২০০৫ সালে দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এরপর থেকেই বিভিন্ন আত্মঘাতী হামলার চালিয়েছে তারা। তবে ২০০৭ সালে ছয় নেতার ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়েই মূলত দমে যায় এই জঙ্গি সংগঠনটি।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, সম্প্রতি আবারো বেনামে তৎপরতা শুরু হলেও জেএমবির আগের সেই শক্তির জানান দেয়ার মতো অবস্থা নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারির কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে তাদের কার্যক্রম। অর্থায়নের উৎস বন্ধ ও গডফাদাররা জেলে ও শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতেই কার্যত ভেঙে গেছে সংগঠনটির মেরুদণ্ড।গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টদের একটি সূত্রের দাবি, জেএমবি, বাংলা ভাই কিংবা হরকাতুল জিহাদের মতো সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও সম্প্রতি কয়েক বছরে নামে-বেনামে সংগঠনের আবির্ভাব ঘটছে। নতুন এই সংগঠনগুলোর আদলে জেএমবি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য কারাগারের শীর্ষ নেতাদের ছিনতাই করা। তবে বিষয়টি আমলে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনী আসামি বহনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে।২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশে সিরিজ বোমা হামলার পর থেমে ছিল না জেএমবি। একের পর এক আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জনকে হত্যা করে। আহত হয় চার শতাধিক।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সিরিজ বোমা হামলার পরেও হুজি ২৩টি, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৩৫টি এবং ছোট বড় অন্যান্য নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আরো ২২টি বোমা হামলার ঘটনা ঘটায়। এসব ঘটনায় মোট ১৯৪ জন নিহত ও এক হাজার ৫৮০ জন আহত হন।এরই ধারাবাহিকতায় জঙ্গি মুফতি হান্নান, আতাউর রহমান সানি, শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলামকে (বাংলা ভাই) গ্রেফতার করা হয়।এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় জেএমবির শুরা সদস্য হাফেজ রাকিব হাসান, মো. সালেহীন (সালাউদ্দিন), ফারুক হোসেন (খালেদ সাইফুল্লাহ), জেএমবির সামরিক কমান্ডার মো. মোহতাসিম বিল্লাহ (বশির), বোমা বিশেষজ্ঞ মো. জাহিদ হোসেন সুমন (বোমারু মিজান), আইটি শাখার প্রধান ও বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার মো. এমরানুল হক।ঝালকাঠিতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় দুই বিচারক হত্যায় দায়ে ২০০৭ সালে আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইসহ সাত শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে ২০১৪ সালে ত্রিশাল থেকে ছিনতাই হন মো. সালেহীন (সালাউদ্দিন), মো. জাহিদ হোসেন সুমন (বোমারু মিজান)। তারা এখনো পলাতক রয়েছেন।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে ব্লগার হত্যাসহ বিশিষ্ট নাগরিক ও ব্যক্তিত্বকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে জঙ্গিরা। ইতোমধ্যে ছয়জন ব্লগারকে খুন হতে হয়েছে। হামলার ঘটনা ঘটেছে একাধিক।নামে-বেনামে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হওয়ায় জনমনে আবারো জঙ্গি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে। জেএমবির নাশকতা করার মতো আগের সেই শক্তি নেই। অর্থায়নের উৎস বন্ধ ও গডফাদাররা জেলে ও শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতেই ভেঙে গেছে সংগঠনটির মেরুদণ্ড।জেইউ/এসএইচএস/বিএ
Advertisement