ফিচার

সংসার বিবাগী এক শিক্ষকের গল্প

মাহফুজুর রহমান সাগর পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি প্রচারবিমুখ, স্বপ্নবিলাসী, মানবপ্রেমিক ও নিরহঙ্কারী একজন মানুষ। এককথায় সাদা মনের মানুষ। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। লেখাপড়ার হাতেখড়ি সেখানেই। পড়াশোনা শেষে রয়ে গেছেন মানুষের কল্যাণে।

Advertisement

চার ভাই চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে স্বচ্ছলভাবে বসবাস করলেও মাহফুজুর রহমান সাগরকে আকড়ে ধরে গ্রামীণ অবহেলিত জনপদ। ভাইদের সাথে বৃদ্ধ বাবা-মার কাছে থাকেন দুই সন্তানসহ স্ত্রী। অসহায় মানুষের জন্য সবসময় হাহাকার করে ওঠে তার মন। শহুরে চাকচিক্যে গা ভাসিয়ে না দিয়ে ২০০৩ সালে কম বেতনে দাগনভূঞা একাডেমিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরিবারের সদস্যদের বারণ সত্ত্বেও পড়ে রয়েছেন নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে।

মাহফুজুর রহমান সাগরের জন্ম ১৯৭৭ সালে। বাবা সুলতান মহামুদ ও মা মমতাজ বেগমের ৫ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে সাগর তৃতীয়। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামের প্রবর্তন বিদ্যাপিঠ থেকে এসএসসি, ওমর গণি এমইএস কলেজ থেকে ১৯৯৭ সালে এইচএসসি ও ২০০১ সালে স্নাতক পাস করেন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাস করেন।

> আরও পড়ুন- বেকারিতেই শেষ বেকারত্ব

Advertisement

গ্রামের কাউকে বই দিয়ে, কারো পরীক্ষার ফি দিয়ে কিংবা শীতের সময় শীতবস্ত্র কিনে বেতনের প্রায় সবটুকু টাকা দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, নিজ অর্থায়নে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। নিজেদের চারপাশ পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতে প্রায়ই বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় ছুটে যাচ্ছেন মানবতার এ ফেরিওয়ালা। উপজেলার সব ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন তিনি।

২০১৫ সালে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘নব-দিগন্ত’ নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠনের কার্যক্রমও চলে নিজ খরচে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা ও বই উপহার প্রদান করেছেন। পরিচ্ছন্ন বাজার তৈরির জন্য দোকানে দোকানে ঝুড়ি বিতরণ করেছেন। ব্লাড গ্রুপ নির্ণয়ের বেশ কয়েকটি ক্যাম্পের আয়োজনও করেছেন তিনি।

শহরের শান-শওকত ছেড়ে গ্রামের খুপড়ি ঘরে একা নিভৃতে কাটিয়ে দেন বছরের পর বছর। কিসে এমন আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন মাহফুজুর রহমান সাগর। কী তাকে সংসার বিবাগী করেছেন। মানবসেবায় তিনি এতটাই আচ্ছন্ন যে, মানুষের কষ্ট অনুভব করতে ঠিকানাহীন মানুষের সাথে স্টেশনে রাত কাটাতেও দ্বিধা করেননি।

> আরও পড়ুন- জারবেরা চাষে কোটিপতি আনোয়ার

Advertisement

মাহফুজুর রহমান সাগরের সহযোদ্ধা আবির রহমান জিসান বলেন, ‘মাহফুজুর রহমান সাগর একজন শিক্ষকই নন, তিনি একজন বন্ধুও। জীবনের স্বাদ-অহ্লাদ ভুলে ছুটে চলেছেন এক গ্রাম থেকে অন্যগ্রামে। কখনো কখনো এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সমাজসেবায় ওনার অদম্য স্পৃহা দেখে বুকটা ভরে যায়।’

মাহফুজুর রহমান সাগর বলেন, ‘সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। এ স্বপ্নের পথে চলতে গিয়ে অনেক পরিবারের সদস্য ছাড়াও মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। আবার তিরস্কারও সহ্য করতে হয়েছে অনেক। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে একটু সচেতন হলে ‘স্বপ্নের দেশ’ গড়া সম্ভব হবে।’

দাগনভূঞা একাডেমির প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওনার কাছে ‘ইনোভেটিভ’ একটি ব্যাপার আছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছেন। নানা কারণে আমি ওনাকে তেমন সহযোহিতা করতে পারি না। তিনি শিক্ষার্থীদের সমাজ সচেতনতায় নানাভাবে কাজ করছেন।’

> আরও পড়ুন- অভাবকে খুব কাছ থেকে দেখেছি : লিজা

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ভূঞা বলেন, ‘মাহফুজুর রহমান সাগর যে কাজটি করছেন, সেটা নিসন্দেহে ভালো কাজ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত ওনার মোটিভেশনাল একাধিক কর্মকাণ্ডে আমি গিয়েছি। আমার কাছে ভালো লেগেছে, ব্যক্তিপর্যায়ে তিনি এ ধরনের কাজ করছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমাদের সবার সহযোগিতা করা উচিত।’

রাশেদুল হাসান/এসইউ/এমকেএইচ