দেশজুড়ে

রাজশাহীতে আম উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধির হাতছানি

আমের রাজধানী খ্যাত বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে এবার আমের উৎপাদন বাড়বে। বাগানের পরিসর এবং এখন পর্যন্ত বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এমন আভাস দিচ্ছে কৃষি দফতর। তবে শঙ্কা ঘুরে ফিরেই আসছে রফতানিযোগ্য আম চাষিদের কাছে। কিন্তু তা উড়িয়ে দিয়ে আম রফতানি বৃদ্ধিরও আভাস দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

Advertisement

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ বিভাগ আম রফতানি বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষকদের মধ্যে ব্যাগিং পদ্ধতিতে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনের আগ্রহ বাড়াতে বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বিভাগটি। এছাড়া কৃষকের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রেও বিভাগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফলে এবার আম রফতানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তবে পরিস্থিতি যাই হোক, গত বারের লোকসান কাটাতে এবার আরও ব্যাপকভাবে ফ্রুটব্যাগে আম চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা। স্থানীয় বাজারে চড়া দাম পাওয়ায় এমন আগ্রহ তাদের।

কয়েকবছর ধরেই ফ্রুটব্যাগে আম উৎপাদন করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকার আমচাষি তসলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, গত মৌসুমে তিনি ফ্রুটব্যাগে আশ্বিনা আম উৎপাদন করেছিলেন। ফলনও হয়েছিল ভালো। বারবার কীটনাশক প্রয়োগের ঝামেলা না থাকায় উৎপদন খরচ ছিল অনেক কম।

Advertisement

সর্বশেষ প্রতিমণ আম বিক্রি করেছেন ২৪ হাজার টাকায়। এবার তার দেখাদেখি অন্যান্য চাষিরাও ফ্রুটব্যাগে আম উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাদের অধিকাংশই গত বছর রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন করে লোকসানে পড়েছেন। লোকসান কাটাতে এবারও ফ্রুটব্যাগেই ভরসা রাখছেন চাষিরা।

বিষয়টি স্বীকার করেন রাজশাহী অ্যাগ্রোফুড প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক। তবে এবার আম রফতানি নিয়ে গতবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না তিনি।

জানতে চাইলে আনোয়ারুল হক বলেন, গত বছর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ দফতরের খামখেয়ালীতে রাজশাহীর রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার তারা চান উৎপাদিত রফতানিযোগ্য আমের শতভাগ রফতানি। এজন্য আইনি বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তি চাচ্ছেন তারা। আম রফতানিকারকরা যেনো ভোগান্তিতে না পড়েন সেজন্য উৎস থেকেই আম রফতানিও সুযোগ চাচ্ছেন।

তবে বিষয়টি তারা নজরে রাখছেন জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত শুধু জেলার বাঘা উপজেলার ২২ জন চাষি আম রফতানি করতে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। আম রফতানি করতে চাইলে কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তিবদ্ধ হতে চাষিদের পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

Advertisement

এদিকে এ অঞ্চলের আমচাষিরা জানান, এখনও আবহাওয়া অনুকূলেই রয়েছে। বাগানে বাগানে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে আমের গুটি। গুটি ঝরেপড়া রোধে আগেভাগেই বাগান পরিচর্যায় নেমেছেন চাষিরা।

জানতে চাইলে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, এখন বাণিজ্যিক আম চাষ হচ্ছে। চাষিরা বছরজুড়েই বাগান পরিচর্যা করছেন। ফলে এখন আর অফইয়ার-অনইয়ার নেই। এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলের আবহাওয়া আমের অনুকূলেই রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে বাম্পার ফলন হবে আমের।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কয়েক বছর ধরেই দেশে আমের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মোট সাড়ে ১২ লাখ টন আম উৎপাদন হয়। চলতি অর্থবছর তা ১৪ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে রাজশাহীতেই তিন লাখ টনের উপর উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে আম উৎপাদন হচ্ছে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বৃহত্তর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত ৭ বছরে এ অঞ্চলে আমের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।

উৎপাদন ছাড়িয়ে গেলেও গত অর্থবছরে সেইভাবে গতি পায়নি আম রফতানি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে ৩ লাখ ২৪ হাজার কেজি আম সরবরাহ করে বাংলাদেশ। কিন্তু রাজশাহীর রফতানিযোগ্য ১৫ হাজার টনের মধ্যে রফতানি হয়েছে মাত্র ২৩ টন।

এ বিষয়ে উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মো. আজহার আলী বলেন, আমাদের দেশের আম মূলত ইউরোপের দেশগুলোতে রফতানি হচ্ছে। সেখানকার বাজার অতি সংবেদনশীল হওয়ায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বালাইমুক্ত নিরাপদ আম উৎপাদন ও রফতানি মনিটরিং কার্যক্রম চলমান।

এরই মধ্যে আম চাষি ও রফতানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষকের আগ্রহ বাড়ায় চলতি অর্থবছরে আম রফতানি কয়েক গুণ বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/আরআইপি