নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নামলেও ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। ইলিশ শিকারে জাল, নৌকা ও ট্রলারসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে নেমে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে জেলেদের।
Advertisement
জাটকা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ইলিশের অভয়াশ্রমে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অভয়াশ্রমে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শেষে পুনরায় ইলিশ ধরা শুরু হয়।
একই সময়ের জন্য অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাছ কেনা-বেচা, মজুত ও পরিবহনেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা পর প্রথম দিনই বরিশাল নগরীর পোর্টরোড মোকামে ইলিশের আমদানি হয়েছে অনেক কম। বিগত বছর এই দিনে পোর্টরোড মোকামে ইলিশের আমদানি ছিল ১৫০ থেকে ২০০ মণ। এ বছর অর্থ্যাৎ আজ বুধবার সেখানে আমদানি হয়েছে ১০ থেকে ১২ মণ।
আমদানি কম হওয়ার কারণ হিসেবে আড়ৎদাররা জানান, এবারের অভিযানে অনেক কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর বাইরের নদ-নদীগুলোতে ইলিশ শিকারে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে জেলেদের। এ কারণে ৩০ এপ্রিল মধ্য রাত পর্যন্ত বেশিরভাগ জেলেই মাছ শিকার করেনি। ৩০ এপ্রিল মধ্য রাতের পর জেলেরা নদীতে জাল ফেলার সুযোগ পেলেও নদীতে সেভাবে ইলিশ পাননি। কারণ নদীতে ইলিশ নেই। ফলে বরিশালের বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম।
Advertisement
এদিকে, ইলিশের সরবরাহ কম হওয়ার কারণে পোর্টরোড মোকামের বেশিরভাগ আড়ৎদার ও মৎস্য শ্রমিককে অলস সময় পার করতে দেখা যায়।
শ্রমিকরা জানান, যত বেশি ইলিশ আমদানি হবে তত বেশি তাদের কাজ বেড়ে যাবে। আজ আমদানি নেই বললেই চলে। আমদানি হয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১২ মণ। এ কারণে বেশিরভাগ শ্রমিককেই বসে থাকতে হয়েছে।
নগরীর পোর্টরোড মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিৎ কুমার দাস মনু জাগো নিউজকে বলেন, বিকেল পর্যন্ত মাত্র ১০ থেকে ১২ মণ ইলিশের আমদানি হয়েছে বরিশাল নগরীর পোর্টরোড মোকামে। এসব ইলিশ এসেছে বরিশাল ও আশপাশের নদ-নদী থেকে। এবারের অভিযান অনেক কড়াকড়ি ছিল। তেমনি ছিল জেলেদের হয়রানি। অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর বাইরের নদ-নদীগুলোতে ইলিশ শিকারে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে জেলেদের। মাছ শিকার করে ট্রলারযোগে নিয়ে আসার সময় বেশিরভাগ জেলেদের মাছ জব্দ করা হতো। ৩০ এপ্রিল মধ্য রাত পর্যন্ত অনেক জেলেই মাছ শিকারে বের হননি। ফলে বরিশালের বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম। মূলত ইলিশের মৌসুম শুরু হবে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। ওই সময়ে ইলিশ বেশি ধরা পড়ে। মৌসুম না হওয়ার কারণে এখন নদীতে ইলিশ কম।
ইলিশের দামের বিষয়ে অজিৎ কুমার দাস মনু বলেন, এক কেজি সাইজের প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬০ হাজার টাকায়। সে হিসাবে কেজি পড়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এলসি সাইজের (৭০০-৮০০ গ্রাম) ইলিশ প্রতি মণ ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে কেজি পড়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। এই সাইেজের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা। আর ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম সাইজের প্রতি মণ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে কেজি পড়েছে ৫০০ টাকা। এখন কেবল নদীর মাছ আসছে। চার-পাঁচদিন পরেই সাগরের মাছ আসবে। তখন দাম আরও কমবে বলেও জানান অজিৎ কুমার দাস মনু।
Advertisement
বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা সফল হওয়ায় খুব শিগরিই এর প্রতিফলন বাজারে দেখা যাবে। অভয়াশ্রমে দুই মাস ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার ফলে সব ধরনের মাছের সরবরাহ বাড়বে।
সাইফ আমীন/এএম/এমকেএইচ