আন্তর্জাতিক

‘নীল তিমি’ জালে কেন জড়াচ্ছে ভারত

‘ব্লু হোয়েল’ বা নীল তিমি’র জুজুর ভয় যেন কাটাতেই পারছে না ভারত। দিনকে দিন যেন আরও বেশি করে নীল তিমির জালে জড়িয়ে পড়ছে ভারতের উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীরা। ফলে এরই মধ্যে নীল তিমি চক্রে ভারতে আত্মহত্যা করেছে বেশকিছু টিনএজার।

Advertisement

এসব মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে পুলিশ নীল তিমির যোগসূত্র বা নীল তিমি সম্পর্কেই নিশ্চিত হতে পারছে না। যদিও আরও কয়েকটি দেশে আত্মহত্যার পেছনে নীল তিমির দায়কে তুলে ধরা হয়েছে।

বুধবার প্রকাশিত বিবিসির এক প্রতিবেদনে নীল তিমি আতঙ্ক ও ভারতে এর উপস্থিতির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

নীল তিমি একটি অনলাইনভিত্তিক গেম। ২০১৩ সালে প্রাণঘাতী এ খেলার উৎপত্তি হয় রাশিয়ায়। যার শেষ আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে। দিন দিন ভারতের টিনএজাররা এতে জড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ভারতে।

Advertisement

ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীল তিমি জুজুর ভয় আসলে ভাওতাবাজি। যুক্তরাজ্যের ‘নিরাপদ ইন্টারনেট সেন্টার’ বলছে, এটা রোমাঞ্চকর মিথ্যা খবরের গল্প।

কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমে এসব আত্মহত্যার সঙ্গে নীল তিমির যোগসূত্রের খবর থামছে না। বরং এ নিয়ে আরও সতর্ক বাড়ছে লোকজনের ভেতর।

বিষয়টি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এক পিটিশনের জবাবে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, সম্ভব হলে এটা বন্ধ করতে।

ইতোমধ্যে ভারতের হাইকোর্ট, রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এ নীল তিমি জুজু বন্ধের কথা বলেছে। তবে কীভাবে এটা নিষিদ্ধ করা হবে তা কেউ স্পষ্ট করতে পারেনি।

Advertisement

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার ফেসবুক, ইনস্ট্রাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও গুগলে নীল তিমি বিষয় সম্পর্তিক লিংক সরিয়ে নিতে বলেছে। কিন্তু এটা কীভাবে করা হবে তা বলা হয়নি।

এরইমধ্যে ভারতের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীল তিমির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। অভিভাবকদেরও এর প্রভাব সম্পর্কে বলা হচ্ছে।

এ সমস্যা এড়াতে ভারতের উত্তর প্রদেশ সরকার রাজ্যের স্কুলগুলোতে স্মার্টফোন আনতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এমনকি পাঞ্জাবের একটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাফ হাতার শার্ট পরে আসতে বলা হয়েছে, যাতে নীল তিমির কোনো ট্যাটু আঁকা রয়েছে কিনা তা বোঝা যায়।

নীল তিমি কী

নীল তিমি একটি পর্যায়ভিত্তিক অনলাইন গেম। ২০১৩ সালে রাশিয়াতে এর উদ্ভব। তবে এটি আলোচনায় আসে ২০১৬ সালে।

গেমসটি একটি অনলাইন গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। এডমিন নীল তিমি খেলায় অংশগ্রহণকারীদের ৫০ দিনের জন্য ৫০টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ দেয়। অংশগ্রহণকারীরা সেসব কাজ শেষে করে প্রমাণ হিসেবে তার ছবি বা ভিডিও নিজের সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। নীল তিমি গেমের শেষ ধাপ অর্থাৎ ৫০তম ধাপ হলো আত্মহত্যা করা! আত্মহত্যা করতে পারলেই খেলোয়াড় চূড়ান্ত বিজয়! তবে এর শর্ত হলো খেলা একবার শুরু করলে বন্ধ করা যাবে না। করলে তাকে নানাভাবে অনবরত মৃত্যুভয় দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।

নীল তিমি নাম কেন

এ ভয়ঙ্কর খেলার নাম নীল তিমি হওয়ার কারণও চমকপ্রদ। নীল তিমির অনেক বৈষিষ্ট্যের অন্যতম, জীবনচক্রের এক পর্যায়ে নীল তিমি সমুদ্র তীরে চলে আসে। এ সময় নানাভাবে তাদের সাগরে ফেরত পাঠালেও ফের তীরের দিকেই আসতে থাকে। তীরে পানিহীন অবস্থায় ধীরে ধীরে নিজের মৃত্যুই যেন তার কাম্য। তেমনি এই গেমেও ধাপে ধাপে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া হয়।

২০১৬ সালে রাশিয়ায় এ গেমে অংশ নেওয়া ১৬ জন কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনাটি গণমাধ্যমে উঠে এলে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি হয়।

এরইমধ্যে রাশিয়া ও ভারত ছাড়াও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চীন, পাকিস্তান, ইতালিসহ আরও কয়েকটি দেশে টিনএজারদের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে নীল তিমি।

এসআর/আরআইপি