ধর্ম

দেশে দেশে তাবলিগ জামাতের ইজতেমা

তাবলিগ জামাতের সাধারণ সভা হলো ইজতেমা। তাবলিগের শুভাকাঙ্খী, কর্মী, সঙ্গী ও দায়িত্বশীলগণের দ্বীনি দাওয়াতের মেহনত ও কর্মস্পৃহা বাড়াতেই ইজতেমার আয়োজন। বিশ্বব্যাপী চলছে তাবলিগের এ দ্বীনি মেহনত।

Advertisement

বাংলাদেশের টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা ছাড়াও বিশ্বব্যাপী তাবলিগ জামাতের বড় বড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশসহ ইউরোপ আমেরিকায় ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডান এবং ইসলাম বিদ্বেষী ইয়াহুদি অধ্যুষিত দেশ ইসরাইলেও অনুষ্ঠিহ হয় তাবলিগের মেহনতে দ্বীনি এ ইজতেমা।

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাসহ বিশ্বব্যাপী বড় ৫টি ইজতেমার সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো। যার কর্ম পরিকল্পনা, তারিখ ও সময় টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় নির্ধারিত হয়।

বিশ্ব ইজতেমা : বাংলাদেশ১৯৪৬ সালে ঢাকার রমনা পার্ক সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে প্রথমবারের মতো তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন বা ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।

Advertisement

তাবলিগের প্রচার-প্রচারণা দিন দিন প্রসারিত হওয়া এবং তাবলিগের সাথী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০ বছরের বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার পর ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে বড় আয়োজনে ইজতেমা আয়োজন করা হয়।সে বছর স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তাবলিগের এ ইজতেমায় ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও তাবলিগের সাথীরা অংশ গ্রহণ করে। আর সে বছর থেকেই এ ইজতেমাকে বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব ইজতেমা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে থাকে এ ইজতেমা।

১৯৬৬ সালের পর থেকে প্রতি বছরই ‘কহর দরিয়া’খ্যাত তুরাগ নদীর উত্তর পূর্ব তীর সংলগ্ন ডোবা-নালা, উঁচু-নিচু জমি মিলিয়ে রাজউকের হুকুমদখলকৃত ১৬০ একর জায়গার বিশাল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ ইজতেমা। যা বিশ্ব ইজতেমা নামে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

লন্ডনের ইজতেমা (যুক্তরাজ্য)গ্রেট বৃটেনের রাজধানী লন্ডনের ডুইসবেরি মারকাজ মসজিদ। এ মসজিদে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের ৩দিন ব্যাপী সবচেয়ে বড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপের বিভিন্ন শঞর থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান এ ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে। এ লন্ডন শহরে রয়েছে তাবলিগ জামাতের একাধিক মারকাজ।

ভারতের ইজতেমাভারতের বৃহৎ ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ৩দিন ব্যাপী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ভুপালের ঘাসিপুরাতে। এ ইজতেমায় বর্তমানে প্রায় ২০ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করেন।

Advertisement

ভারতের স্বাধীনতা লাভ হয় ১৯৪৭ সালে। দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর ভুপালে প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ভুপালের এ ইজতেমাকেই উপমহাদেশের প্রাচীনতম ইজতেমা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

তাবলিগ জামাতের মুরব্বী মাওলানা মিসকিন রাহ. ভুপালের পাহাড়ি অঞ্চলের প্রাচীন শহর ভাদভূঞ্জার চামেলি মসজিদে মাত্র ৪ জনকে নিয়ে এ ইজতেমা শুরু করেন।

পরবর্তীতে চামেলি মসজিদে থেকে এ ইজতেমা পর্যায়ক্রমে একই এলাকার শাকুর খান মসজিদ, জামা মসজিদ ও তাজুল মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত ভুপালের তাজুল মসজিদে এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতো।

দিন দিন মুসল্লিদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ২০০৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ভুপাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে ঘাসিপুরাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

পাকিস্তানের ইজতেমাউপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইজতেমা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রায়বন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালে লাহোরের সাধারণ মুসল্লিদের উদ্যোগে অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে ৬৬ বছর আগে এ ইজতেমা শুরু হলেও বর্তমানে তা টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমার পরের স্থান দখল করেছে।

পাকিস্তানের রায়বন্ডের ইজতেমায় বিশ্বের ৪০টির অধিক দেশের তাবলিগের সাথীগণ অংশগ্রহণ করেন। ২০০৭ সাল থেকে পাকিস্তান তাবলিগের প্রবীন মুরব্বী ও জিম্মাদার হাজি আব্দুল ওয়াহাব-এর পরিচায়নায় এ বৃহৎ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

বৃহস্পতিবার বাদ ফজর শুরু হয়ে রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে রায়বন্ডের ইজতেমা শেষ হয়। ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ তাবলিগের মুরব্বিগণ বয়ান পেশ করেন।

জর্ডানের ইজতেমাজর্ডানের রাজধানী আম্মানের রুসাফিয়াতে ‘মসজিদে মদিনা আল-হুজ্জাজ মারকাজে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ৩ দিন ব্যাপী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তাবলিগের সূচনালগ্ন থেকে আরব বিশ্বে তাবলিগের কাজ ধীর গতিতে চললেও বর্তমানে তাবলিগের দাওয়াতি মেহনত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জর্ডানের এ ইজতেমা বেশিদিন না হলেও বর্তমানে আরব রাষ্ট্রগুলোর লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অংশগ্রহণে তা অনুষ্ঠিত হয়। এটি আরব দেশগুলোর প্রধান ইজতেমা। এ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী তাবলিগের দাওয়াতি মেহনত ও ইজতেমা অব্যাহতভাবে চলছে।

এমএমএস/পিআর