অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, গত ৫ তারিখ রোজার কারণে খালেদা জিয়ার শরীরের সুগারের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। ওনি মাথা ঘুড়ে পড়ে যায়নি, পড়ে গেলে মিডিয়ায় আসতো। এতদিন পরে তারা আদালতের সহানুভূতি নেয়ার জন্য এসব অভিযোগ করছে। ডাক্তাররাও রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছে।
Advertisement
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার নাশকতার এক মামলার শুনানি শেষে রোববার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুবে আলম বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে যে বক্তব্য আদালতে (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) রেখেছেন, আমি জানি এ বিষয়টি নিয়ে তারা নানারকম মিডিয়াকে মাতাবেন, অনেক কিছু বলবেন। তাই আমি আদালতে যাওয়ার আগে আইজি প্রিজনের সঙ্গে আলাপ করেছি। আইজি প্রিজন যে তথ্য আমাকে দিয়েছেন, গত ৫ জুন ইফতারির ঠিক আগে আগে উনার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল। সেই জন্য তিনি যে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, এটা ঠিক না বা অজ্ঞান ছিলেন, এটাও ঠিক না। সুগার লেভেল পড়ে যাওয়ার পরে উনি দাঁড়ানো থেকে ঘুরে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চকলেট খাইয়ে ঠিক করা হয়েছিলো। এই বয়সে যার ডায়াবেটিক আছে তার সুগার লেভেল তো সারাদিনের পরে একটু এদিক ওদিক হতেই পারে। ‘আর এটা আমার কাছে বিশেষ রকম ব্যাপার মনে হয়, আজ একটি মামলার তারিখ আর তার আগের দিন গতকাল তার চিকিৎসকরা কারাগারে গেলেন। আর এসেই এমন একটা প্রেস কনফারেন্স করে ফেললেন যে, তিনি অজ্ঞান ছিলেন। তিনি যদি অজ্ঞান হতেন তাহলে নিশ্চয়ই আইজি প্রিজনের কাছে রিপোর্ট থাকতো, সিভিল সার্জন জানতো। এগুলো নিয়ে তারা একটি জনমত সৃষ্টির চেষ্টার করছেন। উনি অজ্ঞান হননি, উনার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিলো। এই হলো আসল কথা।’ ডাক্তার বলছে মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে। এ সম্পর্কে অ্যাটর্নি বলেন, ‘এটাও ঠিক না। তিনি অসুস্থ হলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে স্ক্যান করা হতো। তার চিকিৎসায় সরকার কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, কোন আসামির ব্যাপারে আপনারা দেখেছেন ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের জেলে যেতে দেয়া হয়? কিন্তু তারা যাতে কোনোরকম সরকারকে দোষারোপ করতে না পারে এজন্যই সরকার বেশ কয়েকবার তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের জেলে যেতে অনুমতি দিয়েছে।’ মাহবুবে আলম বলেন, দুঃখজনক ব্যাপার হলো, চিকিৎসকরাও যদি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান এবং এ ধরনের কথা বলেন তিনি অজ্ঞান হননি, তারা বলছে ৭/৮ মিনিট অজ্ঞান ছিলেন, এটা দুঃখজনক। ‘আজকে মামলার শুনানি অথচ ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা গতকাল গেলো তার সঙ্গে দেখা করতে। ৫ জুন যদি তিনি অজ্ঞান হতেন তাহলে সেদিনই বিষয়টি মিডিয়াতে আসতো। কিন্তু তা আসেনি। আজ ১০ জুন। এ বিষয়টি নিয়ে ঘোলাটে করার চেষ্টা হচ্ছে। একটা বিভ্রান্ত তথ্য দেয়া হচ্ছে। আদালতের সহানূভুতি পাওয়ার জন্যই তারা (খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা) এমন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।’
এর আগে শনিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর তার চিকিৎসকরা জানান, খালেদা জিয়া ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ করেছিলেন। কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে কারা ফটকের সামনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
Advertisement
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত ৫ জুন দুপুর ১টার দিকে খালেদা জিয়া হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান। ৫-৭ মিনিট পর তার জ্ঞান ফিরলেও ওই সময়ের কথা কিছুই মনে করতে পারছেন না। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যতটুকু বুঝতে পেরেছি তার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে। আগামীতে বড় ধরনের স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেন আদালত। বর্তমানে তিনি নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
এফএইচ/আরএস/জেএইচ/এমএস
Advertisement