প্রবাস

‘প্রবাসী দিবস’ নিয়ে বাংলাদেশিদের ভাবনা

বিশ্বে প্রবাসী আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। বাংলাদেশ পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম দেশ, যে দেশের এত বিপুলসংখ্যক প্রবাসী রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে প্রায় ৮৮ লাখ বাংলাদেশি রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে ১ কোটিরও বেশি পরবাসী রয়েছে।

Advertisement

প্রবাসী আয়ে প্রথম স্থানে থাকা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের জন্য স্বতন্ত্র দিবস আছে। বাংলাদেশ জন্মের ৪৭ বছরেও এ বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের জন্য আলাদা কোনো দিবস ছিল না। নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর হোজে পেরাল্টার প্রস্তাবে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর অ্যান্ড্র ক্যুমো ‘বাংলাদেশি ইমিগ্রান্ট ডে’ নামের একটি রেজুলেশন পাশ করেন।

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিৎ সাহা’র উদ্যোগের এই প্রকলেমেশনে ২৫ সেপ্টেম্বরকে ‘বাংলাদেশ ইমিগ্রান্ট ডে’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় ২০১৮ সালে। এ নিয়ে এই প্রতিবেদক বিশ্বেও বিভিন্ন দেশের নানা পেশাজীবী প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। সবাই দিবসটিতে স্বাগত জানিয়েছেন।

সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যেন দিবসটিকে সংসদে আইন আকারে পাশ করা হয়। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদে’র নিকট দিবসটি সংসদে উত্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র পৌঁছে দেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদ।

Advertisement

লসএঞ্জেলেসের অ্যাকটিভিস্ট মুমিনুল হক বাচ্চু বলেন, ‘লিটিল বাংলাদেশ নামে খ্যাত লস এঞ্জেলেসে পঞ্চাস হাজার বাংলাদেশি বসবাস করেন। আমাদের সবার পক্ষ থেকে নিউইয়র্ক স্টেটকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের জন্য একটি বিশেষ দিন ঘোষণা করে গর্বিত করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই প্রবাসীবান্ধব। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন তো আমাদেরই লোক। আমি তাদের কাছে জোর দাবি জানাই যেন এটি সংসদে পাশ করে সব প্রবাসীদের সম্মানিত করেন।’

যুক্তরাজ্য উদীচী’র সভাপতি গোলাম মোস্তফা এই দিবসকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নিউ ইয়র্ক স্টেট বাংলাদেশ ইমিগ্রান্ট ডে ঘোষণা করে আমাদেরকে সম্মানিত করেছে। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। দলমত নির্বিশেষে আমারে প্রত্যেক প্রবাসীর প্রধান দায়িত্ব দিনটিকে মর্যাদার সঙ্গে পালন করা। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে হবে।

সৌদি প্রবাসী আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমরা দেশের জন্য বিদেশে থেকে যে পরিশ্রম করি আমি চাই প্রবাসীদের জন্য একটি আলাদা দিবস থাকুক। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান যে দিন জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন সেই দিনটিকে কোনো বেছে নেয়া হলো? আমি এই দিন ছাড়া যে কেনো দিন মেনে নিতে রাজি।’

ইউরোপিয়ান প্রবাসী বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন-এর সহ-সাধারণ সম্পাদক পোল্যান্ড প্রবাসী শাহরিয়ার সাকু বলেন, ‘বাংলাদেশে বাহিরে প্রবাসী প্রত্যেকেই বাংলাদেশের অ্যাম্বাসিডর। আমেরিকা সরকার বাংলাদেশকে যে সম্মান দিয়েছে তা যদি সরকার গ্রহণ করে আইন পাশ করে তাহলে আমাদেরকে মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে আমরা মনে করবো।’

Advertisement

কানাডা-বাংলাদেশ সলিডারিটি’র সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘যে দিবসটি আমরা পেয়েছি সরকার যদি চায় তাহলে তা সহজে বাস্তবায়ন হতে পারে।’

দিবসটির স্বপ্নদ্রষ্টা বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আগামী ২০২১ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শত জন্মবার্ষিকী। তার আগে ২৫ সেপ্টেম্বরকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বাংলাদেশ ইমিগ্রান্ট ডে’ ঘোষণা করে জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানাবার গৌরবতম অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমি মনে করি।’

বহির্বিশ্বে বসবাসরত হাজার হাজার বাঙালি ‘বাংলাদেশি ইমিগ্রান্ট ডে’ পালনের মধ্য দিয়ে জাতির জনক কর্তৃক বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে তুলে ধরার ঐতিহাসিক দিনটির গুরুত্বও বহন করবে বলে ‘বাংলাদেশি ইমিগ্রান্ট ডে’ এর উদ্ভাবক বিশ্বজিত সাহা জানান।

অতিথি লেখক: তোফাজ্জল লিটন

এমআরএম/পিআর