আজ সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কোনো প্রকারের যানবাহন চলাচল করেনি। এতে করে দুর্ভোগে ওই মহাসড়কের স্বল্প দূরত্বে চলাচলকারী যাত্রীরা। সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসন গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে লেগুনাসহ সব ধরনের অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। মহাসড়কে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতকারীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বিকল্প যানের ব্যবস্থা না করে মহাসড়কের ছোট যান তুলে নেয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমলেও বেড়েছে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ। তাই দুর্ভোগ কমানোর লক্ষ্যে দ্রুত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
Advertisement
যাত্রীদের তথ্য মতে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুরের জৈনা বাজার পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারে প্রতিদিন চলাচল করত প্রায় সাড়ে তিনশত লেগুনা। এসব লেগুনায় যাতায়াত করত দশ হাজারের উপর যাত্রী। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মহাসড়কে লেগুনা দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ায় প্রশাসন কয়েকবার লেগুনা চলাচল বন্ধের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর আবারও মহাসড়কে দেখা গেছে ওই সব অবৈধ যান। সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে গাজীপুর জেলা প্রশাসন ঘোষণা দিয়ে স্থায়ীভাবে লেগুনা চলাচল বন্ধের উদ্যোগ নিলে লেগুনাসহ সবধরনের অবৈধ যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ দিকে এসব যান চলাচল বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহন সংকটে পড়েছে যাত্রীরা। বিশেষ করে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। অধিকাংশ বাসে এ সব যাত্রীদের না উঠানোর কারণে এখন অধিকাংশ যাত্রীদের ভরসা অধিক ভাড়ায় রিকশা চলা বা হেঁটে যাওয়া।
মহাসড়কের বাঘের বাজার এলাকার মন্ডল গার্মেন্টসের শ্রমিক আলপনা আক্তার বলেন, তিনি মাওনা এলাকা থেকে প্রতিদিন বাঘের বাজার এলাকার কারখানায় লেগুনায় যাতায়াত করতেন। কিন্তু হঠাৎ করে লেগুনা চলাচল বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছে তার মত শতশত শ্রমিক। অল্প বেতনে চাকরি করেন তাই অধিক ভাড়ায় প্রতিদিন যাতায়াতের সক্ষমতা নেই, তাই অন্তত শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে অতি দ্রুত গণপরিবহনের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, মহাসড়কের গাজীপুর থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় লেগুনায় ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, এখন লোকাল বাসে ২৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। এভাড়ায় যেতে ইচ্ছুক না হওয়ায় জোর করে আব্দুল হালিম নামে এক ব্যক্তিকে কিছুদূর যেতেই ১নং সিঅ্যান্ডবি এলাকায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে লেগুনা চলাচল বন্ধ হওয়ার এ সুযোগে অন্যান্য পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে। এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের সঙ্গে যানবাহন চালক ও সহকারীদের তর্কবিতর্ক হচ্ছে।
Advertisement
গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ আহমেদ জানান, মহাসড়কে লেগুনা চলাচল বন্ধ করায় একদিকে মহাসড়ক যানজট মুক্ত রয়েছে। অপরদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমেছে। তবে গাড়ির অভাবে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই দ্রুত গণপরিবহনের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসেন জানান, গত কয়েকদিন ধরে মহাসড়কে লেগুনা চলাচল বন্ধ হওয়ায় গণপরিবহনের অভাবে বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে গাজীপুর ডিপো থেকে কিছু বিআরটিসি বাস মহাসড়কের জৈনা বাজার পর্যন্ত চলাচলের জন্য ব্যবস্থা নিলে দুর্ভোগ কমবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে লেগুনাসহ সকল ধরনের অবৈধ যানচলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এতে সাময়িক দুর্ভোগ তৈরি হলেও তা কমানোর লক্ষ্যে খুব দ্রুতই এর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিহাব খান/আরএ/আরআইপি
Advertisement