খেলাধুলা

আইস দুর্গ ভাঙতে পারবে কি আর্জেন্টিনা!

ম্যারাডোনার হাত ধরে ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপ জয়। তারপর কেটে গেছে ৩২ বছর। ভাগদেবী খুব কাছে এসেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আর্জেন্টিনার উপর থেকে। দীর্ঘদিনের ফাইনাল খরা ঘুচিয়ে ২০১৪ সালের ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু জার্মানদের লক্ষ্যভেদে শেষ হয় যায় মেসি তথা আর্জেন্টিনার শিরোপা স্বপ্ন। আরো একটি বিশ্বকাপে মাঠে নামার অপেক্ষায় মেসির আর্জেন্টিনা। এবার তাদের সামনে নবাগত আইসল্যান্ড।

Advertisement

এক সময় যাদের বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনাই ক্ষীণ হয়ে এসেছিল তারাই এখন বিশ্বকাপে। বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে মেসির হ্যাটট্রিকে ৩-১ গোলের জয়ে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু এরপরেও প্রীতি ম্যাচে দেখা গেছিল আর্জেন্টিনার দুর্বলতা। ইতালির বিপক্ষে ম্যাচ জিতলেও স্পেনের বিপক্ষে ৬-১ গোলে ধরাশায়ী হয় সাম্পাওলির দল। মেসি সেই ম্যাচ না খেললেও আর্জেন্টিনার দলের দুর্বলতাগুলো বেশ চোখে পড়ে সবার। সেগুলো কাটিয়ে উঠেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করে মেসিরা।

তবে বিশ্বকাপ শুরুর আগে বেশ বড়সড় ধাক্কা খায় আর্জেন্টিনা। দলের প্রধান গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো চোট পেয়ে ছিটকে যান বিশ্বকাপ থেকে। তার অবর্তমানে ডাক পান গুজম্যান। এদেরকে নিয়ে কোচ হোর্হে সাম্পাওলি টালমাটাল আর্জেন্টিনা দলকে সামলানোর চেষ্টা করে আসছেন।

বিশ্বকাপের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে হাইতির বিপক্ষে ৪-০ গোলের বড় জয় কিছুটা স্বস্তির বয়ে আনলেও দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে বেশ ঝামেলাই পোহাতে হয় আর্জেন্টিনাকে। ইসয়ারেয়েলের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিক্ষোভের জেরে ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য হয় আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশন। ফলে একটি ম্যাচ না খেলেই রাশিয়ায় পা রাখে আর্জেন্টিনা দল।

Advertisement

রাশিয়ায় এসে আবারো ধাক্কা খায় আর্জেন্টিনা। দলের মিডফিল্ডের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারি ম্যানুয়েল লানজিনি ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান। তার পরিবর্তে সুযোগ পান এনজো পেরেজ। পাল্টাতে হয় সাম্পাওলির পরিকল্পনাকেও। ৪-২-৩-১ ফরমেশনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন আর্জেন্টাইন কোচ।

স্ট্রাইকাদের ফর্ম নিয়েও বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাম্পাওলিকে। হিগুয়াইনের হাইতির বিপক্ষে পারফরম্যান্স খুব বাজে হলেও ওই ম্যাচেই বদলি হিসেবে নেমে গোল করে সার্জিও আগুয়েরো। ম্যারাডোনার জামাই হিসেবে খ্যাত ম্যান সিটির এই তারকা সদ্যই ইনজুরি থেকে উঠে অনুশীলনেও ঘাম ঝড়াচ্ছেন। তাই শুরুর একাদশে তাকে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

অন্যদিকে, সাড়ে তিন লাখ জনসংখ্যার দেশ আইসল্যান্ডের হঠাৎ করেই ফুটবল বিশ্বে উত্থান। ২০১৪ সালে খুব কাছে গিয়েও বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া হয়নি তাদের। কিন্তু নিজেদের প্রমাণের জন্য তারা বেছে নেন ২০১৬ ইউরোকেই। গ্রুপ পর্বে রোনালদোর পর্তুগালকে টপকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে। সেখানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আইসরা।

তাদের সাফল্য যাত্রা অব্যাহত ছিল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও। নিজেদের গ্রুপে ১৯৯৮ সালের সেমিফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়াকে টপকে গ্রুপ সেরা হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। সেই অসাধ্য কাজটিই করে দেখিয়েছে আইসল্যান্ড। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়াই যাদের কাছে একসময় স্বপ্ন ছিল তারাই এখন আর্জেন্টিনাকে হারানোর ছক কষছে।

Advertisement

দলে তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার ছড়াছড়ি। মিডফিল্ডার গিলফি সিগার্ডসন খেলে থাকেন ইংলিশ ক্লাব এভারটনে। তিন মাসের ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন জাতীয় দলে। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে আশানরূপ ফল পায়নি আইসল্যান্ড। মেক্সিকো, পেরু ও নরওয়ের কাছে হেরেই রাশিয়ায় পা রাখে আইসরা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আইসদের অনুপ্রেরণা হতে পারে ১৯৯০ সালের ক্যামেরুন। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার উদ্বোধনী ম্যাচে ইতালিতে হওয়া সেই বিশ্বকাপে ১-০ গোলে হারিয়েছিল আফ্রিকান দেশটি। এরপর ২৮ বছরে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারেনি আর্জেন্টিনা। কিন্তু আইসদের খেলোয়াড়দের উচ্চতা নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে আর্জেন্টিনাকে। আইসল্যান্ডের সেই দুর্গ ভাঙ্গতে পারবে কি আর্জেন্টিনা!

আরআর/এমএস