কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এবারও নিজ ভাষার পাঠ্যপুস্তক পাচ্ছে না সাঁওতাল শিক্ষার্থীরা। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের চাহিদাপত্র না দেয়ায় তারা মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
সূত্র জানায়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের নিজ ভাষায় উজ্জীবিত রাখতে ছয়টি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর প্রথমবারের মতো চাকমা, মারমা, গারো, সাদ্রী ও ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠীর ২৪ হাজার ৬৬১ শিক্ষার্থীর মাঝে নিজ ভাষার ৫১ হাজার ৭৭২টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। এবার সাঁওতাল শিশুদের পাঠ্যপুস্তক দেয়ার কথা থকালেও শেষ পর্যন্ত তা আর হচ্ছে না।
এদিকে, প্রথম শ্রেণির বই তৈরির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে কোনো নির্দেশনা বা চাহিদাপত্র দেয়া হয়নি। এ কারণে প্রাক-প্রাথমিক থেকে এবার যেসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে তাদের নিজ ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দিতে এখনও প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। অথচ পাঠ্যপুস্তক উৎসব আয়োজনে সময় রয়েছে আর মাত্র তিন মাস।
এ বিষয়ে অধিদফতরের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক আব্দুর রউফ জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের বই মুদ্রণের জন্য এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
Advertisement
সাঁওতাল ভাষায় বই দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, লিখনি পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে সাঁওতাল নৃ-গোষ্ঠীর দুই গ্রুপের মধ্যে এখনও মতৈক্য হয়নি। তাই এ বছর সাঁওতাল শিক্ষার্থীদের বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি।
সাঁওতালরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছালে এ বিষয়ে মন্ত্রী নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাথমিক স্তরের শিশুদের নিজ ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণিতে শতভাগ, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৭৫, তৃতীয় শ্রেণিতে ৫০, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৫ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা ভাষায় পাঠ্যবই দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
শিক্ষানীতির ১৮ অনুচ্ছেদে আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যে, জাতিগত গোষ্ঠী থেকে শিক্ষকদের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ এবং তাদের নিজস্ব ভাষায় পাঠ্যপুস্তক পড়াতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যাতে জাতিগত শিশুরা তাদের নিজস্ব ভাষা শিখতে পারে। এ উদ্যোগে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর অন্তর্ভুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে নিশ্চিত করা হয়েছে।
Advertisement
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, যদি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোকে বই দেয়া না হয়, সেটি হবে জাতীয় শিক্ষানীতি ও সংবিধান পরিপন্থী কাজ। তাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে তা জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জাগো নিউজকে বলেন, প্রাক-প্রাথমিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় বই দিয়েছি। এ বছর প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণিতে তাদের নিজ ভাষায় বই দেয়ার কাজ চলছে। তবে সময় মতো চাহিদাপত্র না পাওয়ায় প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইয়ের কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
‘পাঠ্যবই লিখতে লেখক পাওয়া যাচ্ছিল না। কিছু ভাষার লেখক পেয়েছি, তারা সে ভাষায় কথা বলতে পারেন কিন্তু লিখতে পারেন না। এমনকী লিপিতেও (বর্ণমালা) সমস্যা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বই লেখা হয়েছে। বইয়ের ডামিও হয়ে গেছে। বইয়ের সংখ্যা অল্প। তাই দ্রুত ছাপিয়ে সরবরাহ করতে সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি।
সাঁওতাল নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের বই ছাপা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লিখনি পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় এ বছরও তাদের নিজ ভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এমএইচএম/এএইচ/এমএআর/এমএস