স্বপ্ন ছিল বিশ্ব ভ্রমণের। সেই স্বপ্ন বুকে নিয়ে লাল সবুজের পতাকা হাতে নাজমুন নাহারের ছুটে চলা। ২০০০ সালে ভারতের পাঁচামরিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই স্বপ্নের যাত্রা শুরু। এরপর একের পর এক দেশ ভ্রমণ।
Advertisement
এ ধারাবাহিকতায় ১১৪তম দেশে পা রেখেছেন তিনি। সাহারার তপ্ত মরু, শহর, বন্দর, আফ্রিকার দুর্গম জঙ্গল, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল, গাম্বিয়া পার হয়ে তিনি এখন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি বিসাওয়ে।
নাজমুন নাহার জানান, মৌরিতানিয়া ও সেনেগাল জয় খুব একটা সহজ ছিল না। সাহারা মরুভূমি অ্যাডভেঞ্চারের সময় প্রচণ্ড ধুলো ঝড়ের মধ্যে পড়তে হয়েছে। ঝড়ের বেগে চোখ, মুখ ও নাকে মরুর তপ্ত বালুর আঘাতে ঠোঁটের এক পাশ ফুলে ওঠে।
তিনি জানান, তপ্ত মরুর বুকে দাবদাহ, ঝড় কোনো কিছুই থামিয়ে রাখতে পারেনি আমাকে। মরুর বুকের সুউচ্চ ভ্যালিতে উড়িয়েছি লাল সবুজের পতাকা। মরুর বুকে রাতের চাঁদের আলো উপভোগ, ভোরের সূর্যোদয় ও বিকেলের সূর্যাস্ত দেখেছি। এরপর মৌরিতানিয়ার বিভিন্ন ক্যামেল ভিলেজে মানুষের বৈচিত্রময় জীবনযাত্রা, পথে পথে বিভিন্ন স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করা সবই ছিল এ ভ্রমণের অন্তর্ভুক্ত।
Advertisement
আরও পড়ুন> সবুজের বুকে লাল উড়বে মৌরিতানিয়ায়
এ ভ্রমণ পিপাসু জানান, মৌরিতানিয়া সফর শেষে আবারও শত শত মাইল দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বাই রোডে সেনেগালের রোসো বর্ডার ক্রস করি। রোসো রিভার পার হয়ে, বর্ডার ক্রস করে সেনেগালের ছোট্ট টাউন সেন্ট লুইতে আসি। তারপর সেন্ট লুই ভ্রমণ শেষ করে রাতের বাসে সেনেগালের রাজধানী ডাকার পৌঁছাই। সেনেগালের সব দর্শনীয় স্থান গোরে আইল্যান্ড, লেক রোজসহ সবকিছু দেখা হয়।
সেনেগালের ম্যাপের মধ্যে অবস্থিত দেশ গাম্বিয়ার বানজুল শহরে বাররা রিভার পার হয়ে পৌঁছায়। পশ্চিম আফ্রিকার এ দুর্গম দেশগুলোতে একা একা বাই রোডে এ কঠিন অভিযাত্রা অনেক বিপদ সংকুল সম্ভাবনা থাকলেও সাহসিকতার সঙ্গে পার হচ্ছি সব পথ। কঠিনকে ভালোবেসেই ত্যাগ, তিতিক্ষা আর সব বাধা মাড়িয়ে চলেছে বাংলাদেশের পতাকাকে হাতে সামনের পথে সু-উচ্চতায়।
বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে শান্তির দূত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন নাজমুন নাহার। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে আলোচিত নারী হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের পতাকাবাহী এ নারী।
Advertisement
আরও পড়ুন> দেশের পতাকা হাতে শততম দেশে বাংলাদেশের নাজমুন
ভারতের পাঁচামরিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন নাজমুন। বিশ্বের ৮০টি দেশ থেকে আসা ছেলে-মেয়েদের সামনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধমে বিশ্ব শান্তি ও একাত্মতার কথা তুলে ধরেন তিনি। এরপর থেকে নাজমুন পৃথিবীর এক এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে চলছেন। দেশ ভ্রমণে তরুণদের নানাভাবে উৎসাহিত করছেন।
২০১৭ সালে ৯৩তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেছেন নিউজিল্যান্ড। এ দুর্দান্ত সাহসী নারী একে একে বাংলাদেশের পতাকাকে পৌঁছান সর্বোচ উচ্চতায়। ২০১৮ সালের ১ জুন নাজমুন ১০০ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়েতে।
তিনি বহু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ‘ইন্সপেরেশন গ্লোবাল ফাউন্ডেশনের’ মাধ্যমে তিনি তার এই উদ্যোগকে বাংলাদেশে শিশু কিশোর, তরুণ-তরুণীদেরকে তাদের স্বপ্নের যাত্রা পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কাজ করে যাবেন। নাজমুনের এ অগ্রযাত্রার ভাবনা আলোকিত করবে আমাদের অনেক মানুষকেই।
এএসএস/এমআরএম/এনডিএস/পিআর