দেশজুড়ে

নিহত শান্তিরক্ষী আরজানের বাড়িতে শোকের মাতম

জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনের আওতায় মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে দায়িত্ব পালনের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সৈনিক আরজান হাওলাদারের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের চরব্রাহ্মনদী গ্রামে।

Advertisement

ছেলেকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরজানের বৃদ্ধ মা রহিমা বেগম। তার মৃত্যুতে একমাত্র সাড়ে ৪ বছরের ছেলে ফাহিম, স্ত্রী চায়না আক্তার অসহায় হয়ে পড়েছেন। মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী-সন্তানের কান্না থামাতে পারছে না কেউ। আরজানের নানা স্মৃতির কথা বলতে বলতে আহাজারি করছেন স্ত্রী চায়না বেগম। তারা দ্রুত আরজানের মরদেহ দেশে ফেরত আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আরজানের বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড়। ভিড়ের মাঝে চলছে শোকের মাতম। বাড়ির সবাই অঝোরে কাঁদছেন। তাদের সঙ্গে চোখের জল ফেলছেন এলাকাবাসীও।

আরজানের স্ত্রী চায়না আক্তার বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কথা হয় আরজানের সঙ্গে। তিনি ওই সময় গাড়িতে শহরে যাচ্ছিলেন। এরপর আর কথা হয়নি। অনেক স্বপ্ন ছিল আরজানের। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।

Advertisement

জানা যায়, স্থানীয় সদরপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০০৪ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন সৈনিক আরজান হাওলাদার। চাকরিরত অবস্থায় তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাস করেন। চাকরিতে যাওয়ার পর বাবা করিম হাওলাদারকে চিরদিনের জন্য হারান আরজান। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরেছিলেন তিনি।

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের চরব্রাহ্মনদী গ্রামের মৃত করিম হাওলাদারের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে আরজান মেজো। ২০১০ সালের মে মাসের ৩ তারিখে সদরপুর উপজেলার সতেররশি গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে চায়না আক্তারকে বিয়ে করেন আরজান। দাম্পত্য জীবনে তাদের ফাহিম নামের সাড়ে ৪ বছরের একমাত্র ছেলে রয়েছে।

তিনি রংপুর সেনানিবাসে ৩৪ ইস্ট বেঙ্গল (ফরিদপুর) কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে গত ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর এক বছরের জন্য জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে যান আরজান।

আরজানের স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শান্তি রক্ষা মিশনে গিয়ে ভালোই কাটছিল তার। প্রায় সময় মা, স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা হতো আরজানের। শান্তি রক্ষা মিশনে যাওয়ার ব্যাপারে আরজানের স্বপ্ন ছিল সংসার ও সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে। গত রোববার সেনা সদর দফতরের একটি ফোনে সবকিছু এলামেলো হয়ে যায় সৈনিক অরজানের পরিবারের। তারা জানতে পারেন, আরজানসহ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সামরিক ও অসামরিক যানবাহনের একটি কনভয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে কনভয়ের কাঠ বহনকারী একটি ভারী যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে সৈনিক আরজানসহ দুইজন মারা যান।

Advertisement

সদরপুর উপজেলার সদর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল জানান, ছয় মাস আগে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে যান আরজান। তিনি ৩৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সৈনিক পদে চাকরি করতেন।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও শোকাহত পরিবারের পাশে স্থানীয় প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে কনভয়ের কাঠ বহনকারী একটি ভারী যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা কবলে পড়লে সৈনিক আরজান হাওলাদার, ৩৪ ই বেঙ্গল (ফরিদপুর) ও সৈনিক (টিএ) মো. রিপুল মিয়া, ৩৫ ডিভ লোকেটিং ব্যাটারি আর্টিলারি (রংপুর) নিহত হন। এ সময় আহত হন সৈনিক মো. জামাল উদ্দিন মোল্লাহ, ৩৪ ইস্ট বেঙ্গল (ফরিদপুর) ও সৈনিক মো. মজাহিদুল ইসলাম, ৩৬ এডি রেজিমেন্ট আর্টিলারি (নওগাঁ)। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য মধ্য অফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের রাজধানীতে পাঠানো হয়।

আরএআর/এমএস