নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নাগালের মধ্যে রাখা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। মানুষজন এমনিতেই নানা সংকটে আছে। তারওপর হঠাৎ হঠাৎ দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে সেটা ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবেই দেখা দেয়। এটা ঠিক মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ব সরকারের হাতে খুব একটা নেই। তবে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ যদি ঠিক রাখা যায় তাহলে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট খুব একটা সুবিধা করতে পারে না।
Advertisement
এ জন্য টিসিবিকে কার্যকর করে একটি প্যারালাল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করার কথা বার বার বলা হলেও কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। এ জন্য সিন্ডিকেট চক্রের পোয়াবারো। তারা যে কোনো উসিলায় যে কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সামনে রমজান মাস। এ সময় বিশেষ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি রাখতে হবে যেন রমজানে এসব পণ্যের সরবরাগে ঘাটতি না থাকে। আর দামও থাকে মানুষজনের নাগালের মধ্যে।
রমজান মাসকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সেখানে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রস্তাবনা এসেছে যা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে পারে। ওই বৈঠকে আসন্ন রমজান মাসে পণ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত রোববার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধান অতিথি হিসেবে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, রমজান এলেই পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের নানা ধরনের অপতৎপরতা শুরু হয়। ইফতার পার্টির নামে চলে চাঁদাবাজি। এতে ব্যবসায়ীদের প্রচুর অর্থ খেসারত দিতে হয়। বাড়তি এ টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকেই তুলে নেয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাই রমজান মাসে পুলিশের অপতৎপরতা, দলীয় নেতা ও মাস্তানদের চাঁদাবাজি বন্ধ করার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
তারা বলেন, রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি করে যানজটের সৃষ্টি করা হয়। সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছানো যায় না। ফলে দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ স্বাভাবিক রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম বাড়বে না। এ জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে।
পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন নয়। কিছুসংখ্যক পুলিশের এই অসাধু কাজের জন্য গোটা পুলিশ বাহিনী সমালোচিত হয়। তাই দুষ্টের দমন করতে হবে। এছাড়া পণ্যে চাঁদাবাজির মাশুল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদেরই দিতে হবে। অন্যদিকে সিন্ডিকেট ধারীরা ওঁৎ পেতে থাকে বিশেষ মৌসুমের সুযোগ নেওয়ার জন্য। তারা যাতে সেই সুযোগ নিতে না পারে এ জন্য বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তাছাড়া বাজারে টিসিবির মাধ্যমে পণ্যের সরবরাহও ঠিক রাখতে হবে। ব্যবসায়ীদের মুনাফালোভী মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে শুধু মুনাফার লোভ কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে সরকার, ব্যবসায়ীমহলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ভোক্তাস্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
এইচআর/আরআইপি
Advertisement