দেশজুড়ে

সাপের ভয়ে আলু তোলা যাচ্ছে না

রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিস্তৃর্ণ আলু ক্ষেতের ইদুরের গর্তে মিলছে বিষধর গোখরা সাপ। আলু তুলতে গিয়ে গত দু’দিনে তানোর পৌরশহরের আকচা বরশো স্কুল এলাকায় অন্তত ১০টি প্রাপ্তবয়স্ক সাপ মেরেছেন শ্রমিকরা।

Advertisement

এ ঘটনায় শ্রমিকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ভীত শ্রমিকরা দেখা পাওয়া মাত্রই পিটিয়ে মেরেছেন সাপগুলো। প্রাণভয়ে অনেকেই নামছেন না ক্ষেতে। এতে পরিপক্ক আলু তোলা নিয়ে বেকায়দায় কৃষক। তবে নির্বিচারে সাপ পিটিয়ে না মারার অনুরোধ জানিয়েছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

স্থানীয় কৃষক বিশ্বনাথ চৌধুরী জানান, তিনি প্রায় ১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। এখন আলু তোলায় ব্যস্ত সবাই। কিন্তু ক্ষেতে গোখরা সাপ দেখা দেয়ায় শ্রমিকরা ক্ষেতে নামতে চাইছেন না। দ্বিগুন পারিশ্রমিক দিয়েও মজুর নামানো যাচ্ছে না ক্ষেতে। ফলে আলু নিয়ে বেকায়দায় তারা।

এলাকায় আলু ক্ষেতে শ্রমিকের কাজ করছেন সিহাবুর ইসলাম (৩১), মমিনুল আলী (২৬), রাকিবুল হোসেন (২৩)। তারা বলেন, প্রতিদিনই আলু তুলতে গিয়ে বিষধর গোখরার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। দংশনের শঙ্কায় দেখা পাওয়ামাত্রই পিটিয়ে মেরে ফেলছেন সাপ। এ ঘটনায় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

Advertisement

এ অঞ্চলে পাওয়া গোখরা উপমহাদেশের অন্যতম বিষধর সাপ। এটি গোমা, খইয়া বা খড়মপায়া গোখরা বলেও পরিচিত। ফনায় চশমার মতো দুটি চক্র থাকে। দেড় মিটার দৈর্ঘ্যের গোখরা নিশাচর। এরা মানুষের বসতবাড়ির আশেপাশে, চাষের জমি ও বনাঞ্চলে বাস করে। এদের খাবারের তালিকায় রয়েছে ছোট পাখি, ব্যাঙসহ অন্যান্য উভচর জীব।

দেখতে প্রায় একই রকম গোখরা গোষ্ঠীর অন্য সাপগুলো হলো, কেউটে, শঙ্খচূড়, স্পিটিং কোবরা। এরাও অত্যন্ত বিষধর। বিরক্ত না করলে এরা সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না। গোখরা ছাড়াও সম্প্রতি বরেন্দ্র অঞ্চলে পাওয়া যাচ্ছে রাসেল ভাইপার। মারাত্মক বিষধর এ সাপ রয়েছে বিপন্ন প্রাণির তালিকায়।

এদিকে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সতর্ক ও সচেতনতা বাড়াতে নানান উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌ. মো. গোলাম রাব্বী। নির্বিচারে সাপ মেরে না ফেলারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সাপ নির্বিচারে না মেরে সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রার্ণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, গোখরা সাধারণত কৃষকের ফসল নষ্টকারী ইদুর দমন করছে।

Advertisement

তাছাড়া আঘাত না পেলে সাধারণত আক্রমণ করে না এ প্রজাতির সাপ। কাজেই দেখা পেলে নির্বিঘ্নে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে। লাভবান হবেন কৃষক।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস/জেআইএম