও অনেক সময় বিশ্বকাপ জেতেনি, আবার অনেক সময় সেমিফাইনালেও উঠেনি। আমাদের ওপর এরকম কোনো চাপ নেই যে, আমাদেরকে বিশ্বকাপ জিতে আসতে হবে কিংবা সেমিফাইনালে খেলতে হবে। আমরা ভালো খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।’

‘পুরো বিশ্বের যারা সাবেক ক্রিকেটার ছিল বা যারা বিশ্লেষণ করে তাদেরকে যদি আপনি প্রশ্ন করেন যে আমরা কখনোই ফেবারিট না। আমরা যদি এখানে কিছু করতে পারি তাহলে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের নিয়ে পরিবর্তন হবে আরও বেশি যেটা আাগের থেকে অনেক হয়েছে। আমরা সেটা যদি করতে পারি ভালো। এটা অনেক ভালো একটা সুযোগ আমাদের জন্য। সেই জায়গা থেকে অবশ্যই চাইবো ভালো করি।’- চাপমুক্ত থেকেই ভালো খেলার মিশনে নামার লক্ষ্য জানিয়ে কথাগুলো বলেন নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া মাশরাফি।

পুরো দেশের সবাই ধরে রেখেছে এবারের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলবেই বাংলাদেশ। এমন বলার সাহসটা অবশ্য দিয়েছেন মাশরাফি-সাকিবরাই। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল কিংবা ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে রানারআপ হওয়াটা প্রমাণ করে যে ধাপে ধাপে এগুচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। তাই এবারের বিশ্বকাপে সবার প্রত্যাশার পাশাপাশি দাবিও একটাই- সেরা চারে চাই বাংলাদেশকে।

‘এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমাদের সেমিফাইনাল যাওয়া খুব বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে যেটা বলতাম যে, সেমিফাইনাল গেলে এটা স্রেফ একটা ম্যাচ, এখনো তাই বলতে হচ্ছে। সেমিফাইনালে যদি যেতে পারি, অনেক বড় অর্জন হবে। কারণ এবারের ফরম্যাট সেই ৯২’র মত, যেটা খুবই কঠিন। সেমিফাইনালে যাওয়া অনেক বড় অর্জন। আমরা আগে সেমিফাইনাল, কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়ে হেরেছি। আগে সেমিফাইনালটা যদি যাই, তাহলে বড় অর্জন হবে। তারপর ঐ পার্টিকুলার দিনে ভালো খেলা গুরুত্বপূর্ণ’- দল কেমন করবে বিশ্বকাপে, তা জানাতে গিয়ে এভাবেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধিনায়ক।

Advertisement

যেমনটা বললেন মাশরাফি, এবারের বিশ্বকাপ হবে ১৯৯২ সালের ফরম্যাট অনুসারে। যেখানে অংশগ্রহণকারী দলগুলো সবাই একে অপরের বিপক্ষে খেলবে লিগ পর্বে। যে কারণে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা যেমন জরুরি, তেমনি কোনো ম্যাচে হোঁচট খেলেও সব শেষ ভেবে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। মানসিকভাবে শক্ত থেকে পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ানোর কথাই জানালেন টাইগার অধিনায়ক।

‘সব দলেরই ভাল খারাপ দিন যাবে; কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন পরের দিনেই আবার ফিরে আসা যায়। কারণ যেটা চলে যাবে সেটা তো আর ফিরে আনা সম্ভব হবে না। তাই যেটা বাকি আছে সেটাকেই গুরুত্ব দিতে হবে। বেশিরভাগ ম্যাচই ভাল খেলতে গেলে আর জিততে গেলে ওই মানসিকতায় থাকতে হবে। আমার বিশ্বাস যে আমাদের সবারই তা আছে। এটা নিয়ে আমরা আলোচনাও করেছি। সেমিফাইনালে যেতে হলে নয়টা ভালো ম্যাচ খেলতে হবে। এই ম্যাচগুলো সব সমান যাবে না। কাজেই ক্যামব্যাকের প্রস্তুতি নিয়েই আমরা কথা বলছি। এটা আসলে মানসিক ব্যাপার। আর বিশ্বকাপ জেতার কথা যেটা বললে, অবশ্যই আছে আবার কিছু নেতিবাচক ব্যাপারও আছে। হয়তোবা শেষ এশিয়া কাপ জিতলে এই ধরণের টুর্নামেন্ট কিভাবে জিততে হয় এটার অভ্যাস হতো। কারণ এটার অভ্যাস থাকা খুব জরুরি। এর আগে সেমিফাইনাল হয়েছে বা কোয়ার্টার ফাইনাল আছে। ফাইনালও আছে। এশিয়া কাপে উঠে জিততে পারিনি তিনবার। যে মানসিক চাপ থাকে তখন হয়ত একটা-দুইটা উইকেট ধসে পড়েছে ওই চাপটা ধরতে পারব। বড় টুর্নামেন্ট জিতলে পরে এই চাপে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হয়। আমাদের কাজটা খুব কঠিন কিন্তু অসম্ভব বলব না।’

শেষের আগে বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে দুইটি বিশেষ কাজের প্রতি বাড়তি গুরুত্বারোপ করেন টাইগার অধিনায়ক, ‘আমার কাছে দুইটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। একটা হলো, শুরুর দিকে উইকেট না দেয়া, যদি আমরা আগে ব্যাটিং করি। দুইটা উইকেট যদি পড়ে যায়, আমরা চাপে পড়ে যাবো। দুই নম্বর বিষয় হলো, আগে বোলিং করলে দ্রুত উইকেট নেয়া। আমার মনে হয় ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে এই দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হবে। আর একটা বিষয় হলো ৪০ ওভারের পর বোলিং ও ব্যাটিং- দুইটা জায়গা ঠিক রাখতে হবে। ইনিংসের মাঝের সময়টা আমরা ভালো করছি। আমরা যদি এই দুইটা বিষয় ঠিক রাখতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা অনেকগুলো ম্যাচ জিততে পারবো।’

এসএএস/আইএইচএস/জেআইএম