দেশজুড়ে

গাইবান্ধায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, চারদিনে শতাধিক হাসপাতালে

গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১৫০ জন জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

Advertisement

এদিকে, সব ওষুধের দোকান বন্ধ রেখে ওষুধ ব্যবসায়ীরা বার্ষিক বনভোজনে যাওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বুধবার ৩৩ জন, বৃহস্পতিবার ৪৬ জন ও শুক্রবার ৪৮ জন এই ১২৭ জনের মধ্যে শনিবার সকাল পর্যন্ত ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ১০৩ জনকে।

শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন আরও ২৩ জন। শহরের ডেভিড কোম্পানিপাড়া, সরকারপাড়া, দক্ষিণ ধানঘড়া, পলাশপাড়া, থানাপাড়া ও কলেজপাড়া এলাকার মানুষরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

Advertisement

শনিবার দুপুরে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের সেবায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নার্সরা। নতুন নতুন শিশু, মহিলা ও পুরুষ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তাদেরকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের অন্যান্য ফাঁকা জায়গায় নতুন করে বিছানা তৈরি করা হচ্ছে।

রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এসব রোগীরা নলকূপ ও পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি পান করতো। বেলা ২টার দিকে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে কোনো ওষুধের দোকান খোলা দেখতে পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ বিকেল সোয়া ৩টায় শহরের ১ নম্বর ট্রাফিক মোড়ের দোকানগুলোও বন্ধ দেখা গেছে।

এদিকে, জেলা শহরের ওষুধের দোকান বন্ধ রেখে সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের নারায়নপুর এলাকায় গাইবান্ধা বিনোদন পার্কে বার্ষিক বনভোজনে গেছে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি গাইবান্ধা জেলা শাখার সদস্যরা। এতে ওষুধের দোকান বন্ধ পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্তসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা।

ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়ার কারণ অনুসন্ধানে শনিবার দুপুর ১টার দিকে বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুইজন কর্মকর্তা এসেছেন গাইবান্ধায়। তারা শহরের ডেভিড কোম্পানিপাড়া এলাকায় গিয়ে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া ঢাকার মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা (আইডিসিআর) ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের একটি টিম গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। তারাও এসে পানির নমুনা সংগ্রহ করবেন।

Advertisement

ডেভিড কোম্পানি পাড়া এলাকার বাসিন্দা আক্তার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার প্রথমে পাতলা পায়খানা দেখা দিলে দোকান থেকে ওষুধ ও স্যালাইন কিনে খাই। কিন্তু কোনো উপকার হয়নি। পরে গতকাল শুক্রবার অবস্থার অবনতি হলে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। এখানেও তেমন উন্নতি হয়নি।

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ বলেন, গত কয়েকদিন আগেই মাইকিং করা হয়েছে আজ দোকান বন্ধ থাকবে। তারপরও আমাদের বার্ষিক বনভোজন সংক্ষিপ্ত করে খুব তাড়াতাড়ি দোকানগুলো খুলে দেয়া হবে।

জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অমল চন্দ্র সাহা বলেন, ডায়রিয়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের সঙ্গে নার্স, ডাক্তার ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন। ওষুধ, স্যালাইনসহ অন্যান্য উপকরণ যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হঠাৎ করে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে দুইজন কর্মকর্তা এসেছেন। তারা পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে সমস্যা খুঁজে বের করবেন।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি ঢাকার মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা (আইডিসিআর) ইনস্টিটিউটে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে একটি টিম গাইবান্ধায় আসছেন। তারা পানির নমুনা সংগ্রহ করে ডায়রিয়া দেখা দেয়ার কারণ অনুসন্ধান করে বের করবেন। এর আগেও ২০১৫ সালে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়ার কারণ হচ্ছে পানিবাহিত রোগ। এছাড়া ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পানি ফুটিয়ে পান করার কথা বলেন তিনি।

রওশন আলম পাপুল/এএম/জেআইএম