মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘের স্বাক্ষরিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রাখাইনের সংখ্যালঘু এই মুসলিমরা। তারা বলেছেন, দেশটিতে তাদের নাগরিকত্ব পাওয়া মূল দাবি হলেও চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে এ ব্যাপারে কোনোকিছুই জানানো হয়নি।
Advertisement
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই বলেছেন, ‘তারা নিজ বাড়িতে ফেরার জন্য আকুল, কিন্তু তারা মিয়ানমারে সুরক্ষা ও নাগরিকত্ব পাবেন কি-না তা নিয়ে ভয়ের কারণে ফিরতে সাহস পান না।’
গত বুধবার মিয়ানমার ও জাতিসংঘের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী দেশটিতে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গার অনেকেই মিয়ানমারে ফিরতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারের জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন এই রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চুক্তিতে রোহিঙ্গারা স্বাগত জানালেও মিয়ানমারের সরকারের কাছ থেকে বছরজুড়ে ফাঁকা প্রতিশ্রুতি শুনে আসছেন তারা।
Advertisement
গত বছরের রাখাইনে নৃশংস সেনা অভিযানে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের একজন মোহাম্মদ তৈতেব আলী। তিনি বলেন, মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রথমে নাগরিকত্ব দিতে পারে নেইপিদো।
কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে হাঁটতে হাঁটতে আলী বার্তাসংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমরা যদি দেখি এবং নিশ্চিত হতে পারি যে, তারা নাগরিকত্ব উপভোগ করছেন, তবেই আমরা ফিরে যাবো।’
অনেকেই বলেছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ও সহিংসতায় হারানো সব সম্পত্তি ফিরে পাচ্ছেন এমন ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা চুক্তিতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
মোহাম্মদ সৈয়দ নামের অপর এক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, ‘যখন পুরো বিশ্ব এটি দেখবে, আমরা যখন এটি দেখতে পাবো, কেবল তখনই আমরা ফিরে যাবো।’
Advertisement
মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, সম্মান এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রত্যাবাসনের নীতিমালা প্রস্তুত করতে একটি সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করা হবে। তবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করার ব্যাপারে কোনো আলোচনা স্থান পায়নি এই চুক্তিতে।
এদিকে, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের গড়ি বৃদ্ধি করবে এই চুক্তি। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সন্দেহ, অনেক রোহিঙ্গার ফিরে আসা নিশ্চিত করতে যথেষ্ঠ ব্যবস্থা নেবে না নেইপিদো। এছাড়া ফেরার পর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
সূত্র : এপি।
এসআইএস/আরআইপি