দেশজুড়ে

স্মৃতিভ্রষ্ট বাবার সঙ্গে ‘প্রতারণা’, বিএনপি নেতার নামে মামলা

কক্সবাজারে ভূমিদস্যু হিসেবে আলোচিত বিএনপি নেতা আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এবার ৯৭ বছর বয়সী স্মৃতিভ্রষ্ট বাবার সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেছেন তার ছোটো ভাই। মামলায় তার অপকর্মের সহযোগী হিসেবে চট্টগ্রামের রুবেল চৌধুরী অভি নামে এক ডেভেলপার ব্যবসায়ীকেও আসামি করা হয়েছে।

Advertisement

গত ২ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কক্সবাজার সদর আদালতে দায়ের করা মামলার  (সিআর-১৬২৫/২০২৪) বিষয়টি প্রায় দেড়মাস পর প্রচার পেলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দিয়েছেন আদালত, এমনটি জানিয়েছেন মামলার আইনজীবী আবুল আলা জাহাঙ্গীর।

অভিযুক্ত আজিজুর রহমান (৬০) কক্সবাজার পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের টেকপাড়ার মাঝিরঘাট এলাকার ফয়েজ আহমদ চৌধুরীর ছেলে। তিনি অধ্যাপক আজিজ নামে পরিচিত এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মামলার বাদী ফয়েজ আহমদ চৌধুরীর ছেলে ছাদেকুর রহমান।

Advertisement

অপর আসামি মো. রুবেল চৌধুরী অভি (৩৯) চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ পশ্চিম ষোলশহর নাজিরপাড়ার কোরবান আলী সওদাগর বাড়ির দুলাল চৌধুরীর ছেলে।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, তাদের বাবার বয়স প্রায় ৯৭ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্মৃতিবিভ্রাটসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন এবং চিকিৎসাধীন আছেন। কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের অতিমূল্যবান বিপুল ভূ-সম্পদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। আজিজুর রহমান বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে ১৯৯০ সাল থেকে বাবার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জমিজমা দেখভাল ও খাজনা, ভাড়া আদায় করে এসেছেন। এতদিন তিনি যেভাবে যত টাকা দিয়েছেন তাতে কেউ কিছু বলেনি। গত বেশ কিছু সময় ধরে বাবা তার কাছে ব্যবসার হিসাব চাইলে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এরপর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবার অসুস্থতার সুযোগে গোপনে ২০২৪ সালের ১০ মার্চ (১৩৬৬/২৪) একটি হেবা দলিল মূলে বসতভিটা থেকে দশমিক শূন্য দুই শতক জমি নিজের নামে লিখে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের ২১ অক্টোবর বাবার নামীয় জমিতে বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট ও আবাসিক ভবন করতে মামলার দ্বিতীয় আসামির সঙ্গে অসম চুক্তি (৫০৩৯/২০২৪) এবং অপ্রত্যাহার যোগ্য ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ (৫০৪০/২৪-আমমোক্তার নামা) সম্পাদন করেন।

আরও উল্লেখ করা হয়, বিষয়টি ২০২৪ সালের নভেম্বরে জানতে পেরে স্মৃতিভ্রষ্ট বাবার কাছ থেকে নেওয়া হেবা দলিল ফেরত ও অসম চুক্তি বাতিল করতে বলা হয়। সঙ্গে বিগত দেড় যুগের পারিবারিক ব্যবসার হিসাব নিকাশ দাবি করা হলে বাদীকে উল্টো হত্যার হুমকি দেন অভিযুক্তরা।

আইনজীবী আবুল আলা জাহাঙ্গীর বলেন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে একজন স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষের কাছ থেকে হেবা ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করানো আইনসিদ্ধ নয়। এটা সুস্পষ্ট প্রতারণার শামিল। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে প্রতিবেদন দিতে ডিবির ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

মামলার বাদী ছাদেকুর রহমান বলেন, আমার ভাই শিক্ষাজীবনে শিবির করতেন। সুবিধার খাতিরে একেক সময় একেকজনের অনুসারী হয়ে বিএনপি করে আসছেন। মাঝে এবি পার্টিও করে স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সিদ্ধহস্ত তিনি। এসবের আড়ালে নানা জায়গায় নানাভাবে জমি দখল করে শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। এখন সহোদরদের নিঃস্ব করে ঠকানোর পথে হাঁটছেন। তিনি কলাতলীর কারাগার এলাকায় কবরস্থানের জমিসহ নানা জনের জমি দখল করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন। এসবে ঘৃণা হলেও ভাই হিসেবে কিছুই বলতে পারিনি। চন্দ্রিমা আবাসনের দায়িত্বে থাকাকালে দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এরপরও সাবেক আমলার জামাতা হিসেবে পেয়েছেন প্রশাসনিক সহযোগিতা। আর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে আবারো বিএনপিতে সক্রিয় হয়ে ওঠা আজিজ এবার পারিবারিক শত কোটি টাকার সম্পত্তি দখলে নিতে রাজনৈতিক পরিচয়কে কৌশলে কাজে লাগাচ্ছেন।

মামলার সাক্ষী আতিকুর রহমান বলেন, বড় ভাইয়ের কারণে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমরা চার ভাই এক বোনের মাঝে, বোন ও এক ভাই প্রবাসে। এখানে তিন ভাই থাকলেও বড় ভাই আজিজ পরিবারের সব সম্পদ ভোগ করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপি নেতা অধ্যাপক আজিজুর রহমান বলেন, এই যাবৎ কালে ঘরের সমস্ত ভরণ পোষণ, ব্যাংক-হাউজ বিল্ডিংয়ের দায় এবং চিকিৎসা ব্যয় আমি বহন করি। যার প্রেক্ষিতে বাবা আমাকে দুই শতক (১ গন্ডা) জমি স্বেচ্ছায় হেবা করেন। ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি করেন বাবা সজ্ঞানে, সবার কল্যাণের জন্য। কক্সবাজারের প্রেক্ষিতে চুক্তি অসম হলে যাচাই করার সুযোগ আছে। আমি নিজে ঠকে ঠকে পরিবারকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। আমি আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এএসএম