ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপাচার্যের কার্যালয়ে ‘নিপীড়নবিরোধী’ বাম ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ছাত্রলীগের হামলার সময় সহপাঠীকে টেনেহিঁচড়ে তার জামা ছিঁড়ে ফেলেন কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শায়লা শ্রাবণী। তিনি ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী। লাঞ্ছনার শিকার হওয়া এক শিক্ষার্থী এ অভিযোগ করেছেন।
Advertisement
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ ছবি নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। ছাত্রী হয়ে সবার সামনে সহপাঠীর জামা ছিঁড়ে ফেলার ছবি ও ভিডিও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে গোটা ছাত্র রাজনীতিকে। তবে ন্যক্কারজনক এ ঘটনা গায়ে লাগাচ্ছে না কেউ। ছাত্রলীগ বলছে, আত্মরক্ষা করতে গিয়ে ঘটেছে এমন ঘটনা। শিক্ষার্থীদের নিপীড়নে ওই নেত্রী নিজেই নাকি এখন অসুস্থ।মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে চলা আন্দোলনে ঘটনাটি ঘটে। শায়লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসানের অনুসারী। নেত্রীর এমন কাণ্ডে সংগঠনের অবস্থান জানতে চাইলে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, তার (শায়লা) ওপরে ছেলেরা হামলা চালায়, আত্মরক্ষার্থে এমন ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘কয়েকটা ছেলে তাকে (শায়লা) আক্রমণ করেছে সেটা দেখেননি? ৮ থেকে ১০ জন ছেলে তাকে নিপীড়ন করলে সে কি নিজেকে বাঁচানোর জন্য এমন করতে পারে না?’
অথচ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীর চুল ধরে পাশে নিয়ে যান শায়লা। সেখানে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ছিঁড়ে ফেলেন তার জামা।
লাঞ্ছনার শিকার হওয়া ওই শিক্ষার্থী ঢাবির ডিজেস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা করেন। তিনি বলেন, ‘ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আমাদের এক সিনিয়র আপুকে ছাত্রলীগের ছেলেরা ক্রমাগত লাথি দিলে আমার বন্ধুরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়। আমাকে একা পেয়ে এ মেয়েটি (শায়লা) ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকে। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। সে আমাকে তখনও মেরে যাচ্ছিল আর বলছিল, কেন আন্দোলন করলি? আন্দোলন করে কি? আমরা তা দেখে নেব। এরপর সে আমার চুল ধরে টেনে নিয়ে যায়, জামা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে।’
Advertisement
ছাত্রলীগ নেত্রীর সাফাই গেয়ে ফেসবুকে সংগঠনের কর্মীরা শায়লার অচেতন হয়ে পড়ে থাকার ছবি পোস্ট করেছেন। কবি জসীম উদদীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বামদের হামলার শিকার কুয়েত মৈত্রী হলের সাধারণ সম্পাদক ছোট বোন শায়লা। কয়েকদিন আগে তার অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন হয়েছিল। আঘাত করা হয়েছে অপারেশনের সেই জায়গায়। ডিএমসির জরুরি বিভাগে আছেন, সবাই দোয়া করবেন।’
তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) থেকে জাগো নিউজ জানতে পেরেছে, মঙ্গলবার থেকে বুধবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ঢাবি থেকে ঢামেক জরুরি বিভাগে শায়লা শ্রাবণী নামে কেউ চিকিৎসা নেয়নি। ঢামেকের রেজিস্টার অনুযায়ী, ঢাবির ১০ জন শিক্ষার্থী ঢামেকে চিকিৎসা নিয়েছে যাদের মধ্যে শায়লার নাম নেই। বুধবার দুপুরে ঢামেকের আবাসিক সার্জন আলাউদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, বুধবার ঢামেকের জরুরি বিভাগে ঢাবির কোন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নেয়নি। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে ‘অসুস্থ’ শায়লার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
শুধু মঙ্গলবার নয়, চলতি মাসের ১৫ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ওইদিন নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার ছবি তুলতে গেলে এনটিভি অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মামুন তুষারকে লাঞ্ছিত করে শায়লা। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। ভাঙচুর করে মুঠোফোন।এ বিষয়ে ঢাবির প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে হেনস্তা ও কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে ঢাবির সংঘর্ষের বিষয়ে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ঢাবিতে চলমান আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব ঢাবি কর্তৃপক্ষের। কিন্তু আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না।
Advertisement
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিদর্শনে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ছাত্রলীগ যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, তাহলে ছাত্রলীগকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে, কোনো ছাড় নয়।
ফেসবুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়াছাত্রলীগ নেত্রীকে মারধর ও জামা ছেঁড়ার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তা নিয়ে ফেসবুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এম এইচ খান নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে! ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার রাজনৈতিক ক্ষমতা দেয়া যাবে না। শিক্ষার্থীদের কাজ পড়াশোনা করা।’
মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছে, ছাত্র-ছাত্রীদের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত। ছাত্র-ছাত্রীরা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে, কোনো দলকে নয়। অনেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের, ভাষা আন্দোলনের দোহাই দেন , আরে ভাই সেই আন্দোলন ছিল দেশের জন্য আর এখন যেটা হচ্ছে সেটা ক্ষমতা আর টাকার জন্য।
এআর/ওআর/আরআইপি