মতামত

নিউজিল্যান্ডে হামলা, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং গণমাধ্যম

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি দুটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করছি। হয়তো আমার এ আলোচনায় নতুন করে অনেক দিক উন্মোচিত হবে। ভাবনার খোরাক জোগাবে। আবার বিতর্কের সৃষ্টিও করতে পারে।

Advertisement

০১.নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় তিন বাংলাদেশিসহ ৪৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনাটিকে বিদেশি রাষ্ট্র হিসেবে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বিভিন্ন মসজিদে কড়া প্রহরার ব্যবস্থা করা হয় শুক্রবার জুমার নামাজের সময়।

নিউ ইয়র্ক শহরের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার পরিচালনা করেন বাংলাদেশিরা। জুমার নামাজে সেখানে উপস্থিত হন মার্কিন কংগ্রেসম্যান, কংগ্রেসওম্যান, এসেম্বলিম্যান, সিটি কাউন্সিলম্যান এবং নিউইয়র্কের পুলিশ প্রধান (কমিশনার) জেমস ও'নীল। এ ঘটনায় ম্যানহাটানের একটি মসজিদে প্রেসব্রিফিং করেন নিউইয়র্কের সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। তারা সবাই ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে মুসলমানদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।

জানা গেছে, নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক শ্বেতাঙ্গ তরুণের নাম ব্রেনটন ট্যারেন্ট। তার বয়স ২৮ বছর। স্থানীয় সময় শনিবার সকালে তাকে আদালতে তোলা হলে পুলিশ সন্দেহভাজন হামলাকারীকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত রিমান্ডে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম জানিয়েছে, ট্যারেন্টের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা মহলের যোগাযোগ আছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে এফবিআই।

Advertisement

আমরা সাধারণত দেখি যে, পশ্চিমা বিশ্বে কোথাও কোনো হামলা হলে সেখানে হামলাকারী যদি অমুসলিম হন তাহলে ওই হামলার ঘটনা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড (টেররিস্ট অ্যাক্টিভিটি) হিসেবে আখ্যায়িত হয় না। মুসলমান কেউ জড়িত থাকলেই কেবল সেটিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলা হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা গেল এবার। সিএনএন নিউজিল্যান্ডের হামলাকে সরাসরি শেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীর সন্ত্রাসী হামলা বলে শিরোনাম করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবকটি টিভি চ্যানেল সারাদিন তাদের বুলেটিনে নিউজিল্যান্ডে হামলার ঘটনাটি শীর্ষ সংবাদ হিসেবে প্রচার করে।

শুক্রবার রাতে সিএনএন-এর তিনটি সংবাদভিত্তিক জনপ্রিয় শো "এন্ডারসন কুপার থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি", "কুমো প্রাইম টাইম" ও ডন লেমনের সঞ্চালনায় "সিএনএন টুনাইট" এর বিষয় ছিল "নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসী হামলা"। টিভি শো-গুলোতে মুসলিম কমিউনিটি নেতাদের অতিথি হিসেবে আনা হয়। সেখানে লাইভে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নিজে মুসলিম অতিথির হাত ধরে ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন, সমবেদনা জানান। শ্বেতাঙ্গ ও খ্রিস্টান কমিউনিটি নেতারাও টিভি শোতে উপস্থিত হয়ে সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন, গণমাধ্যম, আন্তঃধর্মীয় বিশ্বাসী সবাই সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেও প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইস্যুটিকে কম গুরুত্ব (ডাউনপ্লেস) দিয়েছেন বলে বিতর্ক উঠেছে। সন্ত্রাসী শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা (হোয়াইট ন্যাশনালিস্ট) সংখ্যায় খুবই কম (স্মল গ্রুপ অব পিপল) বলে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট। সেই সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের হামলার ঘটনার পর এ ঘটনাকে শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকি (রাইজিং থ্রেট) হিসেবেও দেখছেন না তিনি। প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্যে সর্বত্রই কড়া সমালোচনা হচ্ছে। যদিও ট্রাম্প নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে টুইট করেছেন। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, হামলাকারী অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ট্যারেন্ট নিজেকে ডনাল্ড ট্রাম্পের একজন সমর্থক হিসেবে দাবি করেছেন। অভিবাসীবিদ্বেষী এই হামলাকারী ৮৭ পৃষ্ঠার ইশতেহারে (মেনিফেস্টো) বলেছেন, এ হামলার মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারীদের (অভিবাসী) জন্য তার বার্তা, ‘আমাদের ভূমি কখনো তাদের ভূমি হবে না যতক্ষণ শ্বেতাঙ্গরা জীবিত থাকবে।’সে আরও লিখেছে, ‘পুনরুজ্জীবিত শ্বেতাঙ্গ পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে’আমি অবশ্যই ট্রাম্পের একজন সমর্থক। তবে নেতা বা নীতি নির্ধারণের দিক দিয়ে বিচার করলে আমি চিন্তায় তার সমর্থক নই।’

Advertisement

০২.নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা কভারেজে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিতর্কের সৃষ্টিও করেছে। হামলাকারী ব্রেনটন ট্যারেন্ট সন্ত্রাসী অভিযানটি নিজেই কয়েকদফায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লাইভ প্রচার করেন। ফলে সবাই ভিডিওটি খুব সহজে পেয়ে যায়।

হামলার ফুটেজটি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম প্রচার করে চ্যানেল টুয়ান্টিফোর। চ্যানেলটি ফুটেজটিতে এক্সক্লুসিভ ট্যাগ লাগিয়ে দেয়। তাতেই বিতর্ক শুরু হয়। চ্যানেলটি হয়তো ভেবেছিল, যেহেতু তারা সবার আগে ফুটেজটি দর্শকদের দেখাচ্ছে তাই এক্সক্লুসিভ ট্যাগ লাগালে টিআরপি-তে (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট) তারা এগিয়ে থাকবে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ভিডিও ফুটেজ সবার কাছেই উন্মুক্ত। এটি যে এক্সক্লুসিভ হয় না চ্যানেল কর্তৃপক্ষের এই সহজ বিবেচনাবোধটি সম্ভবত লোপ পাইয়ে দেয় তাদের "টিআরপি চিন্তা"। এই "টিআরপি" দেশের টেলিভিশনগুলোকে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে আমরা অনেক সময় নিউজ ব্রেকিংয়ের নামে মারাত্মক ভুল করে ফেলছি। জীবিত মানুষকে মেরে ফেলছি। যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্যায় শুধু নয়, অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটিয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট "ইউটিউব"। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের এক নম্বর সাবস্ক্রাইব চ্যানেল সময় টিভির লাইভ সম্প্রচার সাময়িক বন্ধ করে দেয়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ভিডিওটি প্রচার করেছে। পরে অবশ্য দেশের আরও কয়েকটি টিভি চ্যানেলকেও এই একই কারণে বন্ধ করে দেয় ইউটিউব।

এ ঘটনার পর দেশের চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার নীতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কি দেখানো উচিত আর কি নয়, এ নিয়ে যে যার মতো বক্তব্য দিতে থাকেন। এমন ভিডিও ফুটেজ টিভিতে দেখানো উচিত নয় বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেন অনেকে। এদের মধ্যে ভিন্ন পেশার মানুষ আছেন, রয়েছেন সাংবাদিক, সাংবাদিকতার ছাত্র-শিক্ষক সবাই।

যতদূর জানা যায়, ভিডিও ফুটেজটির কারণে মানুষের মনস্তাত্বিক পরিবর্তন হতে পারে বিধায় নিউজিল্যান্ড পুলিশের অনুরোধে এটি প্রচারে বিধি-নিষেধ আরোপ করে ইউটিউব। হ্যাঁ, কথাটি হয়তো একেবারে মিথ্যে নয়, কিন্তু এমন ভিডিও কী এবারেই প্রথম প্রচারিত হয়েছে?

এই তো সেদিন (২২ ফেব্রুয়ারি) নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসে ভীড়ের মধ্যে গুলি ছোড়ার সিসি টিভির ভিডিও প্রচারিত হয়েছে নিউ ইয়র্ক পোস্ট, ডেইলি নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট নিউ ইয়র্কের ওজন পার্ক এলাকায় দুপুরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে বাংলাদেশি ইমাম ও তার সহযোগীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

সেই সময় পাশ্ববর্তী একটি সিসি টিভির ফুটেজ ভাইরাল হয়। সেখানে পুরো ঘটনাটি ধরা পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি পিছন থেকে গুলি করছেন, পর পর দুজন মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। ইসলামিক স্টেটের (আইসিস) জঙ্গীদের কিলিং মিশনের ভিডিও কম-বেশি গণমাধ্যমে তো প্রচারিত হয়েছে।

আমরা সুযোগ পেলেই বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে এক হাত নিই। নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজটি যে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলই শুধু প্রচার করেছে তা তো নয়। ভিডিওটির সোর্স তো বিদেশি গণমাধ্যম। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড পুরো ভিডিওটি প্রচার করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সও ভিডিও'র কিছু অংশ রিলিজ করে। ধারণা করি, জানা-অজানা বিশ্বের খ্যাত-অখ্যাত অনেক গণমাধ্যমেও ভিডিওটি প্রচারিত হয়েছে।

সাংবাদিকতা যদি একাডেমিক বিষয় হয় তাহলে নিশ্চয়ই এর মৌলিক বিষয়গুলো একই রকম। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমরা কথায় কথায় যারা সিএনএন-বিবিসির উদাহরণ দিই, তারা কি দেখেছি যে এদের ধরনটা আমাদের দেশীয় স্টাইল থেকে আলাদা?

টকশোর কথাই বলি। সিএনএন-এর টকশোতে প্রতিনিয়ত দেখা যায়, সঞ্চালক নিজেই একটা পক্ষ নিয়ে ফেলছেন। টকশোর আলোচক সাংবাদিকরাও নিজেদের অবস্থানে থেকে একেকটি পক্ষ নিয়ে কথা বলেন।

সম্প্রতি আমরা আলজাজিরায় "হেড টু হেড" অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মেহেদী হাসানের মুখোমুখি হতে দেখেছি প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভীকে। এই টকশো যারা দেখেছেন তাদের কারও কারও মনে হতে পারে যে সাংবাদিক দৃষ্টতা দেখিয়েছেন, তার বিন্দুমাত্র সৌজন্য বলে কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সিএনএন-এর ক্রিস্টিন আমানপোরের ইন্টারভিউ করার কথাও আমাদের মনে আছে নিশ্চয়ই। প্রধানমন্ত্রীকে অনেকটা তেড়ে প্রশ্ন করেছিলেন আমানপোর। তখন তার সমালোচনায় মুখর হয়েছিলাম আমরা। কয়েকদিন আগে সিএনএন-এর এক সাংবাদিকের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিতন্ডা হয়েছিল খোদ হোয়াইট হাউজের প্রেস ব্রিফিংয়ে। এসব বিষয় আমাদের দেশে হলে কী হতো?

নিউজ ব্রেক করা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের টিভি চ্যানেলগুলো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত নয়। কেননা, সকাল দশটার ব্রেকিং নিউজ রাত ১০টায়ও ব্রেকিং আকারে চলে। একই ঘটনা একই ভাষা। ব্রেকিং। কিন্তু আমরা একটি ব্রেকিং নিউজ বা সদ্য সংবাদ কতক্ষণ স্ক্রলে চালু রাখি? খুব বেশি হলে আধঘণ্টা-একঘণ্টা। সারাদিন টিভিতে একটি নিউজের ব্রেকিং চললে দেশের মানুষ হাসাহাসি করবে নিশ্চিত। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি টিভি চ্যানেলের এক্সক্লুসিভ নিউজ অন্য আরেকটি চ্যানেল নির্ধিদ্বায় প্রচার করে সৌজন্য দিয়ে।

বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টিংয়ে (প্যাকেজ) একজন রিপোর্টার একবার ক্যামেরার সামনে এসে নিজের অবস্থান জানান দিতে পারেন। যাকে টেকনিক্যাল ভাষায় পিটিসি (পিস টু ক্যামেরা) বা মিড পিটিসি বলে। প্রায় চৌদ্দ বছরের টেলিভিশন ক্যারিয়ারে আমার একটি রিপোর্টে একদিন একটিবার মাত্র দুবার পিটিসি দেওয়ার সুযোগ নিতে পেরেছিলাম আমি (পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনায়)। কিন্তু আমেরিকার টিভি চ্যানেলগুলোতে হরহামেশাই একাধিক পিটিসি ব্যবহৃত হয়। একটি প্যাকেজ রিপোর্টে তিনবারও রিপোর্টারের পিটিসি দেখেছি আমি।

ডনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে প্রথমবার অনুষ্ঠিত বৈঠকের খবরটি নিয়ে একটি রিপোর্ট করেছিলাম হোয়াইট হাইজের সামনে থেকে। তখন একজন সাংবাদিক আমার কড়া সমালোচনা করেছিলেন। তিনি আমাকে হেয় করে ফেইসবুকে মন্তব্য করেছিলেন যে কোথায় সিঙ্গাপুরের স্যান্তোসার বৈঠক স্থল আর কোথায় হোয়াইট হাউজ। আজই (শুক্রবার) দেখলাম, নিউজিল্যান্ডে সিএনএন-এর রিপোর্টার না থাকার কারণে হংকং থেকেই তাদের করেসপনডেন্ট রিপোর্টিং করছেন।

আমেরিকায় টিভি চ্যানেলের টকশোতে তো বটেই এমনকি নিউজ বুলেটিনেও প্রেজেন্টাররা কোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নাক-মুখ, চোখ-কপাল-ভ্রু কুচকিয়ে এমন ভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশে হলে আপনি তার গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়বেন। এই যেমন বগুড়ার হিরো আলম কিংবা মুম্বাইয়ে থাকা নায়িকা সিমলাকে তীর্যক প্রশ্ন করায় সামাজিক মাধ্যমে বাজে মন্তব্য শুনতে হয়েছে একাত্তর টিভির দুই প্রেজেন্টারকে। সিএনএন, এমএসএনবিসি, ফক্স নিউজ, সিবিএস নিউজ চ্যানেলের টকশোতে অতিথি আলোচককে সঞ্চালক বন্ধু (ফ্রেন্ড) সম্বোধন করেন বলেও শুনি। কিন্তু এসবই আমাদের দেশীয় টিভি সাংবাদিকতায় কল্পনার অতীত। আমরা ঘনিষ্ট বন্ধুকেও টকশোতে অতিথি পেয়ে এমনভাবে কথা বলি যে জীবনের প্রথম দেখেছি।

আরেকটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে আজকের মতো শেষ করি। আমরা পত্রিকার রিপোর্টিংয়ে অনেক সময় সোর্সের নাম গোপন রাখি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বা নাম না প্রকাশ করার শর্তে উল্লেখ করি। কিন্তু আপনি কি ভাবতে পারেন, দেশের কাগজে সম্পাদকীয় পাতায় দেশের স্পর্শকাতর কোনো ইস্যুতে নামহীন কোনো উপ-সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে? কিন্তু এমনটিই হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় গত বছর (৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। ওইদিন পৃথিবী বিখ্যাত পত্রিকাটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে একটি উপ-সম্পাদকীয় (অ-পেড) ছাপা হয়। যার লেখকের নাম-পরিচয় আজ অব্দি গোপন রাখা হয়েছে।

এবার ভাবুন, কোথায় সাংবাদিকতা ধরা-বাঁধা ছকে আবদ্ধ? কোথায় আমাদের বাক-স্বাধীনতা, আর কোথায় আপনি আমি আমরা। আমাদের সাংবাদিকতা!!

লেখক: নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক।

এইচআর/পিআর