জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম সমন্বয়ক এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ ও ১০ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
Advertisement
একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে পুলিশের দাখিল করা রিমান্ড আবেদনও নামঞ্জুর করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ৯নং আমলি আদালতের বিচারক গোলাম মাহাবুব খান এ আদেশ দেন।
এ সময় মনিরুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় জড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে লাশ হবো, তবুও সব হয়রানি মোকাবেলা করে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে লড়ব।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় পুলিশের দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় মনিরুল হক চৌধুরীকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য ৪ নভেম্বর কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করে পুলিশ।
Advertisement
১৪ নভেম্বর আদালত তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখান। সেই সঙ্গে বিশেষ ক্ষমতা আইনের অপর একটি মামলায় পুলিশের রিমান্ড আবেদন ও জামিন নামঞ্জুর করেন।
পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একই আদালতে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুরসহ তার জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কারাগার থেকে কড়া পুলিশ পাহারায় মনিরুল হক চৌধুরীকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। আদালত প্রাঙ্গণে গাড়ি থেকে নামানোর সময় তাকে খুব অসুস্থ দেখাচ্ছিল।
এ সময় পুলিশের কাঁধে ভর করে সিঁড়ি বেয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের পাঁচতলায় উঠার সময় চারতলায় গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে ওখানেই তাকে টেবিলে শুইয়ে রাখা হয়। এ সময় মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবীরা ডা. আলী আশ্রাফকে এনে চিকিৎসা দিলে ঘণ্টাখানেক পর তিনি কিছুটা সুস্থ হন।
Advertisement
পরে ৯নং আমলি আদালতের বিচারক ওই ভবনের পাঁচতলা থেকে চারতলায় নেমে ২নং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু করেন।
মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবী কাজী নাজমুস সা’দাত বলেন, আদালত আমাদের দাখিলকৃত জামিনের আবেদন ও পুলিশের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। এসব মামলার এজাহারে মনিরুল হক চৌধুরীর নাম নেই। তিনি বয়স্ক ও গুরুতর অসুস্থ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি কুমিল্লা-৬ ও ১০ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। উভয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে তার পক্ষে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত উচ্চ আদালতে আমরা তার জামিন চাইব।
আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আগে মনিরুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় সরকারি দলের স্থানীয় নেতারা চাইছেন আমি যেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারি। সেজন্য একটার পর একটা মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আমাকে গ্রেফতার দেখিয়ে অমানবিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় আমার হাতের হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়া আমি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় আক্রান্ত। এভাবে আমাকে মামলায় জড়িয়ে টানাহেঁচড়া করে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি প্রয়োজনে লাশ হবো, তবুও সব ষড়যন্ত্র ও হয়রানি মোকাবেলা করে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে লড়ব।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জেলার চৌদ্দগ্রামে দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমা হামলায় বাসের ৮ যাত্রী নিহতের ঘটনায় দুটি মামলায় মনিরুল হক চৌধুরী হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন।
গত ২৪ অক্টোবর জেলা জজ আদালত তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। পরে ওই দুটি মামলায় ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে তার জামিন আদেশ হয়। এরপর সন্ত্রাসবিরোধী ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের পৃথক দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর কারণে তিনি জেলহাজতে আছেন।
মো. কামাল উদ্দিন/এএম/পিআর