দেশজুড়ে

বড়পুকুরিয়ায় দুদকের খনি পরিদর্শন, মামলা দায়েরের নির্দেশ

দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া খনির কোল ইয়ার্ড থেকে প্রায় এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনার পর দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি দল খনি এলাকা পরিদর্শন ও অফিসিয়াল কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে।

Advertisement

ঘটনা তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পেট্রোবাংলাকে খনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন করে রাখা এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে গেছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২২৭ কোটি টাকার ওপরে। এ কারণে কয়লা সঙ্কটে দেশের একমাত্র কয়লাভিক্তিক দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপ বিদুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন রোববার রাত ১০টা ২০ মিনিটে বন্ধ হয়ে গেছে।

এই ঘটনায় সোমবার বিকেল ৩টায় দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক ব্যানার্জীর আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে প্রবেশ করে। তারা বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খনি এলাকা পরিদর্শন করেন এবং খনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কাগজপত্র যাচাই করেন। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেন।

Advertisement

দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক ব্যানার্জীর আহম্মেদ এ সময় খনি গেটে অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের জানান, খনির কোল ইয়ার্ডে মাত্র ২ হাজার টন কয়লা রয়েছে।

এর আগে ঘটনা তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুদকের উপ-পরিচালক শামছুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, দুই সহকারী পরিচালক এ এস এম সাজ্জাদ ও তাইজুল ইসলাম।

ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল জালিয়াতি ও বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দীন আহমেদ ও সংশ্লিষ্টরা কয়লা খনির এক লাখ ১৬ হাজার টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রির মাধ্যমে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই ভিত্তিতে সোমবার এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দুদক।

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহে বাংলাদেশ তৈল ও গ্যাস কর্পোরেশন বা ‘পেট্রোবাংলা’র তদারকিতে ঘাটতি ছিল বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

Advertisement

তিনি বলেছেন, কয়লা সরবরাহে ‘পেট্রোবাংলা’র তদারকিতে ঘাটতি ছিল। তদন্ত শুরু হয়েছে। অতীতে যারাই খনিতে দায়িত্বে ছিলেন, তারাও তদন্তের আওতায় আসবেন। সোমবার প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পেট্রোবাংলাকে খনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। বড়পুকুরিয়া খনির উপর নির্ভর করে খনির পার্শ্বে কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ও ১২৫ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট রয়েছে। কেন্দ্রটি পূর্ণ উৎপাদনে থাকলে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়। ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১নং ইউনিটটি বড় ধরনের (জেনারেল ওভারহোলিং) মেরামতের জন্য কয়েকমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ২নং ইউনিটটি কয়লা সংকটের কারণে গত ২৯ জুন বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়লা সংকটের কারণে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩নং ইউনিটটি কয়েকদিন ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও অবশেষে গত রাতে সেটিরও উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খনির এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এমদাদুল হক মিলন/এমএএস/এমএস