দেশে ধর্ষণ ও নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বর্তমানে বয়স ১০ বছর হওয়ার আগেই দেশের ৫ দশমিক ১৭ ভাগ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তাই নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কমাতে বিদ্যমান আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন, সামাজিক আন্দোলন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও গণসচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
Advertisement
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন (ডুফা) আয়োজিত ‘নারী-শিশুর প্রতি নির্যাতন এবং ধর্ষণ প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ অভিমত তুলে ধরা হয়।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডুফার সানজিদা খান রিপা, ব্যারিস্টার কামরুন মাহমুদ দিপা এবং মো. জাহিদুল কবীর টিটু।
সেমিনারে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
ডুফা সভাপতি এ কে এম এনায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। নারীনেত্রী খুশি কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. সানজিদা আক্তার, ডুফা সম্পাদক ড. নেয়ামুল ইসলাম।
বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ ও নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সেমিনারে সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের একটি তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, বয়স ১০ বছর হওয়ার আগেই দেশে ৫ দশমিক ১৭ ভাগ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ২০১৪ এর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর’ ২০১৭ পর্যন্ত সারাদেশে ১৭ হাজার ৩৮৯টি নারী ও শিশু ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত হয়। যার মধ্যে ১৩ হাজার ৮৬১ জন ভুক্তভোগী নারী ও ৩ হাজার ৫২৮ জন শিশু। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে দেশে ১৮৭ জন নারী ধর্ষণ, ২৯ জন যৌন হয়রানি ও ১৯ জন ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন।
সেমিনারে ড. সানজিদা আক্তার সমাজের সবখানে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নারীনেত্রী খুশী কবীর বলেন, সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এতে করে নারীর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে। তিনি বলেন, পুরুষ মানেই নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও কর্তৃত্ববান এবং নারী মানেই বিনয়ী- এরকম ভুল ধারণা নিয়ে এই সমাজে সবাই বড় হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পরিবার থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।
Advertisement
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ কমাতে হলে সব পর্যায়ে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক দিক নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, যারা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত তাদের ওপর গবেষণা করে এই সামাজিক ব্যধি নির্মূলে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক উল্লেখ করে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজকে নারী ও শিশু বান্ধব করতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন অতিরিক্ত কর কমিশনার অরুণ কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিদ্দীকা আক্তার লাকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, আইনজীবী ব্যারিস্টার আফরোজা, ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলাম, ঢাবি শিক্ষক ড. মনিনুর রশীদ, ধীমান রয়, লুনা খান, জিয়াউল কবীর সুমন প্রমুখ।
এসআই/এমএমজেড/এসএইচএস/জেআইএম