আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ ব্যাংকের মত মনে হলেও পশ্চিমবঙ্গের উষা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামের আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র যৌনকর্মীদের জন্যই কাজ করে। এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন যৌনকর্মীরাই আর এর গ্রাহকরাও যৌনকর্মী। খবর বিবিসি।
Advertisement
এখানকার ৩১ হাজার নারী গ্রাহকের একজন রিনা। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের সহায়তা তার জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছে। এখান থেকে তিনি ঋণ পেয়েছেন। কলকাতায় অনেক ব্যাংক থাকলেও কোনো ব্যাংকই যৌনকর্মীদের ঋণ দিতে রাজী হয় না। সমবায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে নেয়া ঋনের টাকা দিয়ে রিনার ছেলে একটি চায়ের দোকান খুলেছেন। রিনা বলেন, এখন আমরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারি।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সহায়তায় ১৯৯৫ সালে গঠন করা হয় উষা কো-অপারেটিভ সোসাইটি। যৌনকর্মীরা এখান থেকে কম সুদে ঋণ পাওয়া, টাকা জমা রাখাসহ নানারকম সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এই প্রতিষ্ঠান তৈরী হওয়ার আগে যৌনকর্মীরা কোনো ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা পেতেন না। সুনির্দিষ্ট পরিচয় ও বাসস্থান না থাকায় এবং ব্যাংকের দৃষ্টিতে তাদের আয়ের পথ অবৈধ বিবেচিত হওয়ায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারতেন না তারা।
Advertisement
ফলে চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে হতো তাদের। টাকা জমানোও ছিল প্রায় অসম্ভব।
যৌনকর্মী হিসেবে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটানো শেফালি দাস জানান, এরকম প্রতিষ্ঠান থাকলে তাদের আর চড়া সুদে টাকা ধার নেয়ার প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, আমরা এক সময় মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার করতাম। সেই টাকা প্রায় কখনোই পুরোপুরি ফেরত দেয়া সম্ভব হতো না আর আমরা সবসময়ই ঋণগ্রস্ত থাকতাম। অনেকটা আশা নিয়েই তিনি বলেন, আমরা এই পেশায় থাকলেও, আমাদের মেয়ে সন্তানদের আর এই পেশায় থাকতে হবে না।
এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান উপদেষ্টা স্মারুজিৎ জানা বলেন, যৌনকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে এরকম প্রতিষ্ঠান খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল। মহাজনদের সুদের হার চড়া থাকায় যৌনকর্মীরা সবসময়ই তাদের বা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ঋণগ্রস্ত থাকতেন।
স্মারুজিৎ জানা বলেন, মহাজনদের সুদের হার ৩শ শতাংশ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী। আমি যখন এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করতে যাই তখন মহাজনরা আমার বিরোধিতা করে। এমনকি আমাকে হত্যার হুমকিও পেতে হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গ বাদেও ভারতের কয়েকটি রাজ্যে যৌনকর্মীদের এই ধরনের সুবিধা দেয় কিছু প্রতিষ্ঠান।
Advertisement
টিটিএন/জেআইএম