জাতীয়

ভালো থেকো আমার ভালোবাসা…

মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগেও নিজের ফেসবুক ওয়ালে বারবার করে লিখে গেছেন নিজের ভালোবাসার কথা। নবীন ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের পুরো ফেসবুক ওয়ালে এক নারীর ছবি। তিনি তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু। কিন্তু সেই প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর পরকীয়া মেনে নিতে না পেরে নিজেকেই শেষ করে দিলেন আকাশ। লিখে গেছেন- ভালো থেকো আমার ভালোবাসা ...

Advertisement

ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের (১৩ নম্বর ওয়ার্ড) চিকিৎসক ছিলেন। এখন সেই মেডিকেলের মর্গে পড়ে আছে তার মরদেহ!

গত ১৩ জানুয়ারি স্ত্রীর সঙ্গে তোলা একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে আকাশ লেখেন ‘See my heart in the city now’। এর আগে ১০ জানুয়ারি ভারতের বিখ্যাত সেই চা ওয়ালা দম্পতির ভিডিও পোস্ট করে তিনি লিখেন, ‘I want to travel with you Tanzila Hoque Chowdhury Mitu’ এভাবেই আকাশের পুরো ফেসবুক ওয়াল জুড়ে তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর জন্য ভালোবাসার প্রকাশ। কিন্তু ডা. আকাশ যে কি বিশাল বোঝা বুকে চেপে পাগলের মতো ভালোবেসে যাচ্ছিলেন তার স্ত্রীকে, তা প্রকাশ পায় আত্মহননের কিছুক্ষণ আগে নিজের দেয়া ফেসবুক পোস্ট থেকে।

আরও পড়ুন: স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে চিকিৎসকের আত্মহত্যা!

Advertisement

ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘আমার সাথে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর ২০০৯ সাল থেকে পরিচয়। প্রচণ্ড ভালোবাসি ওকে। ও নিজেও আমাকে অনেক ভালোবাসে আমরা ঘুরে বেড়ায়, প্রেম করে বেড়ায় আমাদের ভালোবাসা কম বেশি সবাই জানে। অনেকে বউ পাগলাও ডাকত। ২০১৬ তে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েকদিন আগে জানতে পারি কিছুদিন আগে শোভন নামে ....এক ছেলের সাথে .....(প্রকাশের অযোগ্য) আর কত কী লজ্জা লাগছে সব লিখতে। ততদিনে সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দেয়া শেষ। আমাকে যেহেতু চট্টগ্রামের সবাই চিনে তাই বিয়ে ক্যানসেল করতে পারিনি লজ্জাতে। ওর মোবাইলে ভাইবারে দেখতে পাই মাহবুব নামে কুমিল্লা মেডিকেলের ব্যাচমেটের সাথে.... (প্রকাশের অযোগ্য) শত শত ছবি।’

‘আমিতো বেঁচে থেকেও মৃত হয়ে গেলাম। তারপর ক্ষমা চাইল শবে কদরের রাতে কান্না করে পা ধরে আর কখনো এমন হবে না। আমিও ক্ষমা করে দিয়ে ১ বছর ভালোভাবেই সংসার করলাম। তারপর ও দেশের বাইরে আমেরিকা গেল। মাঝখানে একবার ঈদ করতে আসল, সেপ্টেম্বরে ২০১৮ তে আবার চলে গেল।’

‘ইউএসএমএলই এর প্রিপারেশন নিচ্ছিল সাথে ফেব্রুয়ারিতে ২০১৯ এ আমার ইউএস এ যাওয়ার কথা। জানুয়ারি ২০১৯ জানতে পারি ও রেগুলার ক্লাবে যাচ্ছে মদ খাচ্চে প্যাটেল নামে এক ছেলের সাথে ....। আমি বারবার বলছি, আমাকে ভালো না লাগলে ছেড়ে দাও কিন্তু চিট কর না, মিথ্যা বল না। আমার ভালোবাসা সবসময় ওর জন্য ১০০% ছিল। আমি আর সহ্য করতে পারিনি।’

‘আমাদের দেশেতো ভালোবাসায় চিটিং এর শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম, আমি চির শান্তির পথ বেছে নিলাম। তোমাদেরও বলছি, কাউকে আর ভালো না লাগলে সুন্দরভাবে আলাদা হয়ে যাও; চিট কর না, মিথ্যা বল না। আমি জানি অনেকে বিশ্বাস করবে না। এত অমায়িক মেয়ে আমিও এসব দেখে ভালোবেসে ছিলাম। ভিতর-বাহির যদি এক হতো। সবাই আমার দোষ দিবে সবকিছুর জন্য, তাই ব্যাখ্যা করলাম।’

Advertisement

ওই স্ট্যাটাসে তিনি বেশ কয়েকটি ছবিও পোস্ট করেছেন নিজের বক্তব্যের পক্ষে। ধারণা করা হচ্ছে স্ট্যাটাস দেয়ার পরই নিজ রুমে আত্মহত্যা করেন ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ।

পরিবারে পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কিছু জানা না গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, সম্ভবত আকাশ নিজের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে অথবা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে এর কোনোটাই এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক মোহাম্মদ হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ডা. আকাশকে হাসপাতালে নিয়ে আসে তার স্বজনরা। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। তার স্বজনদের দাবি রাতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার পর আত্মহত্যা করেছে আকাশ। তবে কীভাবে আত্মহত্যা করেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই।’

মোস্তফা মোরশেদ আকাশ চন্দনাইশ উপজেলার বাংলাবাজার বরকল এলাকার মৃত আব্দুস সবুরের ছেলে। তিনি এমবিবিএস শেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সঙ্গে এফসিপিএস পড়ছিলেন।

এনডিএস/পিআর