খেলাধুলা

তবে কি 'ডাইরেক্টর অফ কোচিং' হয়েই আসছেন কারস্টেন!

খুব বেশী আগে নয়। এই মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগের খবর। জাগো নিউজের পাঠকরা জেনেই গেছেন রিচার্ড পাইবাস আসছেন না। এ ইংলিশ হেড কোচের বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে জড়িত হবার সম্ভাবনা শুন্যের কোঠায়। তারপর ইন্টারভিউ দিয়ে যাওয়া ফিল সিমন্সকেও পছন্দ নয় বোর্ডের।

Advertisement

আজ বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কন্ঠে তাই প্রতিধ্বনিত হলো। তিনি পাইবাস ও ফিল সিমন্সের নাম বেমালুম উচ্চারণ না করে একজন নতুন কোচের কথা বলেছেন। যার নাম গ্যারি কারস্টেন। তবে তিনি সারা বছর কোচিং করাতে পারবেন না। আর শুধু জাতীয় দলের প্রথাগত কোচ হিসেবেও কাজ করবেন না। তার পদ হবে ডাইরেক্টর কোচিং। তার অধীনে ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং কোচরা দল পরিচালনা তথা কোচিং করাবেন।

আজ দুপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ওপেনার গ্যারি কারস্টেনের নাম উল্লেখ করে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘গ্যারি কারস্টেনের সাথে আমাদের যে কথা হয়েছে, তা হেড কোচ হিসেবে নয়। তার সঙ্গে কথা হয়েছে কনসালটেন্ট হিসেবে এবং শুধু জাতীয় দলের হয়ে নয়, সে সব বিষয়ে কাজ করবে। তবে ফেব্রুয়ারির আগে তাকে পাওয়া যাবে না।’

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য বিগ ব্যাশে কোচিং করাচ্ছেন গ্যারি কারস্টেন। আগামী ফেব্রুয়ারির আগে ফ্রি হবেন না। তার পর হয়ত তার সাথে কথা বার্তা হবে। বোর্ড প্রধানের ওপরের কথোপকোথনে পরিষ্কার , বিসিবি হেড কোচ পদে এখনো পছন্দের কাউকে পায়নি। তাই গ্যারি কারস্টেনকে ডাইরেক্টর কোচিং করে আনার চিন্তা ভাবনা চলছে। তবে সেটাও শতভাগ চূড়ান্ত নয়, আলোচনা সাপেক্ষে। সেটা যে খুব সহসাই হবে, তাও নয়।

Advertisement

বাংলাদেশ সব সময়ই একজন হেড কোচের পাশাপাশি ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে তিনজন স্পেশালিস্ট কোচ নিয়োগ দিয়ে আসছে। এই তো সেদিনও হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সাথে কোর্টনি ওয়ালশ বোলিং কোচ, থিলান সামারাবীরা ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন।

ভাবা হচ্ছিলো এবং বোর্ড থেকেও বলা হয়েছে , আগে একজন পুরোদস্তুর হেড কোচ নিয়োগ দেয়া হবে। কিন্তু হাথুরুসিংহে চলে যাবার পর তাহলে কারস্টেনকে ডাইরেক্টর অফ কোচিং করে আনার প্রশ্ন আসছে কেন ? এ প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।

এর সত্যিকার জবাব দেননি বিসিবি প্রধান। তবে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন এমন এক জায়গায় অবস্থান করছে, যাকে তাকে কোচ করে আনা যায় না। ‘আসলে বাংলাদেশ এখন যে পর্যায়ে গেছে, সেখানে যে কোনো কোচ আনলে তো হবে না। একটু ভেবেচিন্তে কোচ আনতে হবে। আগেরবারের চেয়ে এখন কোচ নেয়া কঠিন। আগেরবার দল হারের মধ্যে ছিলো। এখন কিন্তু বড় পরিবর্তন আনা সহজ নয়। হঠাৎ পরিবর্তন আনলে দলের উপর বাজে প্রভাব পড়তে পারে। তাই ভেবে চিন্তে ভালো কোচ নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছি।’

বোর্ড সভাপতির ওপরের কথা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে আসলে বিসিবি সেই মানের হাই প্রোফাইল কোচ পাচ্ছে না। অনেককেই অফার করা হয়েছে। বিপিএলে কোচিং করাতে আসা টম মুডি, কুমার সাঙ্গাকারা আর মাহেলা জয়াবর্ধনে- তিনজকেই প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ রাজি হননি। কারণ তারা নানা ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে যুক্ত। বছরে গড়পড়তা বাংলাদেশকে কোচিং করিয়ে যা পাবেন , তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ মিলে আইপিএল, বিগ ব্যাশ ও অন্যান্য জায়গায় কোচিং করিয়ে।

Advertisement

এর বাইরে পাইবাস আর ফিল সিমন্স মিশনও নেতিবাচক। তাই বাধ্য হয়ে গ্যারি কারস্টেনের দিকে ছোটা। এবং সেটা হেড কোচ ফর্মুলা থেকে সড়ে, তাকে ডাইরেক্টর অফ কোচিং হিসেবে ধরেই। কারণ কারস্টেন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তার পক্ষে প্রথাগত কোচিং করানো সম্ভব নয়। তার সে সময় নেই। অন্য জায়গায় কাজ কর্ম আছে।

ওই সব কাজ ছেড়ে সারা বছর বাংলাদেশ জাতীয় দলকে নিয়ে কাজ করা কারস্টেনের পক্ষে সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং তাকে ডাইরেক্টর অফ কোচিং পদে নিয়োগ দিয়ে ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে তিনজন অভিজ্ঞ ও হাই প্রোফাইল স্পেশালিস্ট কোচ রাখা হলে তার পক্ষে কাজ করা সম্ভব।

শেষ পর্যন্ত হয়ত কারস্টেনের এই প্রস্তাব মেনেই তাকে নিতে আগ্রহী বিসিবি। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কথায় তেমন ইঙ্গিতই মিললো।

ভেতরের খবর, বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের পছন্দ ছিলেন রিচার্ড পাইবাস। এ ইংলিশ কোচের মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার প্রতি বোর্ডের আস্থা ছিল। তিনি যে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন, তাও নাকি বেশ মনে ধরেছিল বোর্ড শীর্ষ কর্তাদের। এমনকি ক্রিকেটারদের আধুনিক কলা কৌশল শেখানোর পাশাপাশি কঠোর অনুশাসনে রাখা এবং তাদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার পর্যাপ্ত ক্ষমতা আছে জেনেও খুশি হয়েছিল বিসিবির নীতি নির্ধারক মহল।

তারপরও বোর্ডকে পাইবাসকে কোচ না করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কারণ এক ও অভিন্ন, সিনিয়র ক্রিকেটারদের চরম অপছন্দ। ভেতরের খবর, মাশরাফি-সাকিব-মুশফিকসহ সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই পাইবাসকে কোচ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপনকে।

এআরবি/এমএমআর/এমএস