ভ্রমণ

ভাটির দেশ অষ্টগ্রামে একদিন

ঈদের ছুটিতে মন চায় অনেক কিছু করতে। কিন্তু হাতে সময় থাকলেও বয়সটা বাধা দেয়। চাইলেই যা ইচ্ছে তা করা যায় না। তবে চাইলে মাঝে মাঝে পাড়ার ছোট-বড়দের নিয়ে একসাথে ঘোরা যায়, খাওয়া যায়, আড্ডায় মেতে ওঠা যায়। তেমনি একটি দিন ছিল ঈদের চতুর্থ দিন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন শাহরিয়ার কাসেম-

Advertisement

শুক্রবার বিকেল। প্রতিদিনের মত বাজারে গেলাম। তবে বলে রাখা ভালো, আমাদের বাড়ির পাশেই বাজার (সৈয়দ আক্তার নগর বাজার, বুড়িশ্বর ইউপি)। বাজারে প্রথম দোকানটা হলো দয়াল ফার্মেসি। দয়াল ফার্মেসি নামটা যে কেউ দেখলে দ্বিধায় পড়বেন, দোকানের মালিক হিন্দু না মুসলিম। হ্যাঁ, দোকানের মালিক হিন্দু। তিনি আশীষ দেব। একজন চমৎকার মানুষ। অসাম্প্রদায়িক মানুষ। সে জন্যই তাকে আমার ভালো লাগে। রোজ একবার হলেও তার ফার্মেসিতে বসতে হয়। সেদিনও বসলাম। তবে আমি একা নয় গ্রামের একদল তরুণ ও মাঝবয়সী কিছু মানুষ।

সবার মুখেই ঈদ পরবর্তী ভ্রমণের কথা। গ্রামের কিছু ছেলে পুরো ভ্রমণের আয়োজন করেছে। সবাইকে ভ্রমণের জন্য দাওয়াতও করেছে। এমনকি আমাকেও বাদ রাখেনি। এখানে অনেক কথা-বার্তা শেষে সিদ্ধান্ত হলো যে, কাল সকাল নয়টায় ইছাপুর ব্রিজ সংলগ্ন ঘাট থেকে নৌকায় চড়ে অষ্টগ্রামের উদ্দেশে যাওয়া হবে।

> আরও পড়ুন- টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ- শেষ পর্ব 

Advertisement

ভ্রমণে যা যা থাকবে তা হলো- সকালে নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকেলে আসার সময় নাস্তা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও আমার কাছে যেন মনে হচ্ছে- কী যেন একটা নেই। রাতে সবার উপস্থিতির জন্য ফোন করা হলে বাসায় চলে গেলাম।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোসল, প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বাজারে চলে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই একে একে সবাই আসতে শুরু করল। সবার জড়ো হওয়ার স্থান হলো দয়াল ফার্মেসি। কামরুল কাকা, হারুন ভাই, জগদীশদা, সেন্টু কাকা, নিয়াজ মোহাম্মদ, শাহজান কাকাসহ আরো অনেকেই।

এখন যাওয়ার পালা। আমার কাছে যে জিনিসটির অভাব মনে হয়েছিল, সেটা হলো গান-বাদ্য। তবে মনে ছিল না, যে ভ্রমণে আলী আজম ভাই, আজমান ভাই যাবে তারা কি বাদ্য ছাড়া যাবে? তা নিশ্চয়ই নয়। মুহূর্তেই একটি অটোরিকশা এলো। দেখে তো আমি অবাক। আজম ভাই, আজমান ভাই গানের সরঞ্জাম নিয়ে হাজির। মনে মনে তাদের ধন্যবাদ দিলাম।

আল্লাহর ওপর ভরসা করে উঠলাম নৌকায়। তবে নৌকা দু’টো। একটায় ছোটরা, অন্যটায় বড়রা। যদি ছোট-বড় এ দু’য়ের পরিমাপ করা হয়, তাহলে আমি কোনো শ্রেণিতেই পড়ি না। কিন্তু বড়দের অনুরোধেই তাদের নৌকায় বসলাম।

Advertisement

নৌকা চলল। আবহাওয়াটাও বেশ দারুণ। কলকল নদীর শব্দ কার না ভালো লাগে? আশেপাশে গ্রাম নেই। পানিতে ঢেউয়ের তালে তালে ভাসছে কচুরিপানা, হাঁসের পাল। পালতোলা নৌকাও চোখের সামনে দিয়ে যাচ্ছে। একদল জেলে মাছ ধরছে। কনে বা বরের রঙিলা নৌকাও যাচ্ছে। এরকম দৃশ্য সত্যিই বেশ উপভোগ্য। দূরের গ্রামগুলো যেন ভেসে অাছে পানির ওপর। কাছে গেলেই বোঝা যায়, তাদের জীবনযাত্রার ধরন। কী প্রতিকূল পরিবেশে তারা পার করছে একেকটা দিন।

> আরও পড়ুন- ঘুরে আসুন হরিণঘাটা বনাঞ্চল

দুপুরের দিকে পৌঁছলাম অষ্টগ্রামে। অাহা, কী সুন্দর ব্রিজ! রাষ্ট্রপতি অাব্দুল হামিদ ব্রিজ। ব্রিজের কাছে আমরা ছবি তুলেছি। দুপুরের খাবার খেয়েছি। আরও কত কী! আশপাশের প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য চোখে লেগে থাকবে অনেকদিন।

এবার ফেরার পালা। টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হলো। অামরা নৌকার ভেতরে একে অপরের গায় ঘেঁষে বসলাম। বৃষ্টি থামল। আবার নৌকার উপরে এলাম। শুরু হলো মহনলাল দাসের সেই চিরচেনা গান। মহনলালকে ঘিরে বসে আছি আমরা। ‘বন্ধু আইলা না’, ‘বন্ধু রে তোর মন আজও পাইলাম না’, ‘আমার বন্ধু দয়াময়’, ‘সোনা বন্ধু’- এরকম মনকাড়া গানের জন্য তার জুড়িমেলা ভার। আর গানের তালে এমনভাবে মজেছে আমাদের শ্রীজয় দা তা চোখে না দেখলে হয়ত অনেক কিছুই বাদ পড়ে যেত। মাথা নাড়াচ্ছেন আলী আজম ভাই ও মোনায়েম কাকা। তবে অতিথি শিল্পী হিসেবে জুলহাস ভাইয়ের গানসহ তার অঙ্গভঙ্গিও ছিল চমৎকার।

একটার পর একটা গানের পরিসমাপ্তিতে অামাদের বাড়ি ফেরারও সময়ও হয়ে এলো। আমরা বাড়ি ফিরলাম। ক্লান্ত শরীর নিয়ে হারিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।

এসইউ/আরআইপি