জাতীয়

আল্লাহ-আল্লাহ বলে চিৎকার করছিলেন তারা

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজারগামী ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি যখন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করছিল, তখন বিমানের যাত্রীদের কেউ কেউ আল্লাহ-আল্লাহ বলে চিৎকার করছিলেন, আবার কেউ আজান দিচ্ছিলেন। একই অবস্থা ছিল দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রানওয়ের পাশে অপেক্ষমাণ নিরাপত্তাকর্মী ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা।

Advertisement

ইউএস-বাংলার ওই ফ্লাইটে থাকা যাত্রী নায়লা নাজনিন বলেন, ‘কক্সবাজারে যখন বিমান অবতরণ করছিল না, তখনি আশঙ্কা বুকে দানা বাঁধে। তবে সমস্যা কী, তা আমরা তখনও জানি না। এরপরও অনেকক্ষণ পর্যন্ত বিমান আকাশে থাকায় যাত্রীরা বুঝে গিয়েছিল কোনো সমস্যা হয়েছে।’

‘এরই মধ্যে সম্ভবত পাইলট বিমানে স্পিকারে ঘোষণা দিলেন রানওয়েতে সমস্যা থাকায় বিমান কক্সবাজারে না নেমে চট্টগ্রামে অবতরণ করছে। চট্টগ্রামের আকাশে ঘোরার সময় বিমান যাত্রীদের সবাই আল্লাহকে ডাকছিল। সবাই মাথা নিচু করে শুধু দোয়া-দরুদ পড়ছিল। কেউ কেউ আজান দিচ্ছিল। ল্যান্ডিংয়ের সময় অসম্ভব ঝাঁকুনি’র সময় সবাই আল্লাহ-আল্লাহ বলে চিৎকার করছিল। এ সময় অনেকে আহত হন, দু-একজনের পা ও হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। আমার বড় বোন আলেয়া বেগমের অবস্থা বেশি খারাপ। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে’-বলেন নায়লা নাজনিন।

এদিকে বিমানবন্দরের পার্সেল বিভাগের কর্মচারী ইকবাল বলেন, ‘বিমানের ক্রস ল্যান্ডিং হবে শোনার পর থেকে কী হবে সে আশঙ্কায় বুক কাঁপছিল। কর্মচারীরা সবাই রানওয়ের এক কোনায় জড়ো হই। বিমানটি যখন আকাশে চক্কর দিচ্ছিল তখন বিমানবন্দরে ফায়ার সার্ভিস প্রবেশ করে। বিমান মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে বুকে কে যেন হাঁতুড়ি দিয়ে পেটাল। মুখ দিয়ে শুধু আল্লাহ-আল্লাহ শব্দ বের হচ্ছিল। রানওয়ের সঙ্গে বিমানে ঘর্ষণের শব্দ বুকটা ধরফড় করেছিল। খুব ইচ্ছা করলেও সামনে যেতে পারছিলাম না।’

Advertisement

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিমান যাত্রীদের প্রায় সবাই অসম্ভব ভয় পেয়েছেন। তারা বর্তমানে ট্রমায় ভুগছেন। উচ্চরক্তচাপ জনিত কারণে আলেয়া বেগম (৪৫) নামে এক যাত্রীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় হাত পায়ে ব্যথা পাওয়ায় অনন্ত দশজনকে ড্রেসিং করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন ৪০ জন। বিমানবন্দরেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।’

সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটিতে ১৭১ আরোহী ছিল। সামনের নোজ হুইল কাজ না করায় বিমানটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণে ব্যর্থ হয়। পরে বিমানটি চট্টগ্রামের আকাশে অনেকক্ষণ উড়তে থাকে। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, বিমানটি ক্রাস ল্যান্ডিং করবে। তবে দুপুর দেড়টার দিকে পাইলটের দক্ষতায় বিমানটি শাহ আমানত বিমানবন্দরে শুধু পেছনের চাকাগুলোর ওপর ভর করে ল্যান্ডিং করে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম-পিআর) কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ফ্লাইটে ১১ শিশুসহ (ইনফ্যান্ট) ১৬৪ যাত্রী ও সাত ক্রু ছিল। তাদের সবাই নিরাপদে আছেন।

তিনি আরও বলেন, ফ্লাইটটি পরিচালনা করছিলেন ক্যাপ্টেন জাকারিয়া। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করান।

Advertisement

আবু আজাদ/জেএইচ/জেআইএম