রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন-৬। এই আসনে রয়েছে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। নানান কারণে এ আসনটি রংপুর অঞ্চলের মধ্যে বেশ আলোচিত।
Advertisement
দল গঠনের পর থেকে টানা দুই দশক আসনটি দখলে ছিল জাতীয় পার্টির। এরপর ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে ছিল এই আসন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নুর মোহাম্মদ মন্ডলের কাছে একবার পরাজিত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেইসময় ওই পরাজয়টা ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি।
আমরা কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না। সব দলকেই আমরা বন্ধুর মতো মনে করি। তারাও একসময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। একবার আমাদের সুযোগ দেওয়ার জন্য মানুষের কাছে নিজেদের কথাগুলো তুলে ধরছি।
Advertisement
ভোটের মাঠে শেখ হাসিনাকে হারানো নুর মোহাম্মদ মন্ডল দল বদল করে ২০০৮ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০১৯ ও ২০২৪ সালেও উপজেলা চেয়ারম্যান হন।
আরও পড়ুন
বিএনপির চ্যালেঞ্জ জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন জামায়াতের সামনে সুযোগের হাতছানি, বিএনপিও আশাবাদীদুদকের মামলায় এখন কারাগারে নুর মোহাম্মদ মন্ডল, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কোণঠাসা আওয়ামী লীগ, আর নড়বড়ে জাতীয় পার্টির মাঝে এখন সুযোগ বিএনপি ও অন্য দলগুলোর।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো প্রার্থী ঘোষণা দেয়নি। তবে আমি ওই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। এরইমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছি।
Advertisement
এরইমধ্যে গণসংযোগ, বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, ঘরোয়া বৈঠক ও শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার সাঁটানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
এ আসনে একমাত্র জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী হিসেবে সহকারী অধ্যাপক মাওলানা নুরুল আমিনের নাম ঘোষণা করে।
রংপুরের পাঁচটি আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী ঘোষণা করলেও এ আসনে এখনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম এবং এনসিপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়া তাকিয়া জাহান চৌধুরী। এছাড়া বাকি দলগুলোর তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
আরও পড়ুন
৪২ শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারই নির্ধারণ করবে জয়-পরাজয় ফখরুলের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের দেলাওয়ার, আছেন স্বতন্ত্ররাওপরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের শামসুল হক চৌধুরী, ১৯৭৯ সালে বিএনপির মোহাম্মদ মতিয়ার রহমান চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আব্দুল জলিল প্রধান, ১৯৯১ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (উপ-নির্বাচনে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন), ১৯৯৬ সালে আবারও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (উপ-নির্বাচনে নুর মোহাম্মদ মন্ডল), ২০০১ সালে শেখ হাসিনাকে হারিয়ে আবারও জাতীয় পার্টির নুর মোহাম্মদ মন্ডল, ২০০৮ সালে বিএনপির নুর মোহাম্মদ মন্ডলকে হারিয়ে শেখ হাসিনা (উপ-নির্বাচনে আবুল কালাম আজাদ), ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা (উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শিরীন শারমিন চৌধুরী) এবং ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আবারও শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে যারাই প্রতিদ্বন্দ্বী হোক না কেন আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী দেয়নি জাতীয় পার্টি। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নুর আলম জাদু মিয়া শেখ হাসিনার কাছে পরাজিত হন। নৌকা প্রতীক নিয়ে শেখ হাসিনা পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার নুর আলম জাদু মিয়া ৪ হাজার ৯৬৯ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
আরও পড়ুন
বিএনপি-জামায়াত লড়াইয়ের সম্ভাবনা নতুন প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণা২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দিলেও শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির সাইফুল ইসলাম। ওই নির্বাচনে শিরিন শারমীন চৌধুরী ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম পেয়েছিলেন ২৪ হাজার ৫৩ ভোট।
২০২৪ সালে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর আলম জাদু মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৯ হাজার ১৬ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
সেবার ১ লাখ ৮ হাজার ৬৩৫টি ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৩৬ হাজার ৮৩২ ভোট।
রংপুর জেলা জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য সহকারী অধ্যাপক মাওলানা নুরুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, আমার প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আগামী নির্বাচন ঘিরে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি, আমাদের কথাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ আবু সাঈদের এলাকাবাসী যদি মনে করেন, জামায়াতে ইসলামীর হাতে দেশ ভালো থাকবে তাহলে তারা সেই সুযোগ দেবেন। এ বিষয়ে আমরা মানুষের সাড়া পাচ্ছি।
কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন কি না জানতে চাইলে মাওলানা নুরুল আমিন বলেন, আমরা কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না। সব দলকেই আমরা বন্ধুর মতো মনে করি। তারাও একসময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। একবার আমাদের সুযোগ দেওয়ার জন্য মানুষের কাছে নিজেদের কথাগুলো তুলে ধরছি।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রংপুর জেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এখন ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে, তারা দ্রুত সময়ে নির্বাচন চায়। যেখানেই যাই, মানুষ শুধু দ্রুত ভোটের কথা বলে।
কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন কি না জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। মানুষ ভোট প্রদানের সুযোগ পেলে যারাই প্রতিদ্বন্দ্বী হোক না কেন আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
তাকিয়া জাহান চৌধুরী বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো প্রার্থী ঘোষণা দেয়নি। তবে আমি ওই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। এরইমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছি।
রংপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৫৪। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯৮, পুরুষ ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৫২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার চারজন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ১৮৬। সে অনুযায়ী এবার ভোট বেড়েছে ২১ হাজার ৪৩২টি।
জেডআইকে/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম