মাঠে নামার আগেই সুইজারল্যান্ড ঘোষণা দিয়েছিল, ব্রাজিলকে ঠেকাতে তারা প্রয়োজনে ‘কুৎসিত’ ফুটবল খেলবে। রোস্তভ এরেনায় রোববার ৪৫ হাজার দর্শকের অধিকাংশই ছিল ব্রাজিলের। নেইমার শুরু থেকে মাঠে নামবেন কি-না, সে বিষয়ে অনেকটাই সংশয় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন একাদশে নেইমারের নাম দেখা গেলো এবং তিনি মাঠে নামছিলেন, তখন পুরো স্টেডিয়ামই দাঁড়িয়ে যায় চিৎকার দিয়ে। করতালি দিয়ে তারা অভিনন্দন জানায় নেইমারকে।
Advertisement
কিন্তু নেইমার নিজেকে মেলেই ধরতে পারলেন না রোস্তভ এরেনায়। সুইজারল্যান্ডের প্রায় প্রতিটি খেলোয়াড়েরেই টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো পুরো ম্যাচে ১০টি কঠিন ট্যাকলের শিকার হয়েছেন ব্রাজিল সুপার স্টার।
নেইমার যে প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টগুলোয় প্রতিপক্ষের কতটা টার্গেট, সেটা বোঝা গিয়েছিল ২০১৪ বিশ্বকাপেই। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার হুয়ান ক্যামিলো জুনিগা হাঁটুর চাপে কোমরের হাঁড়ই ভেঙে দিলেন নেইমারের। সোজা মাঠ থেকে চলে যেতে হয় তাকে হাসপাতালে। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্নও শেষ হয়ে যায় তখন।
চার বছর পর সেই নেইমার অনেক বেশি পরিণত এবং অনেক বড় তারকাও বটে। একাই একটি দলকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে অনেক দুর। এমনকি চ্যাম্পিয়ন করারও ক্ষমতা রয়েছে তার; কিন্তু নেইমারের ওপর থেকে প্রতিপক্ষের দৃষ্টিই সরানো যাচ্ছে না। এই দৃষ্টিতা নৃশংস। পৈচাশিক। খেলাই নষ্ট করে দেয় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা। নেইমারকে থামাকে কুৎসিত ফুটবলের আশ্রয় নেয় তারা।
Advertisement
ব্রাজিল তারকা যেই না বল পাবে, সঙ্গে সঙ্গে সুইজারল্যান্ড ফুটবলারের সংকল্প যেন, আঘাত করে তাকে মাটিতে ফেলে দিতে হবে। একে তো ইনজুরি প্রবণ। মাত্রই ডান পায়ের পাতায় অস্ত্রোপচার করিয়েছেন এবং সে থেকে সেরে ওঠার চেষ্টা করছেন; কিন্তু নেইমারের ওপর হামলে পড়ার ঘৃণ্য চেষ্টা করে সুইজারল্যান্ড ডিফেন্ডাররা ফুটবলের আসল সৌন্দর্যই নষ্ট করে দিয়েছেন।
ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সুইজারল্যান্ড কোচ ভ্লাদিমির পেতকোভিক এবং অধিনায়ক স্টিফেন লিচনস্টেইনার জানিয়েছিলেন, কিভাবে তারা ২৬ বছর বয়সী এই তারকাকে থামাবেন। তাদের একটাই চিন্তা ছিল, নেইমারকে যে করেই হোক অকেজো করে দিতে হবে।
সে লক্ষ্যই যেন পূরণ করলো সুইজারল্যান্ড ফুটবলাররা। ১৪ মিনিটেই নেইমারকে ডি বক্সের সামনে কঠিন ট্যাকল করে বসেন ভ্যালন বেহরামি। বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে নেইমারের পায়ের সঙ্গে পেঁচিয়ে তাকে ফেলে দেন। ৩১তম মিনিটে পেছন থেকে নেইমারকে আঘাত করেন সুইজারল্যান্ডের অধিনায়ক লিচস্টেইনার। ফলে তাকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি।
সুইজারল্যান্ডের গ্রানিত জাকা তো নেইমারকে আটকানোর জন্য তার প্যান্ট এবং শার্ট টেনে ধরেছেন। যে দৃশ্য এখন ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একজন খেলোয়াড়কে খেলতে না দেয়ার পরিকল্পনা থাকে প্রতিটি দলেরই। তবে ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড ম্যাচে নেইমারকে আটকানো জন্য সুইস ডিফেন্ডাররা যা করেছেন, তা রীতিমত নোংরামি। খেলার মূল স্পিরিটকেই নষ্ট করে দেয় এসব ঘটনা।
Advertisement
প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে নেইমারকে আটকানোর জন্য অনেক বেশি কঠোর ছিলেন সুইস ডিফেন্ডাররা। রেফারি সিজার রামোসও নেইমারকে রক্ষা করার কোনো পদক্ষেপ নেননি। একজন ফুটবলারকে মাঠে এভাবে একের পর এক ট্যাকল করে অকেজো করে দিচ্ছে, অথচ রেফারি সেগুলোকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেন না।
১০বার কঠিন ফাউলে মাত্র তিনজনকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন রেফারি। ৬৫ মিনিটে ফ্যাবিয়ান স্কারের পর ৬৮ মিনিটে নেইমারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ভ্যালন বেহরামি। পুরো ম্যাচে ফাউল হয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে ১০টিই কেবল নেইমারের বিরুদ্ধে।
১৯৯৮ সালে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে অ্যালান শিয়েরারকে এত বেশি ফাউল করা হয়েছিল। তার পর থেকে গত দুই দশকে কোনো ফুটবলারকে এতবেশি ফাউল করা হয়নি, যতটা করা হয়েছে নেইমারকে। শিয়েরারকে সেবার ফাউল করা হয়েছিল ১১ বার।
আইএইচএস/এমএস