জাতীয়

শতাধিক এমপির বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ

পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে শতাধিক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে । কিন্তু মাত্র কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অভিযুক্ত সংসদ সদস্যদের শুধু এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর তারা কোথায়, কীভাবে, অবস্থান করছেন, আদৌ এলাকা ছেড়েছেন কি না- সে ব্যাপারে মনিটরিং করা হয়নি।

Advertisement

তবে ভোটের আগের দিন স্থানীয় সংসদ সদস্য বিএম কবিরুল হক মুক্তিকে নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় অবস্থান না করার জন্য চিঠি দিয়েছে ইসি। কিন্তু তিনি এলাকায় অবস্থান করলেও নির্বাচন বন্ধ করা হয়নি। শুধু চিঠি দিয়েই দায় সেরেছে ইসি। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান শনিবার টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা অনেক অভিযোগ পাই, এটা সত্য। কিন্তু পরে দেখা যায় এসব অভিযোগের সত্যতা নেই। তাই সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না।’

জানা গেছে, শনিবার নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্যকে ‘কড়া’ নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে জানান ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান। আগামীকাল রোববার তৃতীয় ধাপে নড়াইলের কালিয়াসহ ১১৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

Advertisement

ইসির এ কর্মকর্তা জানান, এ সংসদ সদস্যকে এক দফা সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরও এলাকায় অবস্থান করার তথ্য পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের প্রভাব বন্ধ করতে মার্চের প্রথম সপ্তাহে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকেও চিঠি দিয়েছিল ইসি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ইসির চিঠি পাওয়ার পর প্রত্যেক এমপিকে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের সবারই আইন মানা উচিত। কেউ যদি আইন না মানে তাহলে ইসি আইন অনুযায়ী জরিমানা ও নির্বাচন স্থগিত করতে পারে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক অভিযোগ পাওয়া গেলেও এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন অন্তত ১৩ জন সাংসদকে এলাকা ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে। এর মধ্যে দুই জনকে ভোট বন্ধ করে দেয়ার হুমকি ও মন্ত্রীর এক এপিএসের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু তাদের অনেকেই এলাকায় ছিলেন। তবে স্থান পরিবর্তন করেছে অনেক এমপি।

নড়াইল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, একবার সতর্ক করার পরও শনিবার প্রথম প্রহর পর্যন্ত নড়াইল-১ আসনের সাংসদ কালিয়া পৌরসভায় দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করার গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে ইসি। চূড়ান্ত সতর্ক করার পর তিনি এখন কোথায় আছেন জানি না। আমরা নজর রাখছি।

Advertisement

সাংসদকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, যেহেতু আপনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন, তাই আপনাকে নড়াইল-১ (কালিয়া) নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার জন্যে ইসি নির্দেশনা দিয়েছে। আপনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণে নির্বাচন বন্ধ হলে এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার জন্যে ইসি তথা সরকারের যে আর্থিক ব্যয় হবে, পরবর্তীতে তার দায় আপনাকে নিরূপণ করা হবে।

এ বিষয়ে সাংসদ কবিরুল হক বলেন, আমার বিরুদ্ধে এটা অপপ্রচার। আমি তো এখন এলাকাছাড়া। কালিয়া ছাড়ার জন্যে নোটিশ পাওয়ার পরই রাত ১২টার পরে চলে আসি। এলাকার বাইরে থাকায় ভোট বন্ধ করার তো দরকার পড়ছে না।

বারবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও মঙ্গলবার নরসিংদী-৫ আসনের এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদকে আবার সতর্কীকরণ নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ইসি।

জানা গেছে, এ নিয়ে ১৪ জন এমপিকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। তারা হলেন- কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সরকার দলীয় মো. আফজাল হোসেন, সাংসদ রাজবাড়ী-২ আসনের মো. জিল্লুল হাকিম, গাইবান্ধা-৫ আসনের ফজলে রাব্বি মিয়া, কক্সবাজার-৩ আসনের সাইমুম সরওয়ার কমল, সুনামগঞ্জ-২ আসনের জয়া সেন গুপ্ত, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এম এ মতিন, হবিগঞ্জ-৩ আসনের মো. আবু জাহির, কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগর, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, লালমনিরহাট-১ আসনের মোতাহার হোসেন, রাজশাহী-১ আসনের ওমর ফারুক চৌধুরী, নাটোর-৪ আসনের আব্দুল কুদ্দুস ও নেত্রকোণা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের দাবি, তৃতীয় ধাপে আইন অমান্য করে প্রচারে অংশ না নেয়ার জন্য তিনজন সংসদ সসদস্যকে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারাও আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচিত এলাকা ত্যাগ করেছেন। তাই অন্য কোনো অ্যাকশনে আমাদের যেতে হয়নি।

প্রসঙ্গত, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। সংসদ সদস্যরা সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় আছেন। সে হিসেবে তারাও নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারেন না।

এইচএস/এমএসএইচ/এমকেএইচ