ঘড়ির কাটা তখনো বিকেল তিনটে স্পর্শ করেনি। আবাহনী আর খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির ম্যাচ শেষ হয়নি তখনো। হঠাৎ শেরে বাংলার মূল গেটে ব্যান্ড পার্টির আওয়াজ।
Advertisement
গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের তিন তলায় হসপিটালিটি বক্সে বসে ম্যাচ কভার করতে থাকা সাংবাদিকদের বড় অংশ ওই ব্যান্ডপার্টির শব্দ শুনেই বারান্দায় ছুটে আসলেন; কি ব্যাপার, আবাহনীর সমর্থকরা কি আজই আগাম বিজয় উৎসব করে ফেলবে? কিন্তু সেটাই বা কি করে সম্ভব? লিগ শেষ হয়নি এখনো। সুপার লিগের পঞ্চম তথা শেষ রাউন্ড বাকি। এ অবস্থায় আগাম বিজয় উৎসব কি করে হয়?
আর আবাহনী দুই নিকট প্রতিদ্বন্দ্বি লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ আর শেখ জামালের চেয়ে দুই পয়েন্ট এগিয়ে থাকলেও শেষ ম্যাচ হারলে চালচিত্র পাল্টে যাবে। তখন তীরে এসে তরি ডোবার সম্ভাবনা থাকবে। এমন সমীকরণ সামনে থাকা অবস্থায় ব্যান্ড পার্টি? ঠিক মেলানো যায় না। পরক্ষণে ভুল ভাঙলো। ওই ব্যান্ড পার্টি আবাহনীর বিজয় উৎসবের নয়, বিয়ের বরযাত্রার।
এদিকে আজ দুপুরের পর থেকে শেরে বাংলা, ফতুল্লা স্টেডিয়াম, বিকেএসপি মাঠ তথা ক্রিকেট অঙ্গনে একটাই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে- চ্যাম্পিয়ন হবে কে? এবারের প্রিমিয়ার লিগের শেষ হিসেব কি? শিরোপা জিতবে কোন দল?
Advertisement
খালি চোখে আবাহনীর সম্ভাবনাই বেশি। কারণ প্রথম লিগ (১১ ম্যাচ) ও সুপার লিগ (৪ ম্যাচ) মিলে এখন পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে ১১ জয়ের সুবাদে আবাহনীর পয়েন্ট ২২। সমান ম্যাচে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ আর শেখ জামালের (সমান ১০ টি করে জয় নিয়ে) সংগ্রহ ২০ পয়েন্ট ।
আগামী ৫ এপ্রিল সুপার লিগের শেষ দিন আবাহনী খেলবে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের সাথে। আর একই দিন শেখ জামালের শেষ ম্যাচ খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির সাথে।
তার মানে খালি চোখে আবাহনী তুলনামুলক সুবিধাজনক অবস্থায়। শেষ ম্যাচ জিতলে আকাশি হলুদ শিবিরের পয়েন্ট দাঁড়াবে ২৪। তখন শেষ ম্যাচ জিতলেও শেখ জামালের পয়েন্ট দাঁড়াবে ২২। আর কোনো জটিলতাই থাকবে না। আবাহনী বিনা বাধায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে।
কিন্তু ৫ এপ্রিল লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের কাছে নাসির, মাশরাফিরা হারলেই হিসেব পাল্টে যাবে। ওদিকে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির সাথে শেখ জামাল জিতলে তিন দল অর্থাৎ আবাহনী, শেখ জামাল আর রূপগঞ্জের পয়েন্ট সমান (২২) হয়ে যাবে।
Advertisement
আর তিন দলের পয়েন্ট সমান হয়ে গেলে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারিত হবে তিন দলের পারস্পরিক মোকাবিলার ভিত্তিতে। যেখানে এখন পর্যন্ত বাকি দুই দলের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে শেখ জামাল। আবাহনী, শেখ জামাল আর রূপগঞ্জের পারস্পরিক মোকাবিলায় এগিয়ে শেখ জামাল। এ দলটি দুই পর্বেই হারিয়েছে রূপগঞ্জকে। প্রথম লিগে হারলেও আবাহনীর সাথে সুপার লিগে জিতেছে শেখ জামাল।
কাজেই রূপগঞ্জ শেষ দিন আবাহনীকে হারিয়ে দিলে আর শেখ জামাল খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির সাথে শেষ খেলায় জিতলে ‘হেড টু হেডে’ চ্যাম্পিয়ন হবে শেখ জামাল। আর আবাহনী হেরে গিয়েও চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। সেক্ষেত্রে শেখ জামালকেও হারতে হবে।
মানে আবাহনী আর শেখ জামাল দুই দল শেষ ম্যাচ হারলে আবাহনী আর রূপগঞ্জের পয়েন্ট সমান (১৬ খেলায় ২২ করে) হয়ে যাবে। আবাহনী আর রূপগঞ্জের হেড টু হেড হয়ে যাবে সমান। কারণ আবাহনী প্রথম লিগে রূপগঞ্জকে হারিয়েছে। তখন হেড টু হেড ১-১ সমান হলে নেট রানরেটে লিগ ভাগ্য নির্ধারিত হবে। যেখানে আকাশি শিবির অনেক এগিয়ে।
অর্থাৎ মোটা দাগে, শেষ ম্যাচ জিতলেই লিগ ট্রফি উঠবে আবাহনীর ঘরে। নাসির ও মাশরাফির দল রূপগঞ্জের কাছে হারার পাশাপাশি শেখ জামাল হারলেও নেট রানরেটে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হবে। আর আবাহনীর পরাজয়ের পাশাপাশি শেখ জামাল শেষ ম্যাচ জিতলে আবাহনী, শেখ জামাল ও রূপগঞ্জ। এই তিন দলের পারস্পরিক মোকাবিলায় বেশি ম্যাচ জেতার সুবাদে চ্যাম্পিয়ন হবে শেখ জামাল।
এআরবি/এমএমআর/পিআর