সৈকত নন্দী ও প্রতীক মজুমদার। দু’জনই স্কুলের সহপাঠী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বন্ধু হবার সুবাদে সৈকত বাড়ি নির্মাণের জন্য বাবার টাকা প্রাপ্তির কথা বন্ধু প্রতীককে জানিয়েছিল। আর সেই বন্ধুত্বই জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াল সৈকতের জীবনে! হারাতে হলো বাবাকে। কোনো সিনেমার কাহিনী নয় এটি। একেবারে বাস্তব! সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীতে চাঞ্চল্যকর ব্যাংক কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা।
Advertisement
বুধবার (৩০ মে) দিবাগত রাতে নগরের ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার সিরাজউদ্দীনপুর এলাকার ডা. উজ্জ্বল চন্দ্র মজুমদারের ছেলে প্রতীক মজুমদার (১৬), চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি নানুপুর এলাকার তপন রায় চৌধুরীর ছেলে জিকু রায় চৌধুরী (১৭) এবং পটিয়ার ভাটিখাইন এলাকার অজিত বড়ুয়া চৌধুরীর ছেলে জয় বড়ুয়া চৌধুরী (১৯)। এদের মধ্যে প্রতীক মজুমদার নগরীর একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র, জিকু রায় চৌধুরী সদ্য এসএসসি পাশ করেছে এবং জয় বড়ুয়া চৌধুরী এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পরিদর্শক (মেট্রো) সদীপ কুমার দাশ জাগো নিউজকে জানান, নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা সজল নন্দীর ছেলে সৈকত নন্দী এবং প্রতীক মজুমদার একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। সে সুবাদে তারা পরস্পর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সম্প্রতি সজল নন্দী গৃহনির্মাণ বাবদ ব্যাংক থেকে ২৯ লাখ টাকা ঋণ পান। সৈকত এক দিন কথাচ্ছলে বিষয়টি প্রতীককে জানায়। সৈকতের কাছ থেকে টাকার বিষয়টি জানার পর, সেই টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে প্রতীক। প্রথমে সে বিষয়টি তার অপর দুই বন্ধু জয় ও জিকুকে জানায়। তারপর তিনজন মিলে সেই ২৯ লাখ টাকা লুটের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা নতুন ছুরিও কেনে।
Advertisement
ঘটনার দিন (২৭ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রতীক, জয় ও জিকু ওই বাসায় যায়। এ সময় তারা সৈকতের সাইকেল কেনার কথা বললে সজল নন্দী বিশ্বাস করে তাদের বাসায় ঢুকতে দেন। তবে সৈকত বাসায় ছিল না এবং এর আগেই বাসা থেকে সজলের স্ত্রী রুমা নন্দী কর্মস্থলের উদ্দেশে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান সদীপ কুমার দাশ।
তিনি আরও জানান, বাসায় প্রবেশের পরপরই পরিকল্পিতভাবে সাইকেলের বিষয় নিয়ে সজলের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু করে প্রতীক। তখন জিকু সজলের মাথায় তালা দিয়ে আঘাত করে। সজল চিৎকার দিলে প্রতীক তার মুখ চেপে ধরে। জিকু ও জয় মিলে গামছা দিয়ে সজলের পা বেঁধে ফেলে। এরপর জয় ছোরা দিয়ে সজলকে গলা কেটে হত্যা করে।
এরপর তিনজন মিলে সজলের পকেট থেকে চাবি বের করে আলমারি খুলে ২৯ লাখ টাকা খোঁজ করে। টাকা না পেয়ে তারা ছোরা ও চাবি নিয়ে চলে যায়। পরে ব্যবহৃত ছোরা এবং ব্যাংকের চাবি পুকুরে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। পুকুরে তল্লাশি করে ছোরাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ, যোগ করেন পরিদর্শক সদীপ।
পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সদীপ কুমার দাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হলো প্রতীক মজুমদার। সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরাটি নগরীর বন্দর থানার মাইলের মাথা এলাকায় হাজী শামসুল হকের পুকুরে পাওয়া গেছে। তবে ব্যাংকের ক্যাশের যে চাবি আসামিরা ওই বাসা থেকে নিয়ে গিয়েছিল, সেগুলো তোড়া থেকে খুলে আলাদা করে পুকুরে ফেলে দেয়ায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘সজল নন্দী তার নামে ব্যাংক থেকে ২৯ লাখ টাকা লোন পাস করালেও সে টাকা ব্যাংক থেকে তিনি তোলেন নি।’
উল্লেখ্য, গত ২৭ মে বেলা ১১টার দিকে নগরীর বন্দর থানার মধ্যম হালিশহর এলাকায় বাসা থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা সজল নন্দীর (৪৮) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সজল নগরীর সল্টগোলা এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত রুপালী ব্যাংকের শাখায় ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পীও ছিলেন সজল নন্দী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার জৈষ্ঠ্যপুরা গ্রামে।
আবু আজাদ/এসআর/পিআর