বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকার প্রধানের আন্তরিকতায় শ্রমিক নিয়োগসহ বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধ হবার সুযোগ দিয়েছে দেশটি। আর এ সুযোগ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের জুন মাসে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার বাংলাদেশি দূতাবাসে আসছেন পাসপোর্ট ইস্যু করতে ও অন্যান্য সেবা নিতে।
Advertisement
তবে সুবিধাবাদীরা নানা অপতৎপরতা চালিয়ে খর্ব করছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি প্রবাসীরা দাবি জানিয়েছে।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অনেক বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াই জাহাজে করে প্রবেশ করেছে। এখন তারা বৈধ হতে দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট নিচ্ছেন। তবে এ সুযোগে দালাল ও সুবিধাবাদীরা দূতাবাসের নাম করে অসহায় বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। একই সঙ্গে তারা দূতাবাসের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আর এ অপতৎপরতায় লিপ্ত সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মূল্যায়নে বাংলাদেশ দূতাবাস আগের চেয়ে ভালো সেবা দিচ্ছে। এছাড়া সরাসরি সেবা পেয়ে প্রবাসীরাও ব্যাপক খুশি হচ্ছে। তবে দূতাবাস এলাকায় দালালদের দৌরাত্ম্য এবং নানামুখী অপচেষ্টায় বিরক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল এবং কিছু সংবাদপত্র ও ফেসবুকের মাধ্যমে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ দূতাবাস সম্পর্কে অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশে মালয়েশিয়া সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ ধরনের খবর প্রকাশ করায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশকে খাটো করা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে এ ধরনের অপপ্রচার রোধে কঠোর হচ্ছে দূতাবাস ও মালয়েশিয়া সরকার।
এদিকে মালয়েশিয়াতে বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসীদের সেবার মান বৃদ্ধিতে যখন বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন ঠিক তখনই একটি স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে হাইকমিশনের মানসম্মান ভুলণ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে একটি মহল। ফলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেও সুবিধা করতে না পারায় সর্বশেষ প্রবাসী জহিরুলকে নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে একটি অনলাইন মিডিয়া।
এদিকে, প্রবাসী জহিরুলকে নিয়ে মনগড়া সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা। তথ্য অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে জহিরুলের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হলে বের হয়ে আসে আসল রহস্য। এ সময় জহিরুল সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমার পাসপোর্ট সমস্যার বিষয় নিয়ে কোনো পেপার-পত্রিকা বা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো রকম আলাপ-আলোচনা হয়নি। যদি কেউ আমার নাম ব্যবহার করে হাইকমিশনের বিরুদ্ধে নিউজ করে থাকলে আমি ক্ষমা প্রার্থী।
Advertisement
আর হাইকমিশনের কোনো ব্যক্তি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। আমি হাইকমিশন থেকে বের হওয়ার সময় কমিউনিটির রাজনৈতিক কয়েকজন কর্মী হানিফ, মাহাবুব আমার পাসপোর্টের স্লিপের ছবি নিয়ে তারা রাজনৈতিক ফায়দার জন্য আমার নাম ব্যবহার করেছে মর্মে জহিরুল দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
এ বিষয়ে হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার ফার্স্ট সেক্রেটারি মসিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জহিরুলের পাসপোর্টটা নিয়ে অনেক কাহিনী হয়ে গেছে। এমন কোনো দালাল নেই যে তার কাছে সে (জহিরুল) যায়নি। ভিসা জটিলতার কারণে আমরা তার জন্য ঢাকায় ফোন করে দ্রুত পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা করেছি। অথচ আমাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করছে।’ সংঘবদ্ধ সুপরিকল্পিত অপপ্রচার করে দূতাবাসের মর্যাদা নষ্ট করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের ছক কষছে সুবিধাবাদীরা। দূতাবাসে প্রতিদিন ৩/৪ হাজার লোকের সেবা প্রদানের মতো কঠিন কাজটি গত দেড় বছর নিয়মিত করে আসছে সেখানে একটি সিন্ডিকেট গ্রপ এটা নষ্ট করার অপচেষ্টায় আছে।
তিনি বলেন, ‘যথা সময়ে তার পাসপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি। একজনের পাসপোর্ট অন্যজনকে দেয়ার প্রশ্নই আসে না।’ ৫ এপ্রিল ঢাকা থেকে পাসপোর্ট এসেছে এবং ৬ এপ্রিল শুক্রবার জহিরুলের পাসপোর্ট প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সেবা নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা দূতাবাসের নজরে এসেছে।
প্রতিদিন অনেক মানুষ দূতাবাসে ট্রাভেল পারমিট ও নতুন পাসপোর্টের আবেদনসহ কন্স্যুলার সেবা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে অনেকের পাসপোর্ট না থাকায় নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই ছাড়া বাংলাদেশি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সুযোগ নেই। মশিউর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া। ইতোমধ্যে দেশে সরাসরি এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা দেয়া হচ্ছে যা বিশ্বের অনেক দেশের কাছে দৃষ্টান্ত হয়েছে। প্রবাসেও সরকারের দফতর- দূতাবাস বা হাইকমিশন বা কন্সুলেট-এর মাধ্যমে প্রবাসী ও বিদেশিদের সেবা নিশ্চিত করছে। মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এক সঙ্গে ৩৫০ জন সেবা প্রত্যাশীদের সুশীতল স্থানে বসার ব্যবস্থা, ভিসা প্রত্যাশী বিদেশি নাগরিকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা, বাংলাদেশের পণ্য ও পর্যটন সম্পর্কে প্রচারণা ইত্যাদি করা হচ্ছে।
প্রতি সপ্তাহের শনি ও রোববার হাইকমিশন সরাসরি চলে যাচ্ছে প্রবাসী ভাইদের নিকট। কখনো পেনাং, কখনো মালাক্কা, কখনো ক্যামেরন হাইল্যান্ড, কখনো জহুরবারু, ক্লাং এ গিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করা ও ডেলিভারি দিচ্ছে। হাইকমিশনের সকল অফিসার অফিস দিনের পাশাপাশি ছুটির দিনগুলোতে মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোম্পানি বা কারখানায় গিয়ে সাক্ষাৎ করছে মালিকের সঙ্গে, খোঁজ নিচ্ছে প্রবাসী কর্মীদের, যাচাই করছে কারখানা বা কোম্পানি আসলেই বাংলাদেশ হতে কর্মী নিতে সক্ষম কি-না, কাজ আছে কি-না, বেতন-ভাতা দেয় কি-না, কল্যাণ কতটা করে ইত্যাদি। অর্থাৎ দূতাবাস চলে গেছে কারখানায়, চলে গেছে প্রবাসী ভাইয়ের আবাসস্থলে, খোঁজ নিচ্ছে পাশে বসে।
অন্য দেশের মাটিতে এই প্রচেষ্টা নিত্য-নতুন পদ্ধতিতে সমৃদ্ধ করতে হাইকমিশন বদ্ধপরিকর। তাই সঠিক ও যথাযথ মতামত ও মূল্যায়ন আশা করছে দূতাবাস যাতে উন্নত সেবা নিশ্চিত করা যায়। সমালোচনা বা ব্যক্তি আক্রোশ বা নিজের দুর্বলতা ঢাকতে হাইকমিশনকে খাটো করে নেতিবাচক প্রচারণা করে নিজ দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করা (যা দেশদ্রোহিতা) মানে বাংলাদেশকেই ছোট করা।
এমআরএম