কৃষকের নীরব বন্ধু দাঁড়াশ সাপ। নির্বিষ এ সাপটির প্রধান খাবার ইঁদুর। মূলত ইঁদুর খেয়েই এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। আড়ালে থেকে কৃষকের বন্ধু হিসেবেও কাজ করে এটি। কিন্তু অজ্ঞতা আর কুসংস্কারের কারণে প্রতিনিয়ত মানুষের হাতে প্রাণ দিতে হয় এদের।
Advertisement
সারাদেশেই দাঁড়াশ সাপের দেখা মেলে। এরা এখনও বিপন্ন পর্যায়ে না গেলেও আগের মতো তেমন একটা দেখা যায় না। দাঁড়াশ সাপ সর্বোচ্চ ৩৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত এই সাপ দেখতে খুবই সুন্দর। এদের ইংরেজি নাম Rat Snake, বৈজ্ঞানিক নাম Ptyas mucosa। কোনো কোনো এলাকায় এই সাপকে দারাজ সাপও বলা হয়। দাঁড়াশ সাপ কৃষি জমিতে থাকতে পছন্দ করে এবং যে জমিতে থাকে তার আশপাশে প্রায় ৩ একর এলাকায় ইঁদুর শিকার করে। ফলে ইঁদুরের কারণে যে ফসলহানী ঘটে তা থেকে রক্ষা মেলে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি বছর ইঁদুর যে পরিমাণ খাদ্যশস্য নষ্ট করে তার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ধান ও গমের। কিন্তু ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের জন্য দাঁড়াশ সাপটি যেহেতু প্রাকৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তাই এই সাপকে রক্ষা করতে পারলে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার ফসলের পাশাপাশি ইঁদুর নিধনের খরচও বাঁচানো সম্ভব।
Advertisement
কিন্তু উপকারী এই সাপ ঘিরে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। দাঁড়াশ সাপ দেখতে অনেকটা বড় এবং কোবরার মতো। তাই মানুষ না জেনেই একে বিষাক্ত ভাবে। মানুষের ধারণা দাঁড়াশ সাপের কোমরে বা লেজে কাঁটা আছে, সেই কাটা দিয়ে আঘাত করলে মানুষ মারা যায় এবং দাঁড়াশ সাপ রাতে গাভীর ওলান থেকে দুধ চুষে খায়। কিন্তু এর সবই ভুল ধারণা। বাস্তবে সাপটি খুব নিরীহ। তবে রেগে গেলে বা ভয় পেয়ে যদি কাউকে দংশন করে তাহলেও কিছু হবে না। কারণ এটি নির্বিষ।
কৃষকের ফসল রক্ষায় এ সাপ নিয়ে কাজ করছেন রাজবাড়ীর সাপের খামারের পরিচালক রবিউল ইসলাম রঞ্জু। তিনি বলেন, আমি আমার এলাকায় কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে বেশ কিছু দাঁড়াশ অবমুক্ত করেছি। কৃষকদের সচেতন করেছি। এখন কৃষকরা দাড়াশ পেলে মারেন না বরং তারা বোঝেন এই সাপ বেঁচে থাকলে তাদেরই লাভ।
তিনি আরও বলেন, এ সাপ নিয়ে বেদে ও সাপুড়েরা ভ্রান্ত কিছু তথ্য প্রচার করেছে। যেগুলোর কোনো প্রকার বৈজ্ঞানিক যুক্তি বা প্রমাণ নেই। সাপের জিহ্বা বিভক্ত। তাই সাপ কোনো কিছুই চুষে খেতে পারে না।
Advertisement
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী বিষেশজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান জাগো নিউজকে বলেন, দাঁড়াশ কেন পৃথিবীর কোনো সাপই কিছু চুষে খেতে পারে না। গরুর ওলানে এক ধরনের পোকা কামড় দেয়। আর ওই দাগ দেখেই এসব ভ্রান্ত ধারণার জন্ম। এ সাপটি সম্পূর্ণভাবে বিষমুক্ত, তার গায়ে কোনো কাটাও নেই। বিপুল অংকের রবি ফসল বাঁচাতে এই সাপের প্রজনন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা উচিত।
এফএ/এমকেএইচ