জাতীয়

১০২ দিনে ৬৪ জেলায় সাইকেলে ভ্রমণ

রাজধানীর পল্টন মোড় থেকে প্রেস ক্লাবের রাস্তা দিয়ে পুরনো ধরনের একটি বাইসাইকেল চালিয়ে আসছেন একজন। মাথায় কাপড়ের তৈরি লাল সবুজের ক্যাপ। সাইকেলের সামনে-পিছনে মিলিয়ে রয়েছে ৩টি ব্যাগ। সামনে-পিছনে লেখা ‘বাংলাদেশের ৬৪ জেলা সাইকেল যোগে ভ্রমণ’।

Advertisement

এমন লেখা আর সাইকেল আরোহীর বেশভূষা দেখে সবার আগ্রহের দৃষ্টি সেই দিকে গিয়েই আটকাচ্ছে। সেই আগ্রহ থেকেই সাইকেল আরোহীর দিকে এগিয়ে যাওয়া। কাছে যেতেই সাইকেলের সামনের লেখাগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। সেখানে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে লেখা আছে- ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়, সামজিক, জনকল্যাণ বাস্তবায়িত ও নির্মিত স্থান দর্শন এবং দেশের ৬৪ জেলায় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানা ও জ্ঞান অর্জন করা’।

আলাপকালে সাইকেল আরোহী জানালেন, ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল পৌরসভায় তার বাড়ি। পেশায় সবজির দোকানি। দেশের সব জেলায় ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা অনেক দিনের । যদিও টাকা আর সময়ের অভাবে এই শখ পুরণ করতে সাহস পাননি তিনি। পরবর্তীতে বাবার দেয়া টাকা নিয়েই নেমে পড়েন সব জেলা ঘুরে দেখার এই মিশনে। ১০২ দিনে ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ করে কয়েকদিন ধরে ঢাকায় এক বন্ধুর বাসায় উঠেছেন।

সাইকেল যোগে দেশের ৬৪ জেলা ঘুরে আসা এই সাইকেল আরোহীর নাম আহসান হাবীব। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ঘোরা-ফেরার শখ আমার। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ বা সময় না থাকায় ঘোরার সুযোগ হয়নি।

Advertisement

যখন আমার বাবা টাকা দিলেন সেই টাকা নিয়েই ঘুরে আসলাম পুরো দেশ। তিন মাসের মধ্যে ঘুরা শেষ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ৬৪ জেলা ঘুরতে মোট ১০২ দিন লেগেছে। দেশের সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখাই ছিল আমার উদ্দেশ্যে।’

আহসান হাবীব, ‘আমাদের দেশ এত সুন্দর, এত প্রাকৃতিক শিক্ষণীয় বিষয় আছে আমাদের সব জেলাগুলোতে তা পুরাপুরি না ঘুরলে বুঝতেই পারতাম না। আমি তো গরিব ঘরের ছেলে, অন্য দেশ ঘুরে দেখতে পারিনি। কিন্তু এই ১০২ দিনে নিজের দেশ ঘুরে আমি সত্যেই অভিভূত। প্রতিটি জেলার মানুষ আমার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। আপ্যায়ন করেছে। একটি কথা সবাই স্বীকার করতে বাধ্য যে, আমাদের দেশের মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ।’

সাইকেল যোগে ভ্রমণ বিষয়ে তিনি বলেন, সাইকেলে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছি এর কারণ খুব কাছ থেকে নিজে সব জেলা ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছি। সেই সঙ্গে যেন জেলাবাসীরা আমার দিকে আগ্রহী হয় সেই চেষ্টা করেছি আর প্রতিটি জেলাবাসীকে দেশের উন্নয়নের মূল্যায়ন করার জন্য এই মেসেজ দিতে চেয়েছি। সেটাই আমার সাইকেলের সামনে লেখা আছে। আমি ভ্রমণ করছি আর মানুষ এই মেসেজটা দেখেছে সাইকেলের সামনে।

সেই সঙ্গে আমি দেশবাসীর কাছে দুটি স্লোগান পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি। তারমধ্যে আছে ‘দেশি পণ্য বেশি বেশি করে করি ব্যবহার, এ দেশ তোমার আমার, দেশের অর্থ সঠিক কাজে করি ব্যবহার, এ দেশ তোমার আমার।’ অপরটি ‘আত্ম স্বাস্থ্যে হই সচেতন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় করি জীবন-যাপন ও সুন্দর হোক সবার মন’।

Advertisement

এএস/এমবিআর/আরআইপি