জাতীয়

অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে চট্টগ্রামে দুদকের অ্যাকশন

শুরুটা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ থেকে ছয় লাখ টাকাসহ এক রাজস্ব কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। তবে আজ চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের অভিযান টনক নাড়িয়ে দিয়েছে চট্টগ্রামের শিক্ষা ও সেবাসংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের।

Advertisement

দুদক বলছে, নিয়মভঙ্গকারী ও দুর্নীতিবাজদের ধরতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তদন্ত শুরু করেছেন তারা।

দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাউকে না জানিয়েই আজ সকালে চট্টগ্রামের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি নগরীর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। কিন্তু সকাল সোয়া নয়টা পেরিয়ে গেলেও ওই স্কুলের আটজন শিক্ষকের মধ্যে শুধু মাত্র একজন শিক্ষককে তিনি কর্মস্থলে পেয়েছেন।’

‘এরপর বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে চেয়ারম্যান নগরেরর ভাটিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে ২ শিক্ষক অনুপস্থিত পান। স্কুল কর্তৃপক্ষ ওইসব শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারণ জানাতে পারেননি’-বলেন লুৎফুল কবির চন্দন।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু কাস্টমস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়মসহ বহু অভিযোগে চট্টগ্রামের অন্তত ৯৩টি সেবাসংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে দুদকের হাতে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা ও কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্টিবিউশন (কেজিসিএল)-এর মত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। দুর্নীতিবাজদের ধরতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে দুদক। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদও।

শুধু চট্টগ্রাম মহানগরে এখন ৫৪টি দুর্নীতির মামলা তদন্ত করছে দুদক। আর অনুসন্ধান চলছে ৮২টির। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ১২ কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে ঘুষ আদায়সহ রয়েছে নানা অভিযোগ।

গত ১০ জানুয়ারি ঘুষের প্রায় ৬ লাখ টাকাসহ আটক হন কাস্টমসের রাজস্ব সহকারী নাজিম উদ্দিন। দুদক জানিয়েছে, দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে তার কাছ থেকে। গত ১৬ জানুয়ারি ও ২২ জানুয়ারি দুই দফায় একদিন করে রিমান্ডে থাকা নাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

Advertisement

তার দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী, ঘুষের টাকাগুলো যাওয়ার কথা কাস্টমসের আরও ৪-৫ কর্মকর্তার পকেটে। সবমিলে এ ঘটনার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ১০-১২ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার কথা জানতে পেরেছে দুদক।

এছাড়া গত ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের দুদক কার্যালয় থেকে ঘুষের টাকা দেয়ার অভিযোগে নীলফামারী জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট আশিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে দুদক।

দুদক জানিয়েছে, বিসিএস আনসার ক্যাডারের কর্মকর্তা নীলফামারী জেলা কমান্ড্যান্ট আশিকুর রহমান ১৭ নং আনসার ব্যাটালিয়ন বান্দরবান এর অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় একটি টেন্ডার অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদক অফিসে উপস্থিত হলে তিনি নগদ এক লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে তার অনুকূলে অনুসন্ধান নিষ্পত্তি করার প্রস্তাব দেন।

লুৎফুল কবির চন্দন বলেন, ‘দুদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। দুর্নীতিকারী যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না। চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুদকের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। আগামীতে তার ফল জাতি দেখতে পাবে। এছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিষয়টিতে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। ওই টাকা কোথা থেকে এসেছিল। কোন কাজে এ টাকা এসেছিল। কার কাছে যেত। মোটামুটি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্তত ১২ জনকে আমরা চিহ্নিত করেছি।’

তবে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর চট্টগ্রাম সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আটক করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির বিষয়টি আরও শিথিল করা জরুরি। এখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির তদন্ত করতে পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হয়। একটি দেশে আইনের ক্ষেত্রে এমন দ্বিচারিতা হতে পারে না। সু-শাসন ও গণতন্ত্র আছে এমন দেশে এ ধরনের আইন চলতে পারে না।’

আবু আজাদ/জেএইচ/আরআইপি