ধর্ম

আমলের পরিপূর্ণ ছাওয়াব লাভে ইখলাসের গুরুত্ব

ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ বুখারির প্রথম হাদিসটি নিয়েছেন নিয়ত প্রসঙ্গে। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সে হাদিসটি হলো- নিশ্চয় প্রতিটি আমল বা কাজ তার নিয়তের ওপর নির্ভর করে।’ নিয়তের পাশাপাশি প্রয়োজন কাজের প্রতি ইখলাস বা একনিষ্ঠতা। ইখলাসবিহীন ইবাদত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

Advertisement

মানুষের আমল বা কাজে যদি বিশুদ্ধ নিয়ত এবং ইখলাস থাকে; তাতে কাজের সামর্থ্য না থাকলেও পরিপূর্ণ সাওয়াব লাভে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে না।

কোনো কোনো মানুষ ইখলাসের সঙ্গে বিশুদ্ধ নিয়তে কোনো ভাল আমল করতে উদ্যোগী হয়; কিন্তু তাঁর সম্পদ ও শারীরিক দুর্বলতাসহ বিভিন্ন কারণে সে কাজ সম্পন্ন করতে পারে না। আপ্রাণ চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও ভাল কাজটি সম্পন্ন করতে না পারলেও ওই ব্যক্তি তার বিশুদ্ধ নিয়ত এবং ইখলাসের সঙ্গে চেষ্টা এবং উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পরিপূর্ণ সাওয়াব পেয়ে যাবে। আর যারা ঐ ভাল কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছে; ইখলাসের কারণে সে সফল ব্যক্তিদের মর্যাদা লাভ করবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

Advertisement

‘আমরা কয়েকটি দলকে মদিনায় রেখে (অভিযানে) এসেছি। তারা আমাদের সঙ্গে কোনো পাহাড় অতিক্রম করেনি; কোনো উপত্যকাও অতিক্রম করেনি। অথচ তারা আমাদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারীদের মর্যাদা লাভ করবে। অক্ষমতা তাদেরকে আটকে রেখেছে।’ (বুখারি)

হাদিসে বর্ণিত সাহাবাগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ইখলাস ও বিশুদ্ধ নিয়তসহ অভিযানে অংশগ্রহণের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোনো অসুবিধার কারণে অভিযানে যেতে পারেনি। প্রিয়নবির ঘোষণা অনুযায়ী তারা অভিযানে অংশগ্রহণ না করেও অংশগ্রহণকারীদের সমমর্যাদা লাভকারী হয়েছে।

রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ঘোষণা করেন-

‘শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার নিয়তে যে ব্যক্তি শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুমে কাবু হয়ে যাওয়ার কারণে সে সকালের আগে ঘুম থেকে উঠতে পারেনি। এমন অবস্থায় সে ব্যক্তি (তাহাজ্জুদের) যে নিয়ত করেছিল; তার জন্য (নামাজের) বিনিময় লেখা হয়ে যাবে। আর ঘুমকে তাঁর রবের পক্ষ থেকে দান বা নেয়ামত হিসেবে ধরা হবে। (নাসাঈ)

Advertisement

প্রিয়নবির হাদিস থেকে জানা যায় যে, তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাস থাকা সত্ত্বেও সে প্রবল ঘুমের কারণে তা আদায় করতে পারেনি। ইখলাস ও বিশুদ্ধ নিয়ত থাকার কারণে সে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের পরিপূর্ণ সাওয়াব লাভ করবে। আর তাঁর ঘুম আল্লাহর দান হিসেবে পরিগণিত হবে।

অন্য হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইখলাসের কারণে বিছানায় মৃত্যুবরণকারীকে শহিদ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

‘যে বিশুদ্ধ মনে জেহাদে অংশগ্রহণ করে আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয়ার কামনা করে। এ ব্যক্তির বিছানায় মৃত্যুকেও আল্লাহ তাআলা শহিদি মৃত্যু হিসেবে মর্যাদা দান করবেন।’ (মুসলিম)

জেহাদে অংশগ্রহণ না করেও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইখলাসের সঙ্গে শাহাদাতের আশা পোষণকারী ব্যক্তিকেও আল্লাহ তাআলা সাধারণ মৃত্যুতে শহিদি মর্যাদা দান করবেন।

উল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে প্রতিয়মান হয়ে যে, বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাসের কারণে মানুষের যে কোনো ভাল কাজগুলো অপারগতার কারণে যথাযথভাবে আদায় করতে না পারলেও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ সাওয়াব লাভ হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাসের সঙ্গে দুনিয়ার প্রতিটি কাজ করার তাওফিক দান করুন। ইখলাসপূর্ণ কাজের দ্বারা দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস