শিক্ষা

১০ শতাংশ ‘চাঁদা আদায়ে’ শিক্ষকদের ক্ষোভ

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতন) সুবিধা থেকে ১০ শতাংশ হারে অর্থ কেটে নেয়ার স্থগিত সিদ্ধাস্ত প্রায় ২ বছর পর পুনরায় কার্যকর করা হয়েছে। গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করে। এর ফলে চলতি মাস থেকে বেতনের মোট ১০ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হবে। এই অর্থ চলে যাবে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড এবং কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিলে।

Advertisement

এই দুই সংস্থা অবসরে যাওয়া এ ধরনের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধা দিয়ে থাকে। এই সিদ্ধান্তে শিক্ষকদের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসন্তোষ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

জানা গেছে, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিও থেকে মাসে অবসর বোর্ডের চাঁদা হিসেবে ৪ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্টের চাঁদা বাবদ ২ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা বেড়ে অবসর বোর্ডের জন্য ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ৪ শতাংশ কেটে নেয়া হবে। বর্তমানে ২ শতাংশ হারে কল্যাণ তহবিলের জন্য মাসে ১৭ কোটির বেশি টাকা চাঁদা আদায় হয়। ৪ শতাংশ হারে এই অঙ্ক দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ কোটি।

অপরদিকে, অবসরখাতে প্রতিমাসে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা চাঁদা কেটে রাখা হয়। ৬ শতাংশ হারে এটা দাঁড়াবে প্রায় ৫২ কোটি। সেই হিসাবে দুই খাতে মাসে ৮৭ কোটি টাকা আদায় হবে। বছরে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৫২২ কোটি টাকা।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু জাগো নিউজকে বলেন, চলতি মাসের এমপিও অর্থ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের প্রতিমাসে ৫ শতাংশ বাড়তি বেতন দিয়ে ৪ শতাংশ কেটে রাখা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় অবসর ও কল্যাণ খাতে বাড়তি অর্থ দেয়ার ব্যাপারে শিক্ষকদের সম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা বোর্ড এবং কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা হয়েছে। ওইসব আবেদন নিষ্পত্তির জন্য সরকার বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেকেই সুবিধা বিলম্বে পাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত নিষ্পত্তি এবং অর্থ বিভাগের শর্ত অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিও থেকে বাড়তি হারে চাঁদা নেয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৭ সালের ১৫ জুন একইভাবে বর্ধিত হারে চাঁদা কেটে রাখার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করেছিল। ওই সিদ্ধান্তে প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন শিক্ষক ও কর্মচারী সংগঠন সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পালন করে। তাদের যুক্তি ছিল, একজন শিক্ষক যদি ২২০০ টাকা স্কেলে চাকরি শুরু করেন এবং ৩০ বছর চাকরি করেন তাহলে তার কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট বাবদ ৩০ বছরে কর্তন হবে ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। অথচ সেই শিক্ষক যদি তার চাকরির শুরুতে ২২০০ টাকার একটি ১০ বছর মেয়াদি ডিপিএস হিসাব খুলতেন তাহলে তিনি জমা দিতেন ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। মেয়াদ শেষে যা বেড়ে হতো ৫ লাখ টাকা। এই ৫ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করলে পরবর্তী ৭ বছরে ১০ লাখ, ১৪ বছরে ২০ লাখ, ২১ বছরে ৪০ লাখ টাকা হতো।

অপরদিকে, একজন শিক্ষক ২৫ বছর চাকরি করলে সর্বশেষ স্কেলের ১০০ মাসের (অবসরে ৭৫ ও কল্যাণে ২৫) বেতনের সমপরিমাণ অর্থ অবসর সুবিধা ও কল্যাণ তহবিল বাবদ পাবেন। তাহলে একজন শিক্ষক ১০ শতাংশ হারে ৩০ বছরে ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে অবসর নেয়ার পরে ২-৩ বছর অপেক্ষা করে পাবেন ২২ লাখ টাকা (কারণ, বেসরকারি শিক্ষকদের কোনো ইনক্রিমেন্ট, টাইমস্কেল ও পদোন্নতি না থাকায় আজীবন একই স্কেলে চাকরি করতে হবে)। তাহলে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টে চাঁদা দিয়ে লাভ কী? এমন নানা যুক্তি আর ক্ষোভের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থ কেটে নেয়া স্থগিত করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ওই নির্দেশনা স্থগিত করা হয়।

Advertisement

এমএইচএম/এসআর/এমএস