শিক্ষা

জেএসসি পরীক্ষায় আধাঘণ্টা আগে কেন্দ্রে আসা বাধ্যতামূলক

আসন্ন অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসিতে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টা (৩০ মিনিট) আগে পরীক্ষার হলে (কেন্দ্রে) প্রবেশ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।

Advertisement

মঙ্গলবার সচিবালয়ে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচক পরিবেশে সম্পন্নের জন্য গঠিত মনিটরিং এবং আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ তথ্য জানান।

পরীক্ষার আগের মুহূর্তে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আগামীতে অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষায় এ ব্যবস্থা চালু করা হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

আগামী ১ নভেম্বর থেকে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।

Advertisement

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্ট্রংলি বলছি আধ ঘণ্টা আগে (পরীক্ষার হলে) পৌঁছাতে হবে। না হলে (পরীক্ষা কেন্দ্রে) ঢুকতে দেয়া হবে না এটা যদি বলে ফেলি, তবে আমরা আর ফিরতে পারব না। যেহেতু প্রথম বার, ছয় মাস আগে যদি বলতে পারতাম। তাই আমরা বলছি (আধ ঘণ্টা আগে ঢুকতে না পারলে) ঢুকতে দেওয়া হবে কিনা সেটা বিবেচনা করা হবে।’

‘আমার বলি (আধ ঘণ্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে) অবশ্যই ঢুকতে হবে। না হলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, পরে বোঝা যাবে। আগামী বছর থেকে আমরা ৬ মাস বা ৩ মাস আগে থেকে প্রচার শুরু করব। আধ ঘণ্টা আগে না ঢুকলে (পরীক্ষা কেন্দ্রে) ঢুকতে পারবে না।’

এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘নেক্সট থেকে আমরা যথন পাবলিক পরীক্ষার রুটিন করব তখন আমরা এটা (আধ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশ) বলে দেব।’

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘(পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে) আবশ্যই আসতে হবে, তারপর কি হবে তা পরে দেখা যাবে। অবশ্যই আসতে হবে, ওই যে একটু আমরা হাতে (না আসতে পারলে বিশেষ বিবেচনায় প্রবেশ) রাখলাম।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা হবে। আমরা আগেই বলে দেব আধ ঘণ্টা আগেই পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে হবে।’

সভায় কেউ কেউ পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধের প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কোচিং সেন্টারের একটি বড় বাণিজ্যের কারণ হল যেখান থেকে প্রশ্ন আউট হয় তা সঠিক প্রমাণিত হলে সেখানে ব্যবসাটা পরের বছর ভাল হয়।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের যে আইন (শিক্ষা আইন) হচ্ছে তাতে কোচিং সেন্টারই থাকবে না। পরীক্ষা কী, আর অপরীক্ষা কী, কোনো সময়ই কোচিং সেন্টার থাকবে না। সেটা আমরা পাস করতে পারলে...এখন তো বন্ধ করলে কোর্টে গেলে পেয়ে যায়।’

‘আমরা এবার বলে দেব পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেবল মাত্র কেন্দ্র সচিব একটি সাধারণ (ক্যামেরা) ফোন সঙ্গে রাখতে পারবেন। এছাড়া পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা শিক্ষক কোনো ফোন সঙ্গে রাখতে পারবেন না’ বলেন নাহিদ।

সভায় ঢাকা মহানগর (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এক বছরে নয়টি মামলায় ৫৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছে, এরমধ্যে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের লোকজন রয়েছেন। এরমধ্যে এইচএসসিতে ১৮ জন ও এসএসসিতে ৩৫ জন। বাকিরা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় গ্রেফতার হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘এসব মামলার কোনোটারই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। শিগগিরই চার্জশিট দেওয়া হবে।’

কেন্দ্র সচিবরা ক্যামেরাবিহীন মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়টি যথাযথভাবে মানছেন না জানিয়ে নাজমুল আলম বলেন, ‘এটা যাতে কড়াকড়িভাবে মানা হয় তা দেখতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করারও প্রস্তাব দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘গত এসএসসিতে অবজেকটিভ নিয়ে যে জিনিসিটা হয়েছে, এরসঙ্গে জড়িতরা সবাই আমাদের শিক্ষক। এটা অপ্রিয় সত্য কথা।’

প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত প্রতারক চক্র সহজেই জামিনে বেরিয়ে বের হয়ে আসে জানিয়ে তিনি এ সংক্রান্ত আইনে শক্ত শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব দেন।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষার দিন সকালে কেন্দ্রসচিব ছাড়া কারো কাছেই মোবাইল থাকবে না- এটা নিশ্চিত করতে পারলেই প্রশ্ন ফাঁস হবে না। কারণ ফোনে ছবি তুলে তারা বাইরে পাঠিয়ে দেন।’

সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘(প্রশ্ন ফাঁসকারীদের) যতই ধরছি শেষ হচ্ছে না। যত কিছুই করি এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছি না এটাই হল বাস্তবতা।’

পরীক্ষাকেন্দ্র বা উপজেলা পর্যায়ে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা চলছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। শতভাত নিরাপদ হলেই এটা বাস্তবায়ন করা হবে।’

সোহরাব হোসাইন আরও বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে পরীক্ষা থেকে এমসিকিউ একেবারেই উঠিয়ে দেওয়া উচিত। আশা করছি আমরা আগামীতে সেই পথে যেতে পারব।’

সভায় কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমানসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/একে/আরআইপি/আইআই