সাকিব আল হাসান কিছুতেই মনে করতে পারলেন না তিন নম্বর পজিগনে আগে কতবার ব্যাটিং করেছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ ম্যাচ শেষে শেরে বাংলার কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে ওয়ান ডাউনে ব্যাট করা নিয়ে কথা উঠতেই সাকিব বলে উঠলেন, ‘মনে হয় এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার এত ওপরে ব্যাট করলাম।’ আসলে সেটা হবে তৃতীয়বার।
Advertisement
ইতিহাস-পরিসংখ্যান সে তথ্যই দিচ্ছে। ইতিহাস আরও একটি কাকতালীয় তথ্য-উপাত্য সরবরাহ করছে। তাহলো, সত্যিই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। জেনে অবাক হবেন, সাকিব দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রথম তিন নম্বরে ব্যাটিং করেছিলেন এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই এবং সেটা দেশের মাটিতে।
২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। আগেই বলা হলো, এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাকিব ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম তিন নম্বরে ব্যাট করেন। এরপর গত বছর ১৫ অক্টোবর কিম্বার্লিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দ্বিতীয়বার ওয়ান ডাউনে দেখা মেলে ব্যাটসম্যান সাকিবের। আজ ঘুরেফিরে সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আবারো তিন নম্বরে সাকিব।
এখানেই সাযুজ্যের শেষ নেই। আরও আছে। সাকিব চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যে ম্যাচে প্রথম তিন নম্বরে নামেন, সে ম্যাচেও আজকের মতো বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে ছিলেন তামিম ও এনামুল হক বিজয়।
Advertisement
পার্থক্য দুুটি। চার বছর আগে শূন্য রানে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। আর আজ করেছেন ৪৬ বলে ৩৭ রান। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো, সোমবার সন্ধ্যায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিম একা বিগ ফিফটি (৯৩ বলে অপরাজিত ৮৪ রান) উপহার দিয়েছেন। বিজয় ১৪ বলে ১৯ করে আউট।
আর ২০১৪ সালে সাকিব যে ম্যাচে তিন নম্বরে নামেন সে ম্যাচে তামিম আর এনামুল হক বিজয় দু’জনার ব্যাটই হেসেছিল। তামিম করেছিলেন ৭৮। আর বিজয় আউট হন ৮০ রান করে। তামিম ও বিজয় ৩৩ ওভার উইকেটে থেকে প্রথম উইকেটে তুলে দিয়েছিলেন ১৫৮ রান। পরের ১৭ ওভারে রানের গতি বাড়ানোর জন্যই সাকিবকে পাঠানো হয়েছিল তিন নম্বওে এবং সে সিদ্ধান্তটা ছিল একান্তই তাৎক্ষণিক। স্কোর বোর্ডটাকে আরও মোটা তাজা করতে। আর এবার সাকিবের তিন নম্বরে খেলাটা আগে থেকেই ঠিক করা।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে তিন নম্বর পজিশনটা এখনো নড়বড়ে। সাকিব হতে পারেন শক্ত খুঁটি। তাই তাকে দিয়ে টপ অর্ডারচটাকে আরও মজবুত করার চিন্তা টিম বাংলাদেশের নতুন ম্যানেজমেন্টের।
এদিকে সাকিবও ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে পেরে অন্যরকম রোমাঞ্চ অনুভব করছেন। দিন শেষে প্রেস কনফারেন্সে তার কথা শুনে মনে হলো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তিন নম্বরে ব্যাট করা উপভোগ করছেন। শুধু উপভোগ নয়। এত ওপরে ব্যাট করা তার নতুন চ্যালেঞ্জ বলেও ঘোষণা দিয়ে বসেছেন।
Advertisement
তার অনুভব, ‘ওয়ান ডাউন পজিশনটা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দায়িত্ব অনেক। সেট হলে বড় ইনিংস খেলা জরুরি। যেটা আজ পারেননি। তবে আগামীতে এমন সেট হতে পারলে আরও লম্বা ইনিংস খেলার ইচ্ছে তার।
ম্যাচ সেরা পারফরমারের পুরস্কার পাবার পর প্রেস মিটে কথা বলতে এসে অনেক দিন পর তিন উইকেট ও তিন নম্বরে ব্যাট করা প্রসঙ্গে কথা উঠতেবই সাকিব বলে উঠলেন, ‘এটা দিয়ে বোধ হয় সেকেন্ড টাইম খেললাম।’ তখন এক সিনিয়র সাংবাদিক মনে করিয়ে দিলেন, নাহ থার্ডটাইম।
মুহূর্তের মধ্যে শুধওে নিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা, থার্ড টাইম। আসলে নতুন একটা চ্যালেঞ্জ। খেলার মধ্যে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ না থাকলে উপভোগ করা কষ্ট হয়। সেদিক থেকে আমার জন্য নতুন একটা চ্যালেঞ্জ। আশা করি আবারও যদি এমন সেট হতে পারি, তাহলে যেন বড় ইনিংস খেলতে পারি। যারা টপ থ্রি-ফোরে ব্যাট করে তাদের জবটাই থাকে এটা। হয়তো দ্রুত আউট হয়ে যেতে পাওে; কিন্তু যখন সেট হয়ে যায় তখন যেন বড় ইনিংস খেলতে পারে। এটাই আসলে টার্গেট থাকে। যেহেতু এখন তিনে ব্যাট করার সুযোগ আছে, চেষ্টা থাকবে যেন বড় ইনিংস খেলতে পারি।’
সাকিব বড় ইনিংস খেলতে পারেন, তা সবার জানা। তবে তার অনেকগুলোই পাঁচ কিংভা ছয় নম্বরে নেমে। এতকাল একদিনের ক্রিকেটে সাকিবের মূল ব্যাটিং পজিশন ছিল পাঁচ নম্বর। আগের ১৭০ ম্যাচের মধ্যে সর্বাধিক ১২২ বারই পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলাই শুধু নয়, তার রেকর্ড ওই পজিশনেই সবচেয়ে ভালো ও সমৃদ্ধ।
পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সাকিব ৮৩.৫০ স্ট্রাইকরেট আর ৩৫.৪৪ গড়ে ৪৪৯৯ রান করেছেন। তার মোট সাত ওয়ানডে সেঞ্চুরির পাঁচটি ওই পাঁচ নম্বরেই। ৩৫ হাফ সেঞ্চুরির ২৯টিও ওই পজিশনেই।
এর বাইরে তিন, চার, ছয় ও সাত নম্বরেও ব্যাট করার রেকর্ড আছে সাকিবের। তবে তিন আর সাত নম্বরে খেলেছেন মোটে দুটি করে ম্যাচ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দুই পজিশনে ব্যাটিং করতে নামা সাকিবের রেকর্ড সবচেয়ে খারাপ। তিন নম্বর পজিশনে দুই ম্যাচে ব্যাট করা সাকিবের রান ২৯। সর্বোচ্চও ২৯। গড় ১৪.৫০, স্ট্রাইকরেট ৬৩.০৪। এছাড়া সাকিব চার নম্বর পজিশনেও ৩০ বার ব্যাট করেছেন।
ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরুই করেছিলেন চার নম্বর পজিশন দিয়ে। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে সাকিব চার নম্বরে নেমে খেলেছিলেন হার না মানা ৩০ রানের (৪৯ বলে) ইনিংস।
সে ম্যাচে শাহরিয়ার নাফীসের ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি (১৪৮ বলে ১১৮ নট আউট) আর সাকিবের ইনিংসটি বাংলাদেশকে নিয়ে যায় জয়ের বন্দরে। টাইগাররা পায় ৮ উইকেটের জয়। চার নম্বর পজিশনে সাকিবের মোট রান ৯৫৯। গড় ৪১.৬৯। স্ট্রাইক রেট ৭৮.২২। দুটি সেঞ্চুরিও আছে। আর পঞ্চাশের ঘরে পা রাখেন চার বার।
এর বাইরে ছয় নম্বরেও ১৪ ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সেখানেও আহামরি সাফল্য নেই। দুটি ফিফটি আছে। স্ট্রাইকরেট ৬৮.৭৭, রান ৩১৫। সর্বোচ্চ ৭৯। ক্রিকেট বিশ্ব সাকিবকে সাত নম্বরে দু'বার ব্যাট করতে দেখেছেন। প্রথম বার তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ২০০৭ সালের ২৩ জুলাইয়ে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (২৯ বলে ১৫) আর শেষ ২০০৯ সালের ৩১ অক্টোবরে শেরে বাংলায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (৫*)।
কাজেই পরিসংখ্যান বলছে, সাকিব মিডল অর্ডার মানে পাঁচ নম্বরেই বেশি সফল। দেখা যাক ক্যারিয়ারের এক যুগ পার করে মিডল রেখে টপ অর্ডারে এসে কেমন করেন সাকিব? নতুন পজিশনে কতটা সফল হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার?
এআরবি/আইএইচএস/আইআই