জাতীয়

মামা, মাকে কিন্তু আজ নিয়েই যাব

>> মাকে শনাক্তে ছোট্ট সানিন দিল বাক্কাল কোষ

Advertisement

সানিনের ফ্যাঁকাসে মুখের চাহনি যেন মাকে খুঁজছিল। কোথায় হারাল মা! গত বুধবার রাত থেকে মায়ের দেখা মেলেনি। সানিনের জন্য ওষুধ কিনতে বাসার বাইরে বের হয়ে আর ফেরা হয়নি মা হালিমার।

মায়ের সন্ধানে শুক্রবার দুপুরে মামা ইসরাফিলের কোলে চড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আসে ছোট্ট সানিন। মাকে শনাক্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক টিমের বুথে বাক্কাল কোষও দেয় সে।

আরও পড়ুন >> বোন-দুলাভাই-ভাগ্নের লাশের অপেক্ষায়

Advertisement

সিআইডি বুথে বসেও মায়ের কথা মামা ইসরাফিলকে বারবার বলছিল সানিন। মামা আম্মু কোথায়? কিন্তু ইসরাফিল শুধু অঝোরে কেঁদেছেন, উত্তর দিতে পারেননি। ছোট্ট সানিন তখনও জানে না তার মুখ থেকে নেয়া বাক্কাল কোষের ডিএনএ নমুনায় মাকে হয়তো পাওয়া যাবে তবে জীবিত নয়, পুড়ে অঙ্গার হওয়া মাকে।

পাঁচ বছরের সানিন শুধু জানে, গত বুধবার রাতে মা অল্পসময়ের জন্য বাসার নিচে নেমেছিল। এরপর থেকে নিখোঁজ। সানিনের পাঁচ মাস বয়সী ছোট্ট বোনটাও সারাক্ষণ কাঁদছে, মায়ের অপেক্ষায়!

রাজধানীর চকবাজারে গত বুধবার রাতে আগুনের ঘটনায় সানিনের মা বিবি হালিমা বেগম শিলা নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হালিমার স্বামী মো. সুমন বলেন, ‘চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের স্থান থেকে ২০০ গজ দূরে তাদের বাসা। নিজেরও ব্যাগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চকবাজারেই।’

রাতের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সুমন বলেন, ‘বুধবার রাতে আমার মেয়ে সানিন অসুস্থ ছিল। ওর জন্যই হালিমা ওয়াহিদ ম্যানশনের সামনে একটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে যায়। যাবার সময় বলেছিল, ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনেই ফিরবে বাসায়। কিন্তু ফেরা হয়নি।’

Advertisement

বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ে সুমন বলেন, ‘চকবাজার চুড়িহাট্টার আগুন আমাদের বাসা পর্যন্ত আসেনি। কিন্তু ভাগ্যই কিনা হালিমাকে টেনে নিল সেই আগুনের কাছে! আমার এই দুই শিশুর কী হবে? তাদের মাকে আমি এখন কোথা থেকে এনে দেব?’

আরও পড়ুন >> ১৫ মরদেহ শনাক্তে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ

হালিমার বোনজামাই বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, নিচে ওষুধ কিনতে গিয়ে হালিমা ভয়াবহ আগুনের কবলে পড়ে। হয়তো তিনি আর নেই। শনাক্ত না হওয়া লাশের ভেতরে তিনি থাকতে পারেন- এমনটা ভেবে ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছেন তারা।’

বেলাল হোসেন জানান, হালিমারা পাঁচ বোন, তিন ভাই। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে তাদের গ্রামের বাড়ি।

সানিনের মামা ইসরাফিল বলেন, ‘ঢামেকে আসার পর সানিন আস্তে আস্তে আমাকে বলে, 'মামা আজ কিন্তু মাকে নিয়েই বাসায় যাব। মাকে ছাড়া আজ কিন্তু বাসায় ফিরব না।’

সানিনের ডিএনএ টেস্টের আগেই সিআইডির সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন জানান, ছোট্ট সানিনের ডিএনএ নমুনা নেবার সময় যেন গণমাধ্যম দূরে থাকে। নইলে সানিন ভয় পেতে পারে।

সিআইডি বুথে/ডেস্কে মামা ইসরাফিলের কোলে বসা অবস্থায় সানিনের মুখের বাক্কাল কোষ সংগ্রহ করেন ফরেনসিক বিভাগের সদস্যরা। পরে নুসরাত বলেন, ‘সানিনের বাক্কাল কোষ থেকেই ডিএনএ টেস্ট করা হবে। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে মিলতে পারে সানিনের মা হালিমার মরদেহ।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ৬৪ নম্বর ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় ২০০ কর্মী স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ওই ঘটনায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোট ৬৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় ঢাকা জেলা প্রশাসন। আহত ও দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪১ জন। তাদের মধ্যে দুজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন >> ‘অবহেলাকারী’ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনসহ দুর্ঘটনার সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য সুরক্ষাসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অগ্নি অনুবিভাগ) প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রধান করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দোষীদের চিহ্নিত করতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং অগ্নিদুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ প্রদানের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

জেইউ/এমএআর/পিআর