জাতীয়

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস সচল করার নির্দেশ

সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোববার থেকে ক্লাস সচল করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগী করতে শিক্ষকদের প্রতিও অনুরোধ করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জাগো নিউজকে মাহাবুবুর রহমান বলেন, শনিবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কথা থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কাল রোববার থেকে দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস সচল করার কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য দিনের মতো রুটিন অনুযায়ী সব বিষয়ের ক্লাস করাতে প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এমন নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।

Advertisement

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার মাউশির ওয়েবসাইটে এমন একটি নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। সেখানে শনিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কথা বলা হয়। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সড়কে অবরোধ থেকে ফিরিয়ে ক্লাসে নিয়ে আসতে বলা হয়। গত কয়েকদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শিক্ষকরা যাতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনেন এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করুক। নিরাপদ সড়ক সকলের দাবি। বর্তমান সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে, শনিবার সপ্তম দিনের মতো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করে।এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলছিল, আমাদের কলেজ (ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডে অবস্থিত সলিমুল্লাহ কলেজ) থেকে ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী শাহবাগে এসে আন্দোলনে যোগ দেয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আন্দোলন করে আজ বাড়ি ফিরে যাচ্ছি, কাল (রোববার) আবারও বেলা ১১টায় শাহবাগে এসে আন্দোলনে যোগ দেব। সরকারের শুধু আশ্বাসে আমরা বাড়ি ফিরে যাব না। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

Advertisement

কথা বলার সময় তার সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা বলছিল, ৯ দফা দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ আবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি, কিন্তু ছাত্রলীগসহ অনেকে আমাদের হুমকি ও হামলা করছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কেউ বাধা দিলে আমরা চুপ করে থাকবো না। আমাদের কয়জনকে বাধা দেবে? আমরা তো অসংখ্য, তাই আমাদের বাধা দিয়ে রাখতে পারবে না।

অন্যদিকে, আন্দোলন ছেড়ে বাড়ি ফিরে যেতে ছাত্রলীগ কর্মীদের লিফলেট বিলি করতে দেখা গেছে। লিফলেটে শিক্ষার্থীদের ৯ দাবির বিপরীতে সরকারের পক্ষ থেকে ১১টি দাবি বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে কালশি ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিল। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় মুখেই দাঁড়িয়ে যায়। তখন পেছন থেকে আরেকটি দ্রুতগতি সম্পন্ন জাবালে নূরের বাস ওভারটেক করে সামনে আসতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিমিষেই বাসটি ওঠে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর। চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুইজন। এ ছাড়া আহত হয় আরও ১৩ জন শিক্ষার্থী।

নিহত দুজন হলো- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।

Advertisement

ওই ঘটনায় গত রোববার রাতেই নিহত মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩৩। এ ঘটনায় জাবালে নূরের তিনটি বাসের তিন চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেফতার করে র্যাব।

আন্দোলনে নেমে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি করে শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো- দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ী বেপরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে, নৌ-পরিবহনমন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্প্রিড ব্রেকার দিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভর সরকারকে নিতে হবে, শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে- থামিয়ে তাদের নিতে হবে, শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না এবং বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।

এমএইচএম/জেডএ/এসআর