আন্তর্জাতিক

ঘূর্ণিঝড় ফ্লোরেন্স : বিপজ্জনক উপকূলে কারাগারেই রয়েছে বন্দীরা

আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট হারিকেন ফ্লোরেন্স ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকুলে আঘাত হানতে শুরু করেছে। আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ঘুর্ণিঝড়টি স্থলভাগ স্পর্শ করবে। উপকূলীয় উত্তর এবং দক্ষিণ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্য দু'টির ১৭ লাখ মানুষকে ইতোমধ্যেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

Advertisement

জলোচ্ছাস এবং বৃষ্টির ফলে নিউ বার্ন নামে একটি উপকূলীয় শহরের কিছু অংশ এর মধ্যেই ৯ ফুট পানির নিচে চলে গেছে। অন্তত দু'লাখ বাড়ি-ঘর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগের এই ঝড়ে অনেক মানুষের মৃত্যুর আশংকা করা হচ্ছে।

ওই এলাকাগুলো থেকে লোকজনের নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, কিন্তু দক্ষিণ ক্যারোলিনায় কমপক্ষে দু'টি কারাগারের বন্দীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়নি। সেখানকার কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, কারাবন্দীদের অন্য কোনো জায়গায় নেয়া হবে না। দক্ষিণ ক্যারোলিনার কারেকশন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তারা মনে করছেন, অন্য কোথাও নেয়ার চেয়ে বন্দীরা কারাগারেই নিরাপদ থাকবেন।

তবে উত্তর ক্যারোলিনা এবং ভার্জিনিয়ার কিছু কারাগার থেকে বন্দীদের ইতোমধ্যেই নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। দক্ষিণ ক্যারোলিনার কারগার থেকে বন্দীদের নিরাপদ আশ্রয়ে না নেয়ার বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে।

Advertisement

২০০৫ সালে ভয়াবহ ক্যাটরিনা যখন আঘাত হেনেছিল, তখন কারাগারগুলোতে হাজার হাজার কয়েদী চরম বিপদে পড়েছিল। কমপক্ষে ১ হাজার বন্দীর মৃত্যু হয়েছিল। এই তথ্য একজন পিএইচডির শিক্ষার্থী টুইট করলে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুকেও তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

সে সময় ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এর সাথে বন্যায় ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছিল। কমপক্ষে ২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। হারিকেন ক্যাটরিনার আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল নিউ অরলিন্স শহরে। বন্দীরা কারাগারের সেলের ভিতরে বন্ধ অবস্থায় ছিলেন। বন্দীদের বেশিরভাগই ছিলেন বিভিন্ন অভিযোগে বিচারের অপেক্ষায় অর্থ্যাৎ তারা তখনও অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হননি।

ঝড়ের আঘাতের সাথে সাথে বিদ্যৎ চলে যায়। কারাগারের জেনারটরগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। সেই পরিস্থিতিতে কারাগারের সেলগুলোতে বন্ধ রাখা বৈদ্যুতিক দরজাগুলোও কাজ করছিল না। বন্দীরা পরিত্যক্ত একটি কারাগারে বন্যার পানির ভিতরে ছিলেন এবং খাবারের সংকটে ভুগছিলেন।

শেষ পর্যন্ত ঝড় আঘাত হানার চারদিন পর অরলিন্স শহরের কারাগার থেকে বন্দীদের অন্য জায়গায় সরানো হয়েছিল।সে সময় বন্দীদের অনেকে বলেছিলেন, তারা কারাগারের ভিতরে বহু বন্দীর মৃতদেহ দেখেছেন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করেছিল যে ৫১৭জন বন্দী নিখোঁজ হয়েছে।

Advertisement

১৯৯৯ সালেও যখন হারিকেন আঘাত হেনেছিল তখনও দক্ষিণ ক্যারোলিনার কারগার থেকে বন্দীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়নি। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ করা হয়। দক্ষিণ ক্যারোলিনার কারাগারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বন্দীদের অন্য কোনো জায়গায় সরিয়ে নেয়াটা ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

এছাড়া বন্দীদের সরিয়ে নিতে অনেক লোকবল প্রয়োজন, দুর্যোগের সময় সেই লোকবল পাওয়াও কঠিন। বন্দীদের পরিবহন করাও অনেক জটিল বলে কর্তৃপক্ষ মনে করে। বন্দীদের কারাগার থেকে না সরানোর ব্যাপারে এসব যুক্তি দিয়েছে দক্ষিণ ক্যারোলিনা কর্তৃপক্ষ।

টিটিএন/পিআর